পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] খাতিরে, অভ্যাসের ও স্বভাবের দোষে এইরকম সহস্ৰ ভীরুতা কি আমরা প্রত্যহ করছি না ? তাতে যদি আপাতদৃষ্টিতে কারো কোনো ক্ষতি দেখা না যায় তবে আমরা সেগুলোকে অপরাধ ব’লে গণনা করি না, কারণ হাজার হোক মাহুষ মানুষমাত্র, দেবতা নয়। তার কাছে আমরা পরিপূর্ণতা আশা করতে পারি না। তবে যদি এই ভীরুতার জন্যে কোনো মানুষকে আমরা তাঁর ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করি তাহলে সে ভীরুতাকে খুব সহজে মার্জন করা চলে না।” অপূৰ্ব্ব সঞ্চয়ের দিকে ফিরিয়া বলিল, “এই বিশুদ্ধ বক্তৃতাটা কি তোমার নিজের মনের কথা ?” গৌরী লজ্জিত হইয়া বলিল, “সঞ্জয়বাবু আমাকে নেহাৎ অসহায় দেখে একটু সাহায্য করছিলেন। ষে কাজটাকে আপনি ভীরুভ ব’লে বোঝেন সেটাকে মামুষের দুর্বলতার দোহাই দিয়ে আপনি যে অঁাকৃড়ে পড়ে থাকেন না ত৷ আমি জানি ।” সঞ্জয় কথা ঘুরাইয়া বলিল, “যাকৃ, বাঞ্জে বক্তৃতায় কোনে কাজ হবে না। কাজের কথাটা আসলে দরকার । ছেলেটার পড়ানোর কি করা যায় সেইটা ভাবতে হবে। আর সকলকে আমরা ছাড়তে পারব না, কিন্তু ওরও একটা ব্যবস্থা কর চাই ।” শঙ্কর বলিল, “খুব সহজ একটা ব্যবস্থা হচ্ছে —ওকে একলা আলাদা পড়ানো । তাতে অবিপ্তি সময় ধাবে i* অপূৰ্ব্ব বলিল, “রোজ আবার অতটা সময় কে ‘স্পেয়ার' করতে পারবে ?” শঙ্কর হাসিয়া বলিল, “ও, ভারি ত সময় । কুড়িমিনিটে ওর প্রচুর পড়া হয়ে যাবে। গৌরী, তুই নে না ছেলেটাকে। খুব ত নিষ্ঠাবতী আছিল, দেখি সত্যি একটা কাজে তোর কতখানি সাহস ” গৌরী লাল হইয়া উঠিয়া বলিল, “আমি ? বাড়ীতে সকলে শুনলে কি বলবে ?” শঙ্কর বলিল, “কে তোর বাড়ীতে বলতে যাচ্ছে ? আর প্রতি কথায় যদি অত বাড়ীকেই মেনে চলতে হয়, জীবনদোলা (5 مراتي তবে বাড়ীর লোকের অমতে এখানে না এসে বাড়ীতে থাকৃলেই ত হ’ত ” অপূৰ্ব্ব বলিল, “আমি নিতে পাবৃতাম কাজটা। কিন্তু বরাবর ত আমার এখানে প্রবেশাধিকার থাকৃবে না ।” সঞ্জয় বলিল, “আমার বাড়ী বড় দূর, নাহলে আমার ওখানে যদি রাত ন’টার পর যেতে পাবুত ত আমি পড়িয়ে দিতুম ওকে ।” বারবার তাহাকেই সব লে লজ্জায় ফেলিতেছে দেখিয়৷ গৌরী বলিল, “আচ্ছ, আমি কালকে ঠিক ক'রে বলব, তার আগে আপনার কেউ ভার নেবেন না ।” চপল বিস্ফারিতনেত্রে তাহার দিকে তা কাইয়া বলিল, "মাগো, গৌরী, এত বাছ বিচারের পর শেষে মেথর চেলা জোটালে ?” 龜 ছেলেরা আস্তে আস্তে একটি একটি করিয়া আসিয়া জুটিতে লাগিল। আজ নাম লেখাইবার পাল। ঝণঝ মল ও ডুরে শাড়ী পড়া ছোট একটি মেয়ে আসিয়া চপলার আঁচল টানিয়া বলিঙ্গ, “গুরুম, আমার নাম ফেলী লিখোনি । মা বলেছে আমার নাম মেনকা স্বন্দুরী ফাসী।” চপল বলিল, “তোর বাবার নাম কি ?” ফেল্পী বলিল,"তা জানি নি । মা ব’লে দেবে অখন ।” ছোট ছোট লাল গাম্‌ছ পরা তিনটি ছেলে আসিয়া খুব মিহি ও ভাঙা স্বরে চেচাইয়া বলিল, “আর গুরুম, আমাদের নাম বাকী, টের আর ভেংচু । ঠাকুমা বললে ওতেই হবে, আর ভাল নাম নেই।” ফরলামত একটি মেয়ে তেলকালী মাথা ছেড়া একটা সিল্কের ফ্রক পরিয়া আসিয়া বলিল, “গুরুম গো, আজকে মাসি আর মা এমন মারপিট করেছে যে বাবা তাদের ঘরে খিল দিয়ে দিয়েছে। ঘরের ভিতর খুব গালাগালি কবৃছে, তাই আমি পালিয়ে এলুম।” ছেলে মেয়েদের পড়া আরম্ভ হইলে হৈমবর্তী একবার সহস্যে সেখানে আসিয়া দাড়াইলেন। তারপর শঙ্কয়কে ডাকিয়া লইয়া চলিয়া গেলেন। হৈমবতীর ঘরে গিয়া শঙ্কর একটা ছোট গুল-চৌকির উপর বসিল । মাছুরের উপর পা ছড়াইয়া দেওয়ালে পিঠ