পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిచి তাহাঁদের একজনের মাথার ছায়ায় আর একজনের বই অন্ধকার হইয়া যায়। ক্রমাগত এপাশ-ওপাশ করিয়া কোনো রকমে একটু আলো খুজিয়া পিছনের দল বই দেখে। গায়ে গায়ে বসার দরুণ প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে সমস্তক্ষণ ঠেলা-ঠেলি করে এবং সঙ্গে সঙ্গে সমস্বরে নালিশ to ছেলেমেয়েদের আসিবার সময় হইয়াছিল ; আল্লক্ষণ আগেই একটা প্রচও দম্ কা হাওয়ায় চারিদিকে ধূলাবালি খড়কুটা উড়াইয়া বৃষ্টি নামিয়াছিল। বারাণ্ডাটা জ্বলে জলময় হইয়া গিয়াছে । ছেলের কোথায় বসিবে সেই ভাবনায় সকলে ব্যস্ত । গৌরী কোমরে কাপড় জড়াইয়া একটা মস্ত ঝাটা লইয়া জলট ঝাটাইয়া উঠানে ফেলিতেছিল, চপল একখানা ছেড়া তোয়ালে দিয়া অবশিষ্ট জলটুকু মুছিয়ু তুলিতেছিল। চঞ্চলার দেখা নাই। বাহিরের দরজায় কড়া নড়িয়া উঠিল । বুড়ী ঝি নেড়া মাথায় ঘোমটা টানিয়া দরজা খুলিয়া দেখে শঙ্কর, সঞ্জয় ও অপূৰ্ব্ব । সে ফেকুল মুখে একটু সলঙ্গ হাসির রেশ টানিয়া বলিল, “দিদিমণি গো, মাষ্টারবাবুরা সব এয়েছে।” গৌরী বলিল, “ভিতরে আসতে বল।” চওড়া লালপাড় দেওয়া একটা মারাঠি চাদর গলায় জড়াইয়া অপূৰ্ব্ব সকলের আগে ঢুকিয়া নমস্কার করিয়া বলিল, “আজ বড় একটা মুস্কিলে পড়া গেছে। আপনাদের কার কি মত হ’বে জানি না, তবু জিনিষট। ব’লে রাখি । সকালে ছেলেদের শ্লেট কিনে এই পথে কেষ্টার জিম্ম করে দিতে আসছিলাম,এমন সময় এ-পাড়ার মেথরাণী আমায় গ্রেপ্তার করলে। সে বলে, ‘বাবু আপনার গরীব দুঃখীকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন ; ওয়া ত সব ভাল জাত, ওদের সবাই শেখাতে পারে ; কিন্তু আমার ছেলেটার এত বুদ্ধি ; ছোটজাত ব’লে কেউ তাকে এক অক্ষর শেখাবে না। আপনার পায়ে ধরছি বাবু, একে একটু মাচুব ক’রে দিন। এখন কি করা যায় বলুন ।” সকলের আগে চপল বলিল, "ওমা, সে মেথরের ছেলে, তাকে নিয়ে কি ক'রে চলবে ?” গৌরী কি বলিতে গিয়া থামিয়া গেল। তাহার প্রবাসী—আষাঢ়, 8ססיל [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড মনে হইল ঠিক উচিত কথাটা হয়ত সে বলিতে পারিবে નil l অপূৰ্ব্ব অগ্রসর হইয়া আসিয়া বলিল, “আপনার দেশের কাজ করতে নেমে যদি মেথর চামার বিচার করেন, তাহ’লে এদেশের আশা যে কতখানি তা বোঝাই যাচ্ছে।” সঞ্জয় বলিল, “বিচারের কথা স্বতন্ত্র কিন্তু কথা হচ্ছে যে, ঐ একটি ছেলেকে যদি ক্লাশে নি তাহলে বাকী চল্লিশটিকে ত্যাগ করতে হবে।” অপূৰ্ব্ব গম্ভীর হইয়া বলিল, “কিন্তু অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে দেশের সেবা কি প্রকৃত সেবা ?” শঙ্কর বলিল, “যারা অবুঝ অজ্ঞ, তাদের শিক্ষার পথ রুদ্ধ ক’রে দিয়ে একজন মাত্র মেথরের ছেলেকে নিয়ে কাজ করায় দেশের অপকার বই উপকার নেই। এরা যদি কিছু বুঝত তাহ’লে এদের কথা মেনে চলাটাকে আমি অন্যায় বস্তুম। এখন বলতে পারি না, কারণ ওদের সংস্কার মজাগত।” গৌরী বলিল, “কিন্তু পুথি পড়ে বুঝলেও দেশের ও মনের সংস্কার কি একদিনেই ছাড়া যায় ? এতকাল ধ’রে রক্তে যে-সব সংস্কারের বীজ জমা হয়েছে তাকে একদিনে ছেড়ে দেওয়া কি সহজ ?” সঞ্জয় মুখ তুলিয়া গেীরীর দিকে চাহিয়া বলিল, “সহজ না হ’লেও জ্ঞানীকে তা ছাড়তে হবে। বিশেষ ত: সমাজের দও যারা বিনা অপরাধে সহ করেছেন তারাই যেন আবার অপরকে বিনা দোষে দণ্ড না দেন তা দেখতে হবে।” গৌরী বলিল, “শক্তির অভাবে কোনো মাস্থ্য যদি একটু সরে দাড়ায়, তাতেও ও কি তার অপরকে দণ্ড দেওয়া হয় ?” গৌরীর মনে কেবলি চঞ্চলার কথা ঘুরিতেছিল। অপূৰ্ব্ব বলিয়া উঠিল, “নিশ্চয়! যে কাজ একের বেলা অনায়াসে করব, সে কাজ অপরকে প্রত্যাখ্যান করা মানেই তাকে বঞ্চিত করা এবং দণ্ড দেওয়া। এ ত ভীরুতার রূপান্তর মাত্র।” সঞ্জয় গৌরীকে বিব্রত দেখিয়া বলিল, “হ্যাঁ, ভীরুতা এটা হতে পারে স্বীকার করি। কিন্তু সমাজ ও সংস্কারের