পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পুরাতনী শ্ৰী মোহিতলাল মজুমদার } পুরাতন বাস্তু-ভিটা, অতি উচ্চ শিখরে তাহার প্রভাতে সন্ধ্যায় বসি’ রচি গান ; বিজন-বিধুর চেয়ে থাকি মুখনেত্ৰে, নভোতলে যেথায় মুদুর— মিশে গেছে অরণ্যের অনন্তু পল্লব-পারাবার, নভোরত তরুশিয়—নীলে ও খামলে একাকার – তারি পরে ফেলে ছায়া নবমেঘ গম্ভীর মেছর। অখখ, তিন্তিড়ী, তাল, শিমূলের কচিং সিদূর, বেণুশীর্ষ, আম্র আর পনসের ঘনপত্রভার ঢেকে আছে ধরণীরে। উৰ্দ্ধে শুষ্ঠ মহা নীলাম্বর, নিয়ে হরিতের মেলা ; সারাবেল বিহঙ্গের গান, রহি রহি’ বায়ুমুখে কাননের উদাস মৰ্ম্মর, নীরব উদয় অন্ত, মধ্যদিন নিশীথ-সমান – এই মৌনী প্রকৃতির স্বনিবিড় অরণ্য-বাসর, এই মোর কবি-ধাত্রী-জনহীন সবুজ শ্মশান ! R আমার নয়নে শুধু বর্ণ আর বিপুল প্রসার— নিস্তন্ধ রূপের ছায়, মেঘ-মায়া সন্ধ্যায় প্রভাতে, দৃষ্টি মোর ডুবে যায় নীর-হীন নীরদ-শোভাতে— ধরণীর চতুঃসীমা-ভরা ওই বিটপী-বিধার। কাণে নয়—প্রাণে জাগে মুগম্ভীর ধ্বনি আনিবার, বসি যবে মহামৌনী স্থবিরাট কানন-সভাতে মৃদুর-কালের স্রোত মেঘ-মন্ত্ৰ মৃদঙ্গ-আঘাতে আছাড়িয়া পড়ে বুকে—মতীতের স্তব্ধ হাহাকার! দাড়ায় আমারে ঘিরে মোর সেই পিতৃ-পিতামহ— বৃহৎ-কালের সাক্ষী, বহুযুগ-যুগান্ত স্বপন ভরি’ দেয় আঁখিপাত ! জন্ম-মৃত্যু-ভাবনা দুঃসহ ভুলে যাই, চিত্তে মোর কল্পনার নীল আলেপন স্নিগ্ধ করে সৰ্ব্ব ব্যথা ; পুরাতন এ বন-ভবন বহিছে কত না স্মৃতি, তারি ধ্যান করি অহরহ } \ు জ্যোৎস্বরাতে, ভগ্ন পুজামগুপের খিলান-প্রাচীরে যে গভীর কালে ছায়া প্রেতলম উঠিছে গুমরি’, হেরি’ তারে মনে হয় আজও সেই উৎসব-বঁাশরী বাজিছে করুশ স্বরে, অধি’-আলো অন্ধকার-তীরে— সেদিনের প্রতিবিম্ব র্কাপে মোর নয়নের নীরে । গৃহে আসি কবে কোন নববধূ নূপুর বিমরি’ রেখেছিল পা দুখানি যে ইষ্টক-ফলক উপরি— সে ওই রয়েছে পড়ি’ এক কোণে ভবন-বাহিরে ? স্মৃতির সমাধি পরে বসে দেখি সেদিনের ছবি, এদিনের কলরব পশে না যে আমার শ্রবণে, চেয়ে থাকি, যেই দিকে অন্ত গেছে গৌরবের রবি, গাথি যে তারার মালা অন্ধকারে নিশীথ-স্বপনে। যে স্বর ফুরায়ে গেছে, ফিরিবে না কভু এ ভুবনে, আজিকার গানে তার কিছু দিব-আমি সেই কবি ।