পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] পরভৃতিক ২৭ লাগানো একটি বড় আলমারী । স্থখানি ইজিচেয়ার ছুটি জানলার পাশে, ঘরের মাঝখানে কারুকার্ষ্যে ভরা একটি জয়পুরী পিতলের টেবল ও গুটিদুই ছোট চেয়ার। তাহার উপর কোন এক ব্যক্তির প্রাতরাশের অধিকাংশই এখনও পড়িয়া রহিয়াছে । ডৰানী যুবতীর কাছে আসিয়া দাড়াইয়া বলিল, “কি ভাস্ক, কেন ডাক্‌ছ ?” যুবতী বিরক্তিপূর্ণ স্বরে বলিল, “কেন ডাকৃছি, তা কি এক লাখ বার বলতে হবে ? কোনও তার কি চিঠিপত্র এল ?” ভবানী স্ত্রীলোক বটে, কিন্তু তাহার লম্বা-চওড়া চেহারা, বলিষ্ঠ গঠন ও রুক্ষ মুখ দেখিলে মনে হয় পুরুষকেই কেহ স্ত্রীলোকের পোষাক পরাইয়া আনিয়াছে। কিন্তু ভান্থমতীর কথায় তাহার মুখেও একটুখানি বিষাদের ছায়া পড়িয়া ক্ষণকালের মত মুখখানাকে একটু কোমল করিয়া তুলিল। সে বলিল,“কই, এসেছে ব’লে ত শুনিনি। আচ্ছ, তুমি ওঠ, মুখ হাত ধুয়ে, কাপড়-চোপড়গুলো ছাড় । কিছু ত খাওনি দেখছি, যেমন যা রেখে গিয়েছি, তেমনই প’ড়ে আছে । ওমা, দুধটা শুদ্ধ খাওনি ? গরম ক’রে এনে দেব ? নিজের শরীর বোঝ না বাছ, যা খুসি তাই কর। এমন করলে চলে কখনও নাও, ওঁঠ, মুখ ধোও, আমি কাপড় নিয়ে আসি। কাতিকে ডেকে দিচ্ছি, দ্বধটা গরম করে আহক।” ভানুমতী একেবারে রাগের আতিশয্যে কাদিয়াই ফেলিল। অশ্রুদ্ধকণ্ঠে বলিল, “তুই বেরো ঘর থেকে, পোড়ারমুখি ! আমি মৰ্বছি নিজের জালায় জ’লে, উনি এসেছেন এখন আমায় মুখ ধোয়াতে, দুধ খাওয়াতে ! যা তুই ।” ডবানীও একটু রাগিয়া বলিল, “তা ত বটেই, দাসীবাদী মানুষ আমরা, ভাল কথা বললেও মন্ম হয়। শাশুড়ী কি বড় ননদ থাকুলে কেমন কথা শুনতে না ভাই দেখতাম। এই শরীর, এখন জযত্ন করা চলে কখনও ? আর এমন ক’রে দিনরাত না খেয়ে, না দেয়ে যে কারাকাটি করছ,এতে স্বামীর অকল্যাণ হয় না! ওঠ, লক্ষ্মী দিদি আমার, মুখ হাত ধোও, আমি বাইরে দরোয়ানের কাছে গিয়ে আবার খোজ নিয়ে আসছি।” ভানুমতী উঠিবার কোনও লক্ষণ না দেখাইয়া বলিল, “তুই যা আগে খোজ নিয়ে আয়, তারপর আমি উঠ ব।” তাহার দুই গাল বাহিয়া টপ টপ করিয়৷ জল গড়াইতে লাগিল । ডবানী অগত্যা বাহির হইয়। চলিল। যাইতে যাইতে বলিল, “বল্লিহারী যাই জামাইয়ের আক্কেলকে ! এ দিকে ত এত অাদরের ঘট, বউ যেন মাথার মণি । আর এই ষে আট দিন বাড়ী ছাড়া হয়েছিল, মেয়েটাকে একটা খবর দিতে নেই গা ? ছি, ছি, ছি ! একেবারে শরীর পাত করতে বসেছে সে। বুড়ে বাপ প’ড়ে অস্বথে ধু কৃছে, তার কথাও কি একবার ভাবতে নেই ?” “কি ভবানী, জ্ঞানদার কোনও খবর-টবর এলে ?” বলিতে বলিতে ইংরেজী পোষাকপর এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক তাহার সম্মুখে আসিয়া দাড়াইলেন ।

  • কই আর এল, ডাক্তার-বাৰু ? আবার চলেছি দেউড়ীতে, দুরোয়ানের কাছে খবর নিতে।”

ডাক্তার নিজের মাথার চুলে হাত বুলাইতে-বুলাইতে বলিলেন, “তাইত, মহা মুস্কিল দেখছি । ছেলেটা বড় নিৰ্ব্বোধের কাজ করছে। প্রমদা-বাবুর এই অবস্থা, তার ' উপর এমন ক’রে ভাবাচ্ছে। এর পর বুড়োকে টিকিয়ে রাখা শক্ত হ’বে ।” & ভবানী মুখ নাড়িয়া বলিল,"আর ভামুর কথাও একবার ভেবে দেখুন দিখি । তাকে ন পারছি নাওয়াতে, ন৷ পারছি খাওয়াতে, খালি বসে চোখের জল ফেলছে। এমন করলে মানষের শরীর টেকে ?” “আচ্ছা, বিপদেই পড়া গেল দেখছি,*বলিতে বলিতে ডাক্তার কৰ্ত্ত প্রমদারঞ্জনের শয়নকক্ষের দিকে চলিয়া গেলেন । প্রমদারঞ্জন পশ্চিমবঙ্গের একজন ধনবান জমিদার। তাহাদের বংশমর্ধ্যাদা ও ধনের খ্যাতি আজ পর্য্যস্ত কালের প্রভাব এড়াইয়। অনেকটাই টিকিয় আছে। এক কালে ধাৰ্ম্মিক পরিবার বলিয়াও তাছাদের নাম-ডাক ছিল। কিন্তু প্রমদারঞ্জন যৌবনে লুকাইয়া মদমাংস খাইয়া, ও