পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԵ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৬৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড আহুষঙ্গিক নানা অনাচার করিয়া সে-থ্যাতি অনেকটাই দূর করতে সক্ষম হষ্টয়াছেন । পুত্র জ্ঞানদারঞ্জনের ওসকল উপসর্গ না থাকিলেও, তাহার উগ্র সাহেবীয়ানাকে সকলেই হিন্দুর ছেলের পক্ষে ঘোরতর অনাচার বলিয়া গণ্য করে । সে মদ না খাইলেও মাংস ও চুরুটের প্রতি ভক্তি তাহার অসাধারণ। পারতপক্ষে ধুতি সে পরে না, এবং স্ত্রী ভানুমতীর পায়ে চটি জুতার অভাব দেখিলে, তাহার সঙ্গে মহা ঝগড়া লাগাইয়া দেয়। ভানুমতী হিন্দু ঘরের মেয়ে হইলেও, স্বামীর পাল্লায় পড়িয়া নব্য ধরণে কাপড় পরিতে ও চুল র্বাধিতে, জুতা মোজা পরিতে, এবং চলনসই রকম ইংরেজী বলিতে বেশ অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে। প্রথম প্রথম ইহাতে বাড়ীতে ঘোরতর আপত্তি উঠিয়াছিল, এমন-কি প্রমদারঞ্জনের বিধবা ভগিনী ত চজায় ঘৃণায় আকুল হইয়া কাশীই চলিয়া যাইতে চাহিলেন । কোনো রকমে বুঝাইয়া পড়াইয় তাহাকে দেশের বাড়ীতে পাঠাইয়া দেওয়া হইল । সেখানে রাধাগোবিন্দজীর পূঙ্গর তদারক করিয়া আশ্রিত আত্মীয়া ও অনাত্মীয়াদের উপর প্রভুত্ব করিয়া এবং পর চর্চা করিয়া তাহার দিন একরকম ভালই কাটিতেছে । এ দিকে পিসিমার সমস্তদিনব্যাপী আৰ্ত্তনাদ ও তিরস্কারের হাত হইতে নিষ্কৃতি পাইয়। জ্ঞানদারঞ্জন এবং ভাচুমতীও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়া বাচিল । প্রমদারঞ্জনের বিশেব কিছু লাভ বা লোকসান হইল না। বাৰ্দ্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে অস্বস্বতা আসিয়া পড়াতে বাধ্য হইয়াই তাহাকে অধিকাংশ অনাচার ছাড়িতে হইয়াছিল, কাজেই ভগিনী কাছে থাকিলেও তাহার কোনো আপত্তি ছিল না। তবে একদিকে পুত্রের অবিশ্রাস্ত নালিশ ও অন্যদিকে ভগিনীর অবিশ্রান্ত বিলাপের হাত হইতে মুক্তি পাইয় তাহারও একটু আরাম বোধ যে না হইল তাহা নহে। জ্ঞানদারঞ্জন কয়েক দিন হইল এক বন্ধুর বিবাহ উপলক্ষে স্থানান্তরে গিয়াছে। আমোদ-প্রমোদে চিরকাষ্টই তার অত্যন্ত রুচি, ডাহার স্রোতে ডুবিয়াই বোধহয় সে-বাড়ীতে একটা খবরও দেয় নাই। এ দিকে বৃদ্ধ পিতা ও যুবতী পত্নী ত ভাবনায় চিন্তায় পাগল হইয়া যাইতে বসিয়াছে। ফিরিবার সময় জ্ঞানদার। সকলে জল

  • * *

পথে ফিরিতেও পারে এমন একটা কথা ছিল, তাহারই জন্য ভানুমতীর ভাবনা হইয়াছে অধিক । ভানুমতী সম্পন্ন গৃহস্থের মেয়ে হইলেও ধনে মানে তাহার শ্বণ্ডয় ও পিতৃকুলে অনেকটাই তফাৎ ছিল । রূপের জোরেই সে প্রমদারঞ্জনের একমাত্র সস্তানের স্বর আলো করিতে আসিয়াছিল। প্রমদারঞ্জনের পত্নীর গুণের অভাব না থাকিলেও রূপের অভাব যথেষ্টই ছিল, এবং তাহার জন্ত তাহার নিজের মনে খেদের সীমা ছিল না । পুত্রের ধাহাতে এই ভোগ ভুগিতে না হয়, তাহার জন্ত তিনি অনেক দেখিয়া-শুনিয়া বেী আনিয়াছিলেন। বাংলাদেশ খুজিয়া মনের মত পাত্ৰী মিলিল না বলিয়া উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজপুতানা প্রভৃতি স্থানেও চর পাঠাইয়াছিলেন । ভানুমতীর পিতা রাজপুতানায় স্ত্রীপুত্ৰ লইয়৷ বহুকাল যাবৎ বাস করিতেছিলেন। মেয়ের বিবাহ কি প্রকারে হইবে, এ ভাবনা তাহাদের নিতান্ত কম ছিল না। ধনে, মানে, কুলে, শীলে এমন অপ্রত্যাশিত রকম পাঞ্জের সন্ধান পাইয় তাহার। ত আকাশের চাদ হাতে পাইলেন। বিবাহ স্থির হইতে, এবং হইয়া যাইতে কিছুমাত্র বিলম্ব হইল না । ভানুমতী একরকম চিরকালের মতই পিতৃগৃহ ছাড়িয়া আসিল । সঙ্গে আসল তাহার রাজপুত দাসী ভবানী । - ভবানী জাতিতে রাজপুত হইলেও বাঙ্গালীর সংসারে • বহুকাল কাজ করার দরুন, বাঙ্গালীরই মত বাংলা কথা বলিতে পারিত। তবে তাহার ধরণধারণ একটু কাঠখোট্ট গোছের থাকিয়া গিয়াছিল । তাই বাড়ীর সকলে তাহাকে “রণচণ্ডী, মদ্ধ ভগবতী” বলিয়া ক্ষেপাইত । ভানুমতী নিজেও ঠিক বাঙ্গালী মেন্থের মত নম্র বা লাজুক ছিল না, কিন্তু এই কারণেই জ্ঞানদারঞ্জনের তাহাকে বিশেষ রকম ভাল লাগিয়া গেল । বাবা তাহার জঙ্ক একটি ছিচ কঁাদুনে গোমুখ খুকী ধরিয়া জানিবেন এই ভয়ট তাহার অত্যন্তই ছিল, এখন ভানুমতীকে পাইয়। সে বাচিয়া গেল। স্ত্রীর ভিতর আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষার যা অভাব ছিল, প্রাণপণ চেষ্টায় সে তাহা দূর করিতে প্রবৃত্ত হইল। বাড়ী হইতে যেটুকু বাধা পাইল, তাহার বিরুদ্ধেও