পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ఫిy প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড আমার তেল আর সাবানটা দাও ; আমাকে এখুনি কাজে বেরুতে হবে। এই পূর্ণি, আমাকে একখানা ধোপ কাপড় দিতে পারিস ? এ প’রে ত আর ভদ্রলোকের সাম্নে বেরোনো যায় না।” মা রান্নাঘর হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “এইত ঘরের মধ্যেই কুলুঙ্গিতে তেল সাবান রয়েছে, বাবা ; নিজে দেখে কি কোনোদিন জিনিষ নিতে শিখবি না ? বুড়ো বয়স পৰ্য্যস্ত কত আর আমি হাতে হাতে তেলটি জলটি খড়কেটি জুগিয়ে আসব ? এই আঁশহাত করেছি, এখনই কি ধুয়ে আবার ঘরে ছুটতে পারি ?” রাজীব রাগিয়া বলিল, “না পার, আমি অমনিই চান করছি। তোমরা কোথায় যে কি রাখ, অভ আমি খুঁজতে পারি না ।” সে হন হন করিয়া কলতলায় ছুটিয়া চলিল। পূর্ণিমা ধোলাইকর নূতন কাপড়খানা হাতে করিয়া আনিয়া বলিল, “আজ যে ভাইফোট। তা কি ভুলে গেছ ? নেয়ে এই কাপড়খানা প’রে এস, ফোটাটা নিয়ে তবে বেরিও ।” রাজীব খুলী হইয়া বলিল, “যাক্‌, বঁচিয়েছিল। আজ সরমাদিদির বাড়ী আমার ভাইফেলটার নেমস্তয় আছে, ভাগ্যে নূতন কাপড়খানা রেখেছিলি, তাই লোকের বাড়ী যেতে পারব। মন্ত ভোজ সেখানে আজ। আমাদের সমিতির সষ কৰ্ম্মীরা আসবে।” পূর্ণিমার মুখখানা মান হইয়া গেল। সে কিছু না বলিয়া কাপড়খান দাদার হাতে তুলিয়া দিল। মা তেল সাযান হাতে করিয়া আসিয়া বলিলেন, “ভারি আমার মস্ত সাতমহল বাড়ী, তাই ছেলে তেলট খুঁজে বার করতে পারলেন না।” রাজীব বলিল, “আমার অনেক কাজ আছে, তেল খুঁজে খুঁজে বেড়াবার সময় হয় না।” ম চলিয়া গেলেন। ছেলের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করিতে গেলে মাছটা পুড়িয়া ছাই হইয়া যাইবে, শেষে ছেলেরাই থাইতে পাইবে না। রাজীব গুর গারিয়া চুল আঁচড়াইয়া হাতঘড়িটা হাতে বাধিতে বাধিষ্ঠে জ্বলিল, “পূৰ্ণি, দেখত মা’র হাত-বাক্সে আনা দুই পয়সা আছে কি না। অনেকটা দূর যেতে হবে, হেঁটে হেঁটে আর পারি না ।” পূর্ণিমা বিস্মিত হইয়া বলিল, “এখুনি বেরোবে কি, দাদা ? ফোটাটা নিয়ে যাও।” রাজীব হাসিয়া ঘরের ভিতর অগ্রসর হইয়া আসিয়৷ বলিল, “হ্য তাইত। ভুলে গিয়েছিলাম। এই দাড়াচ্ছি, চটু ক’রে দিয়ে দে। বেশী বেলা হ’য়ে গেলে সরমাদি আবার রাগ করবেন।” পূর্ণিমার চোখে জল ভরিয়া আসিল। জুতাপায়ে চৌকাঠের গোড়ায় দাড়াইয়া আপন মা’র পেটের বোনের ফোটা লইতেও তর সহিতেছে না, কোথাকার এক পাতানো বড়মাকুব দিদির নিমন্ত্রণের তাড়ায়। ইচ্ছা করিল বলে,"আমার ফোটা মনে মনেই রইল, যাও, তোমার আর অত হতশ্রদ্ধ করে নিতে হ’বে না।” কিন্তু বলা হইল না। অমন কথা বলিলে মা রাগ করিবেন ; তাছাড়া দাদার মুখের উপর অমন করিয়া কথা সে ত কোনোদিন বলে নাই। পূর্ণিমা বলিল, “জুতাজোড়া খুলে বোস, নইলে দেব কেমন ক’রে ?” “আঃ, তোদের শাস্তরের জালায় আর পারি না,” বলিয়া রাজীব হুড়মুড় করিয়া পিড়ির উপর গিয়া বসিয়া পড়িল । ফোটা লইয়া বলিল, “একটা মিষ্টি হাতে তুলে দে। এত বেলায় অতগুলো খেলে সেখানে আর কিছুই খাওয়া হ’বে না।” পূর্ণিমা হাত না তুলিয়া বলিল, “তোমার যা খুলী তুলে নাও, আমি খোকাকে ভাস্কৃতে যাচ্ছি।” রাজীব তাহার কথায় লক্ষ্য না করিয়া একটা নারিকেলসন্দ্রেশ গালে পুরিয়া চাদরটা কাধে ফেলিতে ফেলিতে তোড়াটা বগলে করিয়া বাহিরে চলিয়া গেল । পূর্ণিমা আসিয়া দেখিল পিড়ির সাম্নে সাজানো খালা রেক্ষাবগুলি ঠিক তেমনি রহিয়াছে, কেহ যে স্পর্শ করিয়াছে তাহা বোঝা যায় না। - খোকা দেখিয়াই আনন্দে নাচিয়া উঠিল, "দিদি, আমি তোমার আঁকা পিঁড়িতে ব’সে এইবার সব সন্দেশগুলো খাই । কি মজা, দাদা আজ অব রেখে দিয়েছে।”