পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৪ { ২৭শ ভাগ ১ম খণ্ড পুরুষদিগকে পরাজিত করিতে পারে, তাহ আমার বিশ্বাস হইল না । সরু মাদুর বিছাইয়। দিলে সে বসিয়া বলিল, “আপনি এত কাল পরে দেশে এসেছেন দিদিঠাকৃরুন, আপনাকে এখানকার কেউ এখন আর চিনতেও পারবে না । আমারই মনে পড়ে না-লেই যখন ঠাকুরঝির সঙ্গে বেড়াতে বেড়াতে ওবাড়ীতে যেতেন, তখন আপনাকে দেখিছি, আর এই দেখলুম। অন্নপূর্ণাকে আপনার কি এখন মনে পড়ে, ছেলে-বেলায় কত খেল করেছেন তার সঙ্গে । আমি তার বড় ভাজ ।” তখন অন্নপূর্ণ ও তাহার ছেলেমেয়ের কথা, কত কথা হইল। "বীরত্বের" কথা উঠিতেই সে হাসিয়া বলিল, “আপনি এরি মধ্যে সবই শুনেছেন দেখছি! বেলা গেছে, আজ বাড়ী যাই ; আর একদিন এসে আপনাকে এদেশের কথা বুঝিয়ে সুজিয়ে বলব।” বাতাসী তখন আমার মেয়ে টুচুর সঙ্গে কথা বশিতেছিল, সে তাহাকে ডাকিয়া লইয়া বাড়ী চলিল । আমি জানালার ধারে বসিয়া তাহদের দিকে চাহিয়া রহিলাম, ক্রমে মা ও মেয়ে বনপথে অদৃত হইয় গেল । ইতিমধ্যে রোগে পড়িয় শরীর বড় দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িয়াছে ; সারাদিন চুপ করিয়া শুইয়া শুইয়। পাখীর গান শুনি, আর কত কথা ভাবি। দেশের কবিরাজের গুণেই আমার দুরারোগ্য রোগ সারিয়া আসিতেছে। দুর্বলতার ভিতরেও এই রোগমুক্তির আনন্দ সৰ্ব্বক্ষণ আমার সারা দেহ-মন ঘিরিয়া থাকে ; আমার দেশ ! কত বড় দান তুমি আমাকে দিলে, আর আমি কি তোমাকে কিছুই দিতে পারিব না ? ভাবিতে ভাবিতে মনের আবেগে কবিতা লিখিতে লাগিলাম । "ওকি, অমুখ করেছে, তবু শুয়ে-শুয়েই যে লিখছেন, বড় দরকারী বুঝি ?” এই প্রশ্নে সচকিত হইয়া দেখিলাম, মেয়ের লেশ ও স্থত হাতে করিয়া আসিয়াছে। হাসিয়া খাত। বন্ধ করিয়া বিছানার পাশে রাখিলাম । মেয়েটির কৌতুহল ইহাতে নিবৃত্ত হইল না, সে জিজ্ঞাসা করিল, “ও'তে কি লিখছিলেন আপনি ?” “ও কিছু নয়।” “দেখ ব’ বলিয়া সে খাত। খানার পাতা উন্টাইতে লাগিল। খানি কক্ষণ দেখিয়া হাসিয়া বলিল, “ও মা, আপনি কবিতা লিখছিলেন ! দেখুন, এখানেও একটি কবি আছে ; সে লিখতে পারে না, কিন্তু এমনি কথায় কথায় ছড়া কাটে যে, শুনলে অবাক হ’য়ে যাবেন। আমরা তা’কে ‘কবি চণ্ডীদাস’ ব’লে ডাকি । অমুখ সেরে গেলে আপনাকে একদিন তার বাড়ীতে নিয়ে য’ব ।” আর-একটি মেয়ে বুলিল, “থাম্‌! সে হ’ল ছোট লোক, যুগী, তার বড়া উনি কক্ষনে যাবেন না।” প্রথম বলিয়া উঠিল, “মহাত্মা গান্ধী বুঝি “যুগী’ জোলাদের ঘেন্ন করতে তোকে ব’লে গেছেন ? তিনি কি বলেননি যে, যাদেব আমরা ছোট লোক ভাবি, তারা কেউ ছোট লোক নয়, তাদের হাতের জলও খেতে পারা যায় ? তুই চুপ কর ত, তোকে কেউ কথা বলতে ডাকেনি !” দ্বিতীয় নীরব বহিল দেখিয়া আমি “তোমাদের কবিটির কি নাম ? আজ তার কবিত্বের পরিচয়টাই কেন দাও না, কবিতা শুনতে আমি খুব ভালোবাসি। কোথা থাকে সে ?” উৎসাহের সহিত উত্তর হইল, “আপনাদের বাড়ীর পেছনের পুকুরের ওপাড়ে যুগীপাড়া; চণ্ডী ঐখানেই থাকে, সে মহেশ যুগীর বউ । ছোট" জাত হ’লেও ওর। লোক খুব ভ'লো ; আমাদের সেমিজের জন্তে রঙীন কাপড়, ব্লাউজপিস বললে পথেই বুনে দেয়। আর এমন চমৎকার নীলাম্বরী, দাতপাড় তাতের সাড়ী সব বোনে যে, দেখলেই বিনতে ইচ্ছে করে । স্বদেশী হ’য়ে ওদের খুব ভাল হয়েছে।” গল্পীঠের উন্নতির কথা শুনিয়া আমার বড়ই আননা হইল ; মেয়েটির হাতখান ধরিয়া বলিলাম, “আমার যদি অস্ক থ না থাকৃত, তবে আজই সেখানে যেতাম ; ভিন চার দিন পরেই বোধ হচ্ছে যেতে পারব, এখন শুধু কানে শুনেই স্বধী হই । তোমাদের চণ্ডী কবির দু’একটা ছড়া-টড়া ব’ল না, শুনি ; মনে আছে ত ?” - মেয়েটি হাসিয় বলিল, “আছে বই কি, শুস্থান ! বলিলাম,