পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] জীবনদোলা ○* • শঙ্কর বলিল, “কিন্তু তোরই বা কি লাভ হ’ত ? মানুষকে ত্যাগ করার ছুটে কারণ থাকৃতে পারে। এক হচ্ছে তাকে কোনো অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া, আর এক হচ্ছে নিজেকে তার স্পর্শ কি সঙ্গদোষের হাত হ’তে রক্ষা করা। তুমি তাকে শাস্তি দিতে চাও না, কারণ জিনিষটা গোপনে করছ এবং তার সঙ্গকে তোমার পক্ষে ক্ষতিকর ব’লে বিশ্বাস কর না ; তবে তোমার কাজটার উদ্দেশ্য কি হতে পারে ?” গৌরী রাগিয়া বলিল, “অত শত তর্কের কথা আমি জানি না, বাপু আমার যেন কেমন লাগে।” শঙ্কর বলিল, “গৌরী, তুই সংসারে বড় হবি ব’লে তোকে নিয়ে কত বাধা ঠেলে আমি বেরিয়েছি। এমনি ক’রে কি তুই আমার শ্রম সার্থক কবি ? আমি সঞ্জয়দের মত বিশ্বের হিত করতে পারব না, কিন্তু তবু তাদের সাম্নে আমার মুখ উচু করে আমি চলতে পারি এই গৌরবে যে, আমাদের মত পরিবারের থেকে তোর মত মেয়েকে এনে আমি সকল তুচ্ছতা ও সংকীর্ণতার উপরে তুলবার আশা রাখি। সে কথা তুই ভুলে যাস নে ৷” গৌরী চুপ করিয়া গেল। শুধু শঙ্কর নয়, সেও ত অপূৰ্ব্ব সঞ্জয়ের কাছে ছোট হইতে লজ্জাবোধ করে। জন্মগত শুচিবায়ুকে সে ছাড়িতে পারিতেছে না বটে, কিন্তু ইহাদের কাছে ছোট হইয়া যাইতেও যে আত্মসম্মানে বড় বেশী ঘা লাগে। আর শঙ্কর যে তাহার শ্রেষ্ঠ বন্ধু প্রকৃত হিতার্থী, তাহাকে সে ব্যথা দেয় কি করিয়া ? শঙ্কর বলিল, “বল আর গোলমাল বাধাবি না। সেদিন সঞ্চয় বলছিল যে, চঞ্চলার মত সাহসী মেয়ে সে দেখেনি। কোনো কাজে যেন তাঁর ভয় ব’লে জিনিষ নেই। এই প্রশংসাটা তোর নামে যদি শুনতে পেতুম ত আমার অনেক দুঃখ সার্থক হ’ত।” গেীরীর কেমন একটা ঈর্ষ হইল। যে চঞ্চলাকে সে জম্প শু বলিয়া দূরে ঠেলিং দিতে চায়, সে অনায়াসে যাহ। পাইল, গৌরী এতদিনের সাধনাম ত তাহ সঞ্চয় করিতে পারিল না। নিজেকে সৰ্ব্বদা বেড়া দিয়া খিরিয়া রাখিলে কখনও সে তাহা পরিবে না। ج: لا دس- هة 8 গেীরী বলিল, “তুমি ভয় পেও না, দাদা, আমি তোমার মুখ হেঁট করব না।” ( t ) ভোর না হইতে আকাশ কালো করিয়া মেঘ নামিয়াছে । তাহার সঙ্গেই এই গ্রীষ্মের দিনে তীব্র তীক্ষু বাতাস যেন মামুষের সর্বাঙ্গে ছুচ ফুটাইতেছে। গাছপালা তাহার আঘাতে অবিশ্রাম কঁাদিয়া চলিয়াছে। দরজা-জানালা কঁাপিয়া কঁাপিয়া উঠিতেছে, মনে হয় যেন কোন পথহারা পথিকের দল এই ঘোর ভূর্য্যোগে মানুষের করুণ। ভিক্ষ করিয়া দ্বারে দ্বারে ক্রত কর হানিয়া ফিরিতেছে। সন্ধ্যা হইয়া গেল তবু প্রকৃতির এ প্রলয় খেলার শেষ নাই। বাহিরের আকাশে দৃষ্টি চলে না। ঘন মেঘের গায়ে কেবল মাঝে মাঝে দীর্ঘ স্বপারি-গাছের দীর্ঘ পাতাগুলি ঝড়ের বেগে ঠিক্রাইয়া পড়িতেছে, যেন ভীত শিশুর দল হাত বাড়াইয়া মার কোলে ঝাপাইয়া পড়িতে চাহিতেছে। পথে ছুটি একটি লোক । ঘরের আলো প্রলয়ের কালিমায় মলিন হইয়া আছে। তাহার উপর কাণে আসিতেছে একটা না একটা চাপ৷ কাতরানির শব্দ। আশ্রমের ছোট একটি মেয়ে পিছলে পড়িয়া গিয়া হাতখানা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছে। হৈমবতী সকালে বাহির হইয়া গিয়াছেন এখনও ফেরেন নাই। কোথাও বোধ হয় ঝড়ে আটক পড়িয়াছেন। অবিবাহিত তরুণ চিকিৎসক সঞ্জয়কে দিয়া হৈমবতী মেয়েদের চিকিৎসা সচরাচর করাইতেন না পাছে লোকে কিছু কুৎসা রটন করে, কিন্তু আজ এই দুৰ্য্যোগের সন্ধ্যাম আর কাহাকেও সহজে পাওয়া যাইবে না বলিয়া চাকরটা গিয়া তাহাকেই ধরিয়া আনিয়াছে। চঞ্চল ছোট মেয়েটির হাতখানা ধরিয়া যলিয়াছিল, পাছে সে টান হেঁচড়া করিয়া কিছু করিয়া বলে। সঞ্জয় আসিয়া ঘরে ঢুকিয়া দেখিল ক্রমাগত বলিয়া ৰলিয়া ক্লাস্ত হইয়া শুশ্ৰুধাকারিণী মাথাটা রোগিনীর বালিশের উপর রাখিয়া বিশ্রাম করিতেছে। মুখ দেখা যায় না। সঞ্জয় বিস্মিত হইয়া ডাকাইয়া রহিল। কে এ ? তাহার মুখ দিয়া কথা বাহির হইল ন৷