পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tec প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৪ 媒

  • [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড

খানিকের ভিতরই ইহাদের ছাড়াইয়া উঠিবে। সেটা হওয়াই স্বাভাবিক কারণ বত্ৰিশের কাছে কুড়ি যে অনেক আধুনিক । বি-এ, পরীক্ষায় রাজীবের সফলতা সম্বন্ধে অধ্যাপকেরা যতই সন্দিহান হইতে লাগিলেন, তাহার শিংভাঙা বন্ধুরা ততই তাহার প্রতিভায় মুগ্ধ হইয়া উঠিতে লাগিল। দলের পাগু প্রভঞ্জন বলিল, “রাজীব, কলেজটা ছেড়ে দাও হে ; পাঠশালার পড়া আর কত কাল আওড়াবে ? এট ননকোঅপারেশেনের যুগ, জান ত ?” প্রস্তাব শুনিয়া মা বলিলেন, “হ্যারে, দু-বচ্ছর যে মাইনের টাকা গুনলাম, সে কি সব জলে দেবার छ८मृ ?” ছেলে বলিল, “জলে যা গেছে তাত গেছেই । পরীক্ষা দিতে হলে আরো ত এক শ দেড় শ তার উপর জলে যাবে।” * মা বলিলেন, “তোদের পেটে ধরেছিলুম ; আমার যা কিছু তোদেরই পিছনে গিয়েছে দুঃখ নেই। কিন্তু ওই বিধবা মেয়েটার গলার হারছড়াও যে বাধা দিতে হ’ল তোর মাইনে দেবার জন্তে, সেটা কি তোকে উদ্ধার ক’রে দিতে হবে না ?” ছেলে বলিল, “পাশ ক’রে ত চল্লিশ টাকা মাইনের কেরাণীর চেয়ে উচ্চ পদের আশা নেই ; সে আমি অম্নিও আনতে পারব।” মা কান্নাকাটি জুড়িয়া দিলেন ; অগত্য রাজীব পরীক্ষা দিল, কিন্তু পাশ হইল না। বলিল, “ফিসের এই টাকা ক’টা আমি বঁচিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, তাও মার জন্যে নষ্ট হ’ল ।” রাজীব পড়া-শুনা ছাড়িয়া দিয়া পুরাপুরি সমিতির কাজে লাগিল। দেশের স্বৰ্গারোহণের সিড়ি আরো এক ধাপ বাধাইতে আর দেরী নাই। 議 奪 " 鷺 সমিতির অন্যতম নায়িক শ্ৰীমতী সরমান্বন্দরীর বাড়ী জাজ গৃভ্যদের ভাই-ফোটার নিমন্ত্রণ। প্রকাও তিনতলা বাড়ী, দেউড়াতে পাগড়ী-বাধা গালপাটাওয়ালা ঘরোয়ান দ্বাড়াইয়া, বঞ্চদর সে-ই আনিয়া, বসিবার ঘরে বসাইতেছে। ঘরের* আসবাবপত্র বিলাতী কেভায়ু সাজানো, কোথাও কোনো খুং নাই। কিন্তু অতিথিদের অধিকাংশেরই বেশ-ভূষায় দারিদ্র্য উকি মারিতেছে। অভাবের দীনতার উপর বিলাসের একটা পালিশ পড়িয়া দারিদ্র্যের অনাড়ম্বর সহজ ঐটুকুও চাপা পড়িয়া গিয়াছে। বিলাসের পূর্ণাঙ্গ আয়োজনের কাছে তাহা একটা ভেঙচানির মত দেখাইতেছে। সরমাসুন্দরীর শ্বশুর পাটের দালালী করিয়া অগাধ সম্পত্তি রাখিয়া গিয়াছিলেন। স্বামীর ব্যবসায় সেই অর্থ উপভোগ ও অপব্যয় করা। যতদিন শ্বশুর বঁাচিয়াছিলেন, বধূকে অস্থর্যাম্পশ্ব করিয়া দাসীপরিবৃত অম্বরমহলে লুকাইয়া রাখিয়া তিনি আপনার নবার্জিত আভিজাত্যটা সযত্নে বঁাচাইয়া চলিতেন । সরমার সন্তান হয় নাই ; বিরাট একটা বাড়ীর অন্দরের অতল গহবরে শুধু একদল দাসীর মধ্যে সে একলা ইপিাইয়া উঠিত। একটু বয়সে তাহার বিবাহ হইয়াছিল ; ইংরেজী ও বাংলা নাটক নভেল পড়িবার মত বিদ্যা সে-বয়সে সে সঞ্চয় করিয়া রাখিয়াছিল। কিন্তু তাহার ধনী শ্বশুরের বাড়ীতে হীরা জহরত অপেক্ষাও পুস্তক দুর্লভ ছিল । তাই সরমার কাজ ছিল খড়খড়ি ও ছাদের আলিসার পাশ হইতে লুব্ধনেত্রে বাহিরের পৃথিবীর পানে তাকাইয়া থাকা আর আপন মনে সম্ভব অসম্ভব উপন্যাসের জাল বোন। তাহার পর্দার বহর দিনকার দিন মৃত বাড়িতেছিল, বাহিরের উপর তাহার লোভটা ততই দুরন্ত হইয়া উঠিতেছিল। পাইলে সে যেন এখনি সমস্ত পৃথিবীটাকে গ্রাস করিয়া ফেলে। ঘুলঘুলির ভিতর হইতে সরমা এ বাড়ীর সমস্ত । অতিথি অভ্যাগত, দেনদার, পাওনাদারের চেহারা মুখস্থ করিয়া ফেলিয়াছিল। পথে যে কলেজের ছেলের দল, কেরাণীবাবুর পাল, কাবুলী মহাজন, থোট্ট মুটে, উড়িয় ব্রাহ্মণ, খ্ৰীষ্টিয়ান নাস, নিত্য আনাগোনা করিত তাহাদের কেহ সরমাকে কোনো দিন দেখে নাই, কিন্তু তাহার সকলেই ছিল সরমার পরিচিত। কে কথন কোন পথে আনাগোনা করে তাহা সরমা এক নিঃশ্বাসে বলিয়া দিতে পারিত। সরমার বৃদ্ধ শ্বশুর যখন তাহার অগাধ সম্পত্তি নিষ্কর্ণ পুত্রের হাতে তুলিয়া দিয়া সরমার কারাগারের