পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] ঘরে ও বাইরে 8ᏜᏄ আয়োজন । কাল হইতে এই লইয়াই সে ব্যস্ত । পাড়ার অন্য মেয়েদের মত শাস্তিপুরে ধুতি-চাদর লইয়া পচিশ-ত্রিশ টাকার বাজার-খরচ হাতে করিয়া সে বাপের বাড়ী আসে নাই,স্বামীর ঘরে ভাইদের ডাকিয়া আদর-আপ্যায়ন করাও তাহার সাধ্য নাই। সে যে বিধবা মায়ের বিধবা মেয়ে। তাহার উৎসবের যত ঘট, যত প্রাচুর্য্য তাহার সুধিকাংশেরই বাহিরে কোনো প্রকাশ নাই । সারা বৎসর দাদার ছেড়া ধুতিগুলির মাঝখান সেলাই ও রিপু করিয়া সে পরিত। পূজার সময় জ্যাঠ মহাশয়ের বাড়ী হইতে তাহারা তিন ভাইবোন তিনখানা নূতন কাপড় পাইত, কারণ জ্যাঠামহাশয় ছিলেন সওদাগর আপিসের বড়-বাবু এবং কনিষ্ঠ ভ্রাতার মৃত্যুর পর পিতৃহীনদের প্রতি এ কৰ্ত্তব্যটা করা তিনি উচিত মনে করিতেন। কিন্তু পূর্ণিমা কোনো দিন সে নূতন কাপড় পরে নাই। পূজার পর দেখিতে দেখিতে ভাই-ফোট৷ আসিয়া পড়ে। তাহার ভাইদের সেই একটি মাত্র বোন কি করিয়া ভাইদের শুধু হাতে সে ফোট দিবে ? ছোট ভাইটিকে আট আনা পয়সা খরচ করিলেই একখানা কাপড় দেওয়া যায়। মাকে লুকাইয়া জ্যাঠামহাশয়ের বাড়ীর ঝিকে দির। মাঝে মাঝে বড়ি বিক্রি করিয়া সে যে দুই চার আনা সংগ্রহ করে তাহারই পূজি হইতে সে কাপড় একখানা আনানো চলে । কিন্তু দাদাকে ত অার ধোলাই-করা কাপড় একখানা না দিয়া পারা যার না ! কোথায় পাইবে সে তাহার জন্ত আড়াই টাকা তিন টাকা ? ভবিষ্যতের আশাও তাহার কিছু নাই যে, আজ না হউক দুই বৎসর বাদে দিবে ? তাহার যে জীবন-প্রভাতেই অদৃষ্ট লিখন আগাগোড়া জানা হইয়া গিয়াছে। তাই বৎসরাস্তের ঐ একটি মাত্র নূতন কাপড়ও সে রাখিয়া দেয় ভাই-ফোটায়ু দাদাকে দিবে বলিয়। কাল রাত জাগিয়া সে রসবড়া ও নারিকেলের সঙ্গেশ করিয়া রাখিয়াছে ছানার খাবারের বড় দাম ; বেশী দেওয়া যায় না । সকালে দাঙ্কার জন্য চার পয়সা দামের দুইটি ও খোকার জন্ত দুই পয়সা দামের দুইটি সন্দেশ আনাইয়াছে। একটি দিলে খোকা বড় রাগ করিবে, তাই কম দামের দুটিই জানাইতে হইল। খোকা $ుఖి-te ত এমনিতেই বলে, “টাি পচ, আমাকে কিচ্ছ, দেয় না ।” বেলা হইতে চলিল। পূর্ণিমা সেই সকাল হইতে ধান দূৰ্ব্ব চন্দন ইত্যাদি সাজাইয়া স্নান সারিয়া বসিয়াই আছে। দাদা রাজীবের দেখা নাই। খোকাটা অস্থির হইয়৷ উঠিয়াছে। আলপনার গণ্ডীর বাহির হইতে খাবারগুলির দিকে লুব্ধ দৃষ্টি দিয়া সে ঘুরিয়া ঘুরিয়া চারিদিকে নাচিতেছে। কি অমুযোগের স্বর! “দিদি, আমাকে দাও না ভাই, ওই সন্দেশটা। আমার খুব ভাল লাগবে। আচ্ছা, এখন একটা দাও, অন্তটা পরে দিও।” দিদি বলিল, “যা বোকা ছেলে ! বড় ভাইয়ের আগে ছোটকে ফোট নিতে নেই।” খোকা বলিল, “ফোটা ত চাইনি, সন্দেশ নেব খালি । ওই বড়টা দিলেই হ’বে ।” দিদি বেচারী তাহার সঙ্গে আর পারে না। চোখ ফিরাইলেই হয়ত ছে। মারিয়া দৌড় দিবে। অথচ দাদার কি বুদ্ধি । আজকার দিনেও সকাল-বেলা সাত তাড়াতাড়ি’ বাহিরে চলিয়া গেল। কখন যে আসিবে, স্নান করিবে তাহার ঠিক নাই । . কাজের মামুষের কাজ থাকে, পাচ জন ভদ্র লোকের সঙ্গে যাওয়া-আসা করিতে হর জানি ; কিন্তু আজ বছরকার দিনের এই সকাল বেলাটুকুও কি ঘরে থাকিলে ভদ্রলোকেদের কিছু অসম্মান করা হইত। কাল রাত হইতে পূর্ণিমা যে উৎসাহ সঞ্চয় করিয়াছিল, ভোর হইতে এই বেলা দশট। এগারোটা পৰ্য্যস্ত তাহাকে জিয়াইয়। রাখিয়া রাখিয়া ক্রমশই তাহ নিপ্তেজ হইয়া পড়িতেছে। ইচ্ছা করিতেছে আল্পনাটার উপর জল ঢালিয়া খাবারের থালাটা খোকাকে ধরিয়া দিয়া কাপড়খানা আস্তাকুড়ে ফেলিয়া দেয়। বেলা ঠিক এগারোটার সময় অত্যন্ত ব্যস্তভাবে খর্বাত্ত কলেবরে একতোড়া ফুল হাতে করিয়া রাজীব আসিয়া ঘরে ঢুকিল। পারে ধূলিমলিন জুতা জোড়া প্রায় । পূর্ণিমার আলপনার উপরই ছিটুকাইয়। ফেলিল, গায়ের চার ও ঘর্ষসিক্ত জামাটা ফেলিল খোকার নূতন কাপড়খানার উপর। তার পর চীৎকার জুঞ্চিল, “ম, শীগগির • *s ४५rt६ " :• *{