পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8 প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড - ( > ) পাদ্রীদের সঙ্গে ঝগড়া করিয়া সহরের হিন্দু অভিভাবকেরা একটা স্কুল খুলেন এবং আমি সেখঘাট স্কুল ছাড়িয়া এই স্কুলে যাইয়া ভৰ্ত্তি হই, একথা কহিয়াছি। এই স্কুল সহরের উত্তর প্রাস্তে একটা ছোট টীলার উপরে একটা বাংলাতে বসে। কিছুদিন পূৰ্ব্বেও সেই বাংলাটা ছিল । এখন বোধ হয় সেই টালায় ঐ বাংলার ভিটাতেই ডাক্তার সাহেব বা সিভিল সার্জন বাস করেন । এই স্কুলটা বোধ হয় কম বেশী বছরখানেক ছিল। এই স্কুলের সঙ্গে আমার বাল্য জীবনের একটা বিশেষ ঘটনার স্মৃতি জড়িত আছে। এই সময়ে শ্রীহট্টে সোড-লেমনেডের একটা কল যায়। ছোট সহর, গৃহস্থ ভদ্রলোকের বাস, এখানে সোড-লেমনেডের কাটুতি হুইবার সম্ভাবনা বেশী ছিল না। তবে ইহার কিছুদিন পূৰ্ব্ব হইতেই প্ৰহাট চা-বাগান খোলা হয়। চীনের বহু দিন হইতেই চা পান করিয়া আসিতেছিল। চীন হইতে ইউরোপীয়ের চা পান শিথিয়া নিজেদের দেশে চায়ের পাতা আমদানী করিতে আরম্ভ করেন। এরূপ গল্প আছে যে, প্রথম যখন বিলাতে চা আমদানি হয় তখন কোন কোন ইংরেজ-গৃহিণী চায়ের পাতা সিদ্ধ করিয়া জলট ফেলিয়া দিয়া পাতাগুলিই রোষ্ট মাংসের উপরে ছড়াইয়া দিতেন। ক্রমে কি করিয়া চা পান করিতে হয় ইহার বহুল প্রচার হইলে চায়ের যাবসার স্বত্রপাত হয় । এই সময়েই প্রথমে আসামের জঙ্গলে চায়ের গাছ আবিষ্কৃত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই চা বাগানেরও স্বষ্টি হইতে আরম্ভ হয়। আমার শৈশবে কাছারে এবং শ্ৰীহট্ট সহরের আশে পাশে অনেকগুলি চা বাগান হয়। এসকল বাগানের মালিক ও মেনেজার সাহেব ছিলেন । এই উপলক্ষে ঐহট্টের উপকণ্ঠে কতকগুলি সাহেব যাইয়া বাস করিতে আরম্ভ করেন। ইহাদের প্রয়োজনেই শ্ৰীহট্টের কোন ব্যবসায়ী অামাদের ক্ষুদ্র সহরেও একটা সোডলেমনেডের কল লইয়া যান। কল মাত্রই লোকের মনে কৌতুহলের উদ্রেক করে । আমরা, বালকের দল, কি করিয়া কলে সোড-লেমনেড প্রস্তুত হয় ইহা দেখিবার জন্ত অনেক সময় এই দোকানের দরজায় যাইয়া ভীড় করিতাম। ক্রমে দু একজন এক-একটা সোড-লেমনেড । কিনিতেও আরম্ভ করেন। বোধ হয় ইহাতেই কলওয়ালার চোখ খুলিয়া যায়। সহরের ও সহরতলীর দশ পনর জন ইংরেজ ছাড়াও যে সোড-লেমনেডের খরিদ্ধার জুটিতে পারে ইহা বুঝিয়া সে আমাদের স্কুলে প্রতিদিন ঝুড়ী ভরিয়া সোড ও লেমনেড পাঠাইতে আরম্ভ করিল। বন্দুকের মত শব্দ করিয়া ছিপিগুলি উড়িয়া যায় আর সঙ্গে সঙ্গে বোতলের জল উথলিয় উঠে, ইহা দেখিবার জন্য ছেলেরা চারিদিকে ভীড় করিয়া দাড়াইত । আর অনেকেই লেমনেড কিনিয়া থাইতেও আরম্ভ করে । মুসলমানের ছোয় জল খাওয়াতে জাত যায় একথা কাহারই মনে উঠে নাই । কাহারও কাহারও মনে উঠিলেও জাত রক্ষার জন্য তাহার লেমনেডের লোভ ছাড়িতে রাজী ছিল না । স্বতরাং প্রতিদিন এই নূতন হিন্দু স্কুলের বালকদিগের মধ্যে বিস্তর সোড-লেমনেড বিক্ৰী হইতে আরম্ভ হইল । অভিভাবকেরা ইহার খোজও পাইলেন না, সন্ধানও করিলেন না। অজ্ঞাতসারে হিন্দুর জাতের মূল নষ্ট হইতে আরম্ভ করিল। অভিভাবকেরা খবর পাইলে কি করিতেন তাহা বলা যায় না । ( 5 - ) এই সময়ে, অথবা ইহার অল্পদিন পূৰ্ব্বে, বিস্কুট খাওয়৷ লইয়া নিকটবর্তী কাছারের হিন্দু সমাজে একটা তুমুল ঝড় উঠিয়াছিল । শ্রীহট্ট হইতে কাছার বোধ হয় সত্তর পচাত্তর মাইল দূরে । কিন্তু চলাচলের তেমন স্ববিধা না থাকিলেও সৰ্ব্বদাই লোক দুই সহরের মধ্যে যাতায়াত করিত। কাছারের প্রায় সকল চাকুরিয়ারাই শ্রীহট্টের লোক ছিলেন। চায়ের ব্যবসা আরম্ভ হইলে শ্রীহট্টের লোকেরাই কাছারে যাইয়া চা-বাগানের কেরাণী হন ।" এইজন্য দেশের ব্যবধান থাকিলেও শ্রীহট্টের ও কাছারের সমাজের মধ্যে অতিশয় ঘনিষ্ঠত ছিল। কাছারের নূতন ইংরেজীনবিশের যখন নিজেদের সখের বৈঠকে চায়ের সঙ্গে প্রথমে বিলাতী বিস্কুট খাইলেন, তখন সে-কথা কাছারেও চাপা রহিল না, শ্রীহট্টেও রাষ্ট্র হইতে দেরী হইল না । উভয় সমাজই এই অভাবনীয় অনাচারের উপরে খড়গহস্ত হইয়া উঠিল। অনাচারী বিদ্রোহীরা