পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] গ্রামের মেয়ে 8? এইবারে বাড়ী চলিলাম। সেই বনের পরেই একটি শুদ্ধ থাল, তার ভিতরে আবার একটুখানি জলও দেখা যাইতেছে ; পাহাড়ের মত ওঠা-নমা করিয়া অতি সাবধানে সেটি পার হইয়া মাঠে গিয়া পড়িলাম। উচু নীচু বন-পথ, মাঝে মাঝে জলপথ পার হইতে হইতে কত পথই যে চলিলাম একটি বড় পুকুরের পার দিয়া যাইতে যাইতে পা পিছলিয়া পড়িয়া গেলাম, গায়ে কিন্তু একটুও লাগিল না । এমনি করিয়া ক্রমে বাড়ী আসিয়া পৌছিলাম। কলিকাতা হইতে কতকগুলি সরু স্থতার ‘ক্রচেটবল’ ও কুসীর কাট৷ আনিয়াছিলাম ; এখানে তো লেখাপড়। হইবে না, আমার ঠাকুর-ঘরের দরজার জন্য একটা লেসের পরূদ প্রস্তুত করিবার ইচ্ছা অনেক দিন হইতে ছিল। সকাল-বেল পুকুর-পাড়ে বসিয়া লেশ বুনি আর পাপিয়ার পিউ পিউ, বউ কথা কও, কোকিলের কুস্থধ্বনি কান পাতিয়া শুনি । আমার সেই লেশ পল্লীবালাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল ; স্থতা ও কুর্দীর কাটা হাতে করিয়া কয়েকটি মেয়ে আসিয়া উহ। শিখিতে চাহিল। তাহাদিগকে শিল্প শিক্ষা দিতে দিতে একদিন আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, এখানে দেখিবার মত কি কি জিনিষ । আছে, বল তো ? শুধু এই পল্লীটির শাস্ত সৌন্দর্ঘ্য আর লতা, পাত, ফুল, পার্থী দেখেই কি আমি চলে যাব ? একটি বালিকা বলিল,*সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ী দেখবেন চলুন ।” “সেখানে পিসীমা এলে পরে যাব । আর দেখবার কি কিছুই নেই ?” “ভিন্‌ গয়ে আরও অনেক ঠাকুর-বাড়ী আছে ।” একটি চতুরা মেয়ে বলিল, “জন্মভূমি দেখতে এসেছেন, চোখ ভ'রে ভাই দেখে যান ; এর চেয়ে দেখবার জিনিস আর কি আছে বলুন।" হাসিয়া বলিলাম, “ভা ঠিক । দেখ, এখানে ব’সে ব’সে আমি ওপাড়ার বউদের রোজই দেখি, পুকুর থেকে জল তুলে কি বাসন মেজে নিয়ে যায়, একেবারে কলাবউটির মত সাত হাত ঘোমটা টেনে। আমায় দেখে অমন করে না তো ?” “না। ঘোমটার বহর কম হ’লে মুখ দেখা যাবে যে ;

তা হ’লে এখানে নিন্দে হয়। এ গায়ে আবার এমন বউওঁ আছে যে নিন্দের ভয় করে না ; তার সঙ্গে ঝগড় কি মারামারিতে এখানকার পুরুষেরাও পারে না ! তা’কে আপনি দেখবেন ?” “নিশ্চয় দেখব ! আযি সব দেখতে-শুনতেই তো এসেছি ; কে সে ?” “সে বাতাসীর মা ; সিংপাড়ার গোরাচাদের বউ । আপনি এসেছেন শুনতে পেলে সেই আপনাকে দেখতে আসবে। ঘাসের মত রায়-বাবুর দাড়ী উপড়ে দিয়েছে সে, এত সাহস তার । তার পর থেকে এ গায়ের সবাই তাকে ভয় ক’রে চলে ।” অবাক হইয়। শুনিলাম , এমন বীরাঙ্গন বাঙ্গালীর ঘরেও আছে ! এ দেশে এমন নারীর সংখ্যা যত বাড়ে ততই ভাল ; নর-হস্তে নারী-নির্ধ্যাতনের কথা তাহ। হইলে আর শুনিতে হইবে না, ইহার বিপরীত ঘটনাই না হয় ঘটিবে । এরূপ সাহসী ও শক্তিশালিনী নারী নিশ্চয়ই নারী সমাজের স্বপ্ন, বঙ্গমাতার কণ্ঠস্থারের রত্ব ! “বাতাসীর মাকে আজই আমার সঙ্গে দেখা করতে বলে, বুঝলে ?” আগ্রহ-ভরে এই কথা বলিয়৷ বাড়ী চলিলাম । বিকাল-বেল ঘুম হইতে উঠিয়া বসিয়া আছি, পাশের ঘরে তখন খুব তাস খেলা চলিতেছে ; পিসীমা কখন উঠিয়া গিয়াছেন, জানি না। তিনি হয় ত তখন কম্বিন্দী প্রস্তুত করিতেছেন, কিংবা মম আজ কলিকাতা রওনা হইবে বলিয়া তাহার পথের খাবার গুছাইয়। দিতেছেন। আলন্ত কাহাকে বলে ইহারা তাহ জানেন না। আমার খুড়তুতো বোন সঙ্ক ছুটিয়া আসিয়া বলিল, “বাতাসীর মা এসেছে, দিদি !” ফিরিয়া নবাগতার দিকে চাহিলাম, এই বুঝি সেই বাতাসীর মা ! যেমন শুনিয়াছি, ইহাকে দেখিয়া ত “ডেমনই বলিয়া বোধ হইতেছে না। এই হাস্তময়ী নারীর মুখে তেজ কি গর্কের ছায়, ত আমি দেখিতে পাইলাম না। উহার কোমল হাত দুইখান ধে শক্তিতে