পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] যাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে একটি অনাবশ্যক লম্বা পড়িয়াছিলেন। তিনি বাংলা জানেন। চেকুর রবীবাবুকে যে সান্ধা ভোজ দেয়, তাহাতে অধ্যাপক লেজনী তাহাকে বাংলায় অভিনন্দিত করেন । সভাস্থলে কেবল আর একজন ইউরোপীয় বাংলা বুঝিতেন। তিনি আগে বোম্বাইয়ে চেকোস্লোভাকিয়ার কন্সাল বা বাণিজ্যপূত ছিলেন। নাম মিন্টার ও পার্টোল্ড । তাহার স্ত্রী ভারতীয় লেখিকাদের সম্বন্ধে একথানি বহি লিখিতেছেন। অধ্যাপক লেজনী আমাকে পরে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, তাহার বাংলা বক্তৃতাটা কেমন হইয়াছিল । আমি বলিয়াছিলাল, মন্দ নয়, কিন্তু উচ্চারণ ভাল হয় নাই । তিনি বলিলেন, উচ্চারণ ঠিক হইবে এ আশ। তিনি করেন নাই। এই ভোজের সময় এক বর্ষীয়সী চেক মহিলা আমার পাশে বসিয়া ছিলেন। কোনট। নিরামিব কোনট। আমিব দ্রব্য, তিনি তাহ বলিয়। দেওয়ায় তাহার নিকট আমি ক্লভজ্ঞ । কিন্তু র্তাহার একটা প্রশ্ন নিমন্ত্রিভ ভারতীয়কে জিজ্ঞাস্য বলিয়া আমার মনে হয় নাই । তিনি শুধাইলেন, “ভারতীয় স্ত্রীলোকদিগকে অকালে বুড়ে দেখায় কেন ?” তাহার সামূনেই এক ভারতীয় মহিলা বলিয়াছিলেন, তাহা সত্ত্বেও অভ্যাগতকে এরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা তিনি শিষ্টাচারসঙ্গত মনে করিলেন । “আমিও পাণ্ট। জবাব শুধাইতে পারিতাম, “ইউরোপে অনেক বুড়ীও কেন কৃত্রিম উপায়ে বয়স লুকাইতে চায়, ইউরোপে স্ত্রীলোকদের বয়স জিজ্ঞাসা করা নিষিদ্ধ কেন”, ইত্যাদি । কিন্তু আমার সেকেলে প্রাচ্য আদবকায়দায় বাধা দিয়াছিল । আমাদের দেশে রুত্রিম প্রসাধনের সাহায্য ব্যতিরেকেও অনেক মেয়েকে তাহাদের প্রকৃত বয়স অপেক্ষা ছোট দেখায় । অকালবাৰ্দ্ধক্যও যে অনেকের না হয়, তা নয়। এই ভোজ ছাড়া অধ্যাপক ভিণ্টনিজ ও অধ্যাপক লেজনী আলাদা আলাদা দিনে রবিষাবু ও তাহার সঙ্গীদিগকে চায়ের নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন । উভয় দিনেই সহরের বিস্তর মান্যগণ্য পুরুষ ও মহিলা উপস্থিত ছিলেন। খাবার ছিল নানা রকমেয় ও প্রচুর। সংগীতের আয়োজনও বেশ ছিল । ভিন্টানিজ মহাশয়ের চা-পাটিতে পিয়ানোতে প্রবন্ধ সম্পাদকের চিঠি 8e. ক্ৰইটসার সোনাট। শুনিলাম। আমি পাশ্চাত্য সংগীত বুঝি না। রবিবাবু খুব প্রশংসা করিলেন। অধ্যাপক লেজনীর পার্টিতে এক চেক্‌ ভদ্র লোক গান করিলেন । র্তাহার গলা এমন মোট ও জোরাল, যে, মনে হইতেছিল যেন ঘর ফাটিয়া যাইবে । তিনি পরে নিজেই পরিচয় দিলেন, যে, তিনি ফুটবল খেলোয়াড়। গগাট। পালোয়ানের মত বটে। ভিণ্টাৰ্লিজ পরিবারে আমাদের সকলের একদিন মাধ্যাহিক আহারের নিমন্ত্রণ ছিল। ইহা সম্পূর্ণ পারিবারিক ব্যাপার। অধ্যাপক-পত্নী হিন্দু গৃহিণীর মত আমাকে সব জিনিষ বেশী করিয়া খাওয়াইবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন । তিনি ইংরেজী জানেন না । তাহার কনিষ্ঠ পুত্র ডাক্তার মাক্স বলিলেন, ম৷ বলিতেছেন আপনি কিছু খান না, সেই জন্য আপনার রাত্রে ঘাম হয়। আমি বলিলাম, তুমি আমার ডাক্তার ; তুমি তোমার মাকে তোমার রোগীর গোপন কথা কেন বলিলে ? মাক্স হালিয়া বলিলেন, মাকে রোগীর এরূপ গোপন কথা বলায় দোব নাই । অতঃপর অধ্যাপকপত্নী পায়সের মত একট। জিনিষ খুব বেশী করিয়া আমার পাতে ঢালিয়া দিলেন । আর এক দিন আমরা এক ধনী চেক্ কবির নিমন্ত্রণে রবিবাবুর সঙ্গে তাহার উদ্যানবাটিক ও লাইব্রেরী দেখিতে গিয়াছিলাম। লাইব্রেরীর বাড়টি এবং বহিগুলির বাধাই বেশ সুন্দর । এখানে চেক্ কবি রবি বাবুকে বৃষ্টির মধ্যে বাগান দেখিতে লইয়া যাওয়ায় তিনি ভিজিয়া যান ও পরে অস্বস্থ হন । এই উদ্যানবাটিকা প্রাগ হইতে অনেক মাইল দূরে। বাইবার সময় দুই দিকে দেখিলাম ছোট ছোট গ্রামেও স্বন্দ দুভলা তেতল৷ হোটেল রহিয়াছে। মাঠে পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরা আপাদ মস্তক মোট শীতবস্ত্রে আচ্ছাদিত হইয়া ও ভারী ভারী বুট পরিয়া চাষের কাজ করিতেছে। সেইরূপ পোষাকপর লোকদিগকে মাঠ হইতে গরুর গাড়ীতে ও ঘোড়ার গাড়ীতে শস্ত আনিতেও দেখিলাম। এলবে নদীর আঁকা বাকী স্রোত এক জায়গায় নূতন কৃত্রিম সোজা খালে চালাইয়া নৌচালনের স্ববিধ করা হইয়াছে, দেখিলাম ।