পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8SN প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড ইহা ব্যতীত শিবের গানে কালিদাস, মনসামঙ্গলে ষংশীদাস, চওঁীকাব্যে কমললোচন ও মাধবানন্দ, ধৰ্ম্মরাজের গীতে ঘনরাম, মহাভারতে অভিরাম প্রভৃতি কবিগণ—সাধারণতঃ “দ্বিজ” আখ্যায় নিজেকে বিভূষিত করিয়াছেন ; ধৰ্ম্মমঙ্গলে রামাই পণ্ডিত, শিবায়নে রামেশ্বর, মনসামঙ্গলে নারায়ণদেব, বিজয়গুপ্ত, মহাভারতে সঞ্জয়, ভাগবতে নরহরি প্রভৃতি বিখ্যাত কবিগণ নিজ নিজ নামের সঙ্গে কোন বিশেষণ ব্যবহার করেন নাই । আবার ইহাও দেখা যায় যে, একই কবি একাধিক নির্দিষ্ট প্রথায় নিজেকে ব্যক্ত করিয়াছেন, যেমন, শিবায়ণে রামকৃষ্ণদেষ নিজেকে রামকৃষ্ণদাস ও কবীচন্দ্র উভয়ন্ধপেই ভণিতায় প্রকাশ করিয়াছেন ; সেইরূপ আমরা একই পুথিতে কেতকা দাস ও ক্ষেমানদের ভণিত পাইতেছি ; চণ্ডীকাব্যে “কবিকঙ্কন” ও “মুকুন্দ” এই উভয় প্রকার ভণিতার বিশিষ্টতাই অধিক। কিন্তু এইরূপ নানা-প্রকার বিভিন্নতার মধ্যেও প্রত্যেক কবির একএকটা বিশিষ্টত লক্ষ্য করা কষ্টকর হয় না। বৈষ্ণব সাহিত্যের মধ্যে এইরূপ বিশিষ্টত আরও স্পষ্ট করিয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে। জীরপ-রঘুনাথ-পদে যার আশ । চৈতন্ত-চরিতামৃত কহে কৃষ্ণদাস । এইরূপ ভণিতা চরিতামৃতের সৰ্ব্বত্রই পাওয়া যাইতেছে। চৈতন্য ভাগবতের ভণিতা শ্ৰীকৃষ্ণ চৈতন্ত নিভ্যানন্দ-চান্দ छन। বৃন্দাবন দাস তছু পদযুগে গান। চৈতন্যমঙ্গলে জয়ানন্দ নিম্নলিখিত প্রকার ভণিত দিয়াছেন— চিন্তিয় চৈতন্তু-গদাধর-পদ-দ্বন্ম । एठांग्निथ७ छग्नांनन कब्रिळ थरुझ ॥ লোচনদাস সৰ্ব্বত্রই তাহার গুরু নরহরির উল্লেখ করিয়াছেন যেমন,— ঐনরহরিদাস-পদ করি আtশ লোচনদাস গুণ গায়। ইত্যাদি । কর্ণানন্দে যদুনন্দনদাস আচাৰ্য্য প্রভুর কন্যা হেমলতার উল্লেখ করিয়া ভণিতা দিয়াছেন শ্ৰী আচার্ঘ্য প্রভূর ষষ্ঠ খ্ৰীল হেমলতা। cथभ-कब्रवल्लौ किद निब्रमण शांछि ॥ সে দুই চরণ-পদ্ম হয়ে বিলাস। कर्नांमल ब्रन करु शश्नर्णन गांन ॥ এইরূপ ভণিতার একটা বিশেষ মূল্য আছে। কোন প্রকার পালাগানে, অথবা কাব্যে, যেখানে একটা আখ্যায়িকা লইয়া ধারাবাহিক রচনা আরম্ভ হইয়াছে, সেখানে কোন কোন পদ বা অধ্যায়ের অস্তে কোন ভণিত অথবা ভণিতার বিশিষ্টতার নিদর্শন না থাকিলেও, সেই সেই পদ বা অধ্যায় যে ঐ পালা বা কাব্য রচয়িতার রচনা তাহ বুঝিতে কোনই কষ্ট হয় না। কিন্তু বৃহৎ পদাবলী সাহিত্যের অন্তর্গত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদের প্রকৃত রচয়িতার সম্বন্ধে স্থির ধারণা করিবার জন্য আমরা প্রথমেই ভণিতার প্রতি লক্ষ্য করিয়া থাকি । যাহার। পদাবলী সাহিত্য পাঠ করিয়াছেন, তাহারা জানেন যে, ইহাতে কত গলদ ঢুকিয়াছে। এক কবির পদ অন্য কবির ভণিতায় চলিয়া যাইতেছে, কোন কোন অৰ্ব্বাচীন লেখক স্বরচিত পদ ইচ্ছা করিয়া অন্তের ভণিতায় চালাইয়াছেন, কোন কোন সম্প্রদায় বিশেষ নিজেদের স্বর্থ সিদ্ধি করিবার জন্য যে ভাবে বৈষ্ণব মহাজনগণের মস্তকে বজ্রাঘাত করিয়াছেন, তাহ ভাবিলে বিস্মিত হইতে হয়। এইসকল আবর্জনার মধ্যেও প্রকৃত সত্য খুজিয়া বাহির করিবার উদ্দেশ্বে আমরা যে-সকল স্বত্র অবলম্বন করিয়া কার্য্যে অগ্রসর হইতে পারি, ভণিতা পৰ্য্যবেক্ষণ তাহীদের অন্যতম । মনে করুন, কোন রচনা কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর নামে চলিয়া যাইতেছে ; যদি তাহাতে রূপরঘুনাথের উল্লেখ করা ভণিতার ধারা আমরা দেখিতে পাই, তাহা হইলে আমরা সাধারণতঃ এই ধারণা করিতে পারি যে, ঐ রচনা সম্ভবতঃ কৃষ্ণদাস কবিরাজেরই হইবে । এখানে ইহাও বলা আবখ্যক যে, কেবল এই প্রকার ভণিত দেখিয়াই আমরা সম্পূর্ণরূপে নিঃসন্দেহ হইতে পারি না ; কারণ অনেক ভণিতার মধ্যে যে জুয়াচুরি আছে তাহাও আমরা বলিয়াছি। তবে ভণিত দ্বারা যে একটা প্রাথমিক ধারণ হইতে পারে তাহাতে অকুমাত্র সন্দেহ নাই—; তৎপর অন্যান্ত বিষয় সম্বন্ধে বিবেচনা করিয়া একটা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় । এইরূপ ভণিতার কষ্টিপাথরে ঘসিয়া পদাবলীর মধ্যে প্রকৃত চণ্ডীদাসের পদ সম্বন্ধে কোন ধারণ করা যায় কি না আজ আমরা তাহারই কিঞ্চিৎ আলোচনায় প্রবৃত্ত হইব ।