পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] দুই বার রাজা ©ፃፃ সঙ্গে একটি দিনের জন্যেও প্রীতি-বিনিময় হয়েছিল তাকে পৰ্য্যস্ত নিমন্ত্রণ করলে। টাইম-অনুসারে একটা ঠিক গাড়ি ভাড় ক’রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণ করতে কি স্বথ ! রাজা | কেন নয়? সবাইর চেয়ে উচু জায়গায় আসন, লামিয়ান খাটানে, তাতে তিনটে ঝাড়-লণ্ঠন ঝুলছে, ফুলদানিতে বিস্তর ফুল, গলায় প্রকাগু মালা, গায়ে সিদ্ধের দামী জাম, জীবনে এই প্রথম পরেছে, পায়ে চৌদ্ধ টাকা দামের জুতে,-দু-মাস টিউশানি ক’রে যা জোটেনি। ছেলেরা চেচামিচি কবৃছে, মেয়ের প্রজাপতির মতে। উড়ছে ও বর্ষার জলধারার মতে কলরব করছে। বন্ধুর এসে ঠাট্ট ইয়ার্কি ক’রে যাচ্ছে। চিকের পেছনে বর্ষীয়সী মেয়েদের ভিড় লেগে গেছে,—উলু দিয়ে দিয়ে গলা ভেঙে ফেলছে। উলু দিতে গিয়ে কণ্ঠস্বরটা বিকৃত হয়ে গেল দেখে একটি মেয়ের স্রোতের মতো কি স্বচ্ছ হাসি । এ বাড়ীতে আঞ্জ যেখানে যা হচ্ছে সবই ত অমরের জন্য। খাবার নিয়ে আগু কুঁড়েতে কুকুরগুলি যে লড়াই বাধিয়েছে, তাও। যা কিছু বাজনা, যা কিছু হাসি, যা কিছু কোলাহল ! - ঐ যে নিভৃতে দাড়িয়ে একটি কিশোরী ওর দুটি হাত তুলে ওর চুলের খোপাট ঠিক ক'রে গুছিয়ে নিচ্ছে, চুলের কঁাটাগুলি ফের ভাঙ্গো ক’রে ওঁজে দিচ্ছে,—সেও ত তারই জন্ত --অমর ভাব ছিল। নইলে আজ রাত্রে মেয়েটি কখনো এই নীল শাড়ীটি পৰ্বত ন, মাথায় কখনো গু জত না ঐ শ্বেতপদ্মের কুঁড়ি । শুভদৃষ্টির সময় সবাই বললে বটে, কিন্তু অমর ঘাড় গুজে রইল, মুখ তুলে চাইল না। পাছে ভূল ভেঙে যায় ! খালি একটি কথাই মনে পড়ছিল তখন। লুলী জিজ্ঞাসা করেছিল—কি নাম আপনার বউয়ের । অমর বলেছিল-অকুপমা । লুলী খপ ক’রে ব’লে ফেলেছিল-ওমা ! আমারে ভালো নাম যে তাই। ব'লেই রাঙা হয়ে উঠে মুচকে হেসেছিল একটু । ؤ « -ـــء 8br; পাছে তেমনি রাঙা হয়ে উঠতে না পারে। পাছে— অনুপমা নিজে কুৎসিত হ’লেও আশা করেছিল ছবির পাতায় রাজপুত্রের যে ছবি দেখেছিল,—পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়া না হ’লেও তেমনিই স্বকান্ত হবে তার প্রিয়তম! ভাবলে—ক’ড়ে আঙুল দিয়ে কপালে এক টোক মারলেই ঘাড়গুজে প’ড়ে যাবে বুঝি । তবুও ত স্বামী। ডাক্তার এসে আর দড়ি দিয়ে কপাল বেঁধে দেয় না, সারারাত্রি অনুপমাই কপাল টিপে দেয়। কখনো অনাবশ্যক বল প্রয়োগ ক'রে বসে। রাগ ক’রেই হয়ত । অমর সব চেয়ে ঘৃণা করুত নিজের এই কদৰ্ঘ্য ব্যাধিটাকে। আর ঘূণা করে, যে মুখটা তার সত্যিই বত্ৰিশটা দাত আছে কিনা অন্যকে গুণে দেখবার জন্য সৰ্ব্বদাই মেলে রয়েছে,—সেই মুগ্ধটাকে । অনুপম নাম বদলে নাম রেখেছে তিলোত্তম | মা কেঁদেছিলেন বটে একটু, এক ফঁাকে এক এক ক’রে নোটগুলি গুণেও নিয়েছিলেন বার চারেক । হঠাৎ একদিন কয়েকখানি আঁচলের খুঁটে বেঁধে কাশী চ'লে গেলেন। ব’লে গেলেন—বউ ত হয়েছে। রোধেও দেবে, বুকে মালিশও করবে। আমি দিন কতক ধৰ্ম্ম ক’রে আসি, জিরিয়েও আসি । খামাপদবাবু এসে মেয়ে নিয়ে ধেতে চাইলেন। অমর আপত্তি করলে না। বললে—এ ক'দিন না হয় কোনো একটা মেসেই থাকুব । কারে হত বুলিয়ে না দিলেও চলবে। তবে শিগগিরই যেন আসে। বাড়ী ফিরে এসে শ্যামাপদবাবু মনে মনে বলছিলেন —এবার মর, মর, বিধবা হ-বাবা, কাটাটাত খসেছে গল থেকে ! বন্ধুদের বল্পেন—দুমণ বস্তাও পিঠে ক’রে বওয়া যায়–কিন্তু এই কুৎসিত মেয়েটা কি হায়রানি ক’রেই মেরেছিল । তবু যদি– তারপরের ব্যাপারটা একটু আকস্মিক বটে, কিন্তু অস্বাভাবিক নয়।