১ম সংখ্যা ] পরভৃতিক כשא কি সম্ভব হইলে তাহার সহিত কথা পৰ্য্যন্ত যেন না বলে। কিন্তু যতই উপেক্ষ-অনাদর লাভ করুক, উদয় সহজে দমিবার ছেলে নয়। ভানুমতীর সহিত আত্মীয়তা করিবার প্রবল চেষ্টা সে একদিনও ত্যাগ করে নাই । তবে ভাতুমতী অস্বস্থ থাকায় তাহার চেষ্টায় যে কিছু লাভ হইয়াছে তাহা বলা যায় না । বিরক্তিতে ভানুমতীর সর্বাঙ্গ জালা করিতে লাগিল । এ হতভাগার কি এ দিনও বাদ যাইতে নাই ? উত্তর দিবে কিনা ভাবিতেছে, এমন সময় কাতি ঝি আসিয়া ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “ছোট দাদাবাবু বাইরে দাড়িয়ে আছেন, বৌরাণীমা ; আপনার খোজ কচ্ছেন।” ভানুমতী ভ্ৰকুটি করিয়া বলিল, “বলগে যা যে র্তার শরীর বড় খারাপ, শুয়ে আছেন।” এই দাসীটি কোন অজ্ঞাত কারণে উদয়ের কিঞ্চিৎ বশীভূত ছিল। সে তখনই বিদায় না হইয়া বলিল, “কি দরকারী কথা আছে বললেন ।” ভান্থমতী মুখ ঘুরাইয়া বলিল, “তার দরকারী কথা শুনবার আমার দরকার নেই। আমি এখন উঠতে পারব না।” কাতিকে আর কষ্ট করিয়া এ খবরটা উদয়কে দিতে হইল না। সে দরজার খুব কাছেই দাড়াইয়া ছিল, ভানুমতীর কথা বেশ স্পষ্টই শুনিতে পাইল । পর্দার কাছে আসিয়া বলিল, “বেীঠাকরুণ, কথাটা আপনার জানা দরকার, তাই আপনাকে বলতে এলাম। শুধু শুধু আপনাকে রাগাবার আমার কোনো ইচ্ছা নেই।” ভানুমতী এবার আর না উঠিয়া পারিল না। মাথায় কাপড়টা একটুখানি টানিয়া দিয়া বাহিরে আসিয়া বলিল, “কি কথা বলুন ।” উদয় মুখখানাকে যথাসাধ্য কাতর করিবার চেষ্টা করিতে করিতে বলিল, “দাদার সঙ্গে আমাদের পাশের বাড়ীর অমরও বোসদের বাড়ী নিমন্ত্রণে গিয়েছিল, আপনার মনে আছে বোধ হয় ?” ভানুমতী ঘাড় হেলাইয়া জানাইল, তাহার মনেই चांदश् । উদয় বলিল, “আজ সকালে ঘুরতে ঘুরতে এমনি একটু তাদের বাড়ী গিয়েছিলাম। শুনলাম অমরের চিঠি এসেছে। দাদার কোনো খবর আছে কি না জিগগেস্ করাতে তার বললে, বড় ভাল খবর নয়।” ভানুমতীর পা থক্ থৰ্ব করিয়া কঁাপিতে লাগিল। দরজার কপাট ধরিয়া কোনমতে নিজেকে একটুখানি সাম্লাইয়া লইয়। সে জিজ্ঞাসা করিল, “কি লিখেছে সে ?” "বিয়ের দু' তিন দিন পরে ওরা সবাই মিলে শিকারে যায়। সেখানে কেমন ক’রে জানি না একট। অ্যাকৃসিডেণ্ট হয়ে গেছে। দাদার অবস্থা বোধ হয় বিশেষ স্ববিধার নয় । এখনি এবাড়ীর থেকে কারে ওখানে যাওয়া উচিত। আমার হাতে একট পয়সাও নেই, তা না হ’লে সকালের ট্রেনেই আমি চ’লে যেতাম।” ভানুমতী টলিতে টলিতে ঘরের ভিতর গিয়া থাটের উপর অৰ্দ্ধ অচেতন অবস্থায় লুটাইয়া পড়িল । সে যেন ভাল করিয়া উদয়ের কথা বুঝিতেই পারে নাই । কাতির মুখে খবর পাইয়া ভবানী চুটিয়া আসিয় তাহাকে কোলে জড়াইয়। ধরিল । উদয় তখনও পর্দার ওপাশে দাড়াইয়া। তাহাকে উদেশ্ব করিয়া তীক্ষ কর্কশ গলায় সে বলিল, " কৰ্ত্ত। মশায়ের ঘরে গিয়ে তাকে খবর দিন। - এখানে দাড়িয়ে কি হ’বে ?” কৰ্ত্তার সঙ্গে মুখোমুখি দাড়াইবার ইচ্ছ। যে উদ্বয়ের খুব ছিল তাহা নহে। তবে ভানুমতীর অবস্থা দেখিয়া সে বুঝিল যে, এখানে দাড়াইয়াও খুব বেশী কিছু লাভ নাই। অগত্য আস্তে আস্তে সে সরিয়া গেল । প্রমদারঞ্জনের কাছে নিজে না গিয়া একজন কৰ্ম্মচারীকে ডাকাইয়া, তাহার মারফতে আপনার বক্তব্য বলিয়া পাঠাইল। কিছুক্ষণ পরে গোট তিন চার দশটাকার নোট পকেটে ভরিয়া সে বাড়ী হইতে বাহির হইয়া গেল । ঘণ্ট। দুই পরেই প্রিপেড টেলিগ্রামের জবাব আসিয়া পড়িল । বজ্রাহতের মত সারাবাড়ী যেন নীরব নিঃম্পন্দ হইয়া গেল। জ্ঞানদা মারা গিয়াছে। প্রমদারঞ্জনের ঘরের দিকে ভয়ে ভয়ে আর কেহ পা বাড়াইল না। কেবল ডাক্তার রমেন্ত্রবাবু চুটিয়া আসিয়া
পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২
অবয়ব