পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q>も অসীম বলে না। সকল সীমার মধ্যেই তিনি অসীম, এই জষ্ঠ ভক্তগণ সীমায় সীমায় তাহাকে উপলব্ধি করিয়া জানন্দিত হন। অসীম আকাশ আমার গৃহসীমার মধ্যে খও আকাশরুপেই আমার বিশেব প্রিয়—অথচ পরমার্থত সেই আকাশ সীমাধৰ্ম্মী নহে-পরমাকাশ অসীম না হইলে প্রত্যেক গৃহেরই মধ্যে তাহা খণ্ডাকাশ হইতেই পারিত না । তেমনি পরমাত্মা অসীম বলিয়াই প্রত্যেক জীবাত্মায় তিনি বিশেষ,—সেই কারণেই বিশেষ আত্মায় পরমাত্মার সহিত বিশেষ মিলনেই,—সুতরাং সীমাবদ্ধ মিলনেই,— আমাদের আনন্দ । বস্তু ত খৃষ্টান ধৰ্ম্মতত্বের মধ্যে এই তত্ত্বই প্রধান । খৃষ্টানরা ঐতিহাসিক দেশে কালে সীমাবদ্ধ খৃষ্টের মধ্যেই পরম পুরুষের আবির্ভাব উপলব্ধি করিয়া পরিত্রাণ কামনা করেন। ঘনিষ্ঠ আশ্রয় প্রত্যাশায় অনন্ত আকাশকে আমরা গৃহমধ্যে থও আকাশ করিয়া ধরিয়াছি, কিন্তু নিজের সীমার দোষে সেই খণ্ডতাকে আমরা বিকৃত করিতে পারি। আকাশকে একাস্ত অবরুদ্ধ করিয়া কারাগারের আকাশ করা অসম্ভব নহে, তাহাকে আলোকহীন আকাশ করিতে পারি, তাহাকে বিরূপের মধ্যে বদ্ধ করিয়া অমৃদর আকাশ করিতে পারি। কবি তাই তাহার কাব্যে মাঝে মাঝে বলিয়াছেন, “হে আমার জীবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা, তোমাকে কি আমার জীবনের বিকৃতির দ্বারা পীড়িত করিয়াছি । যদি করিয়া থাকি আমার এই জীবনের সীমাকে ভাঙিয়া ফেলিয়া পুনরায় ইহাকে নূতন রূপ দাও।” অর্থাৎ আমার জীবনের সীমার মধ্যে যদি ছন্দের সুষম থাকে, তবে যিনি অসীম তাহাকে স্বম্বর করিয়া সম্পূর্ণ করিয়া আমারই জীবনে প্রকাশ করিতে পারি। সেই প্রকাশেই আমার চরিতার্থতা । আর জীবনে যদি ছন্দের বিকার ঘটে তবে অসীমের প্রকাশ আচ্ছন্ন হয়। এই জীবনদেবতাকে কবি কখনো পুরুষভাবে কখনো স্ত্রীভাবে দেখিয়াছেন। ইহাতেও টমূদনের বুদ্ধি কিছু হচট খাইয়াছে। যেমন গাছের সঙ্গে, পশুর সঙ্গে, মাহুষের সঙ্গে এমন কি অচেতন বিশ্ববস্তুর সঙ্গে পরস্পর নিগূঢ় ঐক্য উপলব্ধি করিতে ভারতীয় বুদ্ধিতে বাধে না, তেমনি ভগবানের স্বৰূপের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ-প্রকৃতিকে প্রবাসী-শ্রাবণ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম ওখ একই সত্যের প্রকাশ বলিয়া অচুভব করিতে সে আতঙ্কিত হয় না। কবিও নিজের জীবনের মধ্যে যে সকল পরম আবির্ভাব, যে সকল নিবিড় রস নানা উপলক্ষ্যে অনুভব করিয়াছেন নিঃসন্দেহেই তাহার মধ্যে কখনো পুরুষের কখনো নারীর ভাব পাইয়াছেন। সেই উভয় ভাবের মধ্যেই আনন্দের অসীমতা। এই জন্যই জীবনদেবতাকে র্তাহার পক্ষে প্রিয়তম বলাও যত সহজ, প্রেয়সী বলাও তত সহজ । এই গেল তত্ত্বের দিকের কথা । কাব্যের রূপ সম্বন্ধে ও যেখানে কথা কহিয়াছেন সেখানেও ইস্কুল-মাষ্টারের জোর গলায় । বাঙালী পাঠকমাত্রেই জানেন কবির লেখা গানগুলি প্রায়ই বারো লাইনের। টম্সন ইহার মধ্যে নিছক কৃত্রিমতার আভাস পাইয়াছেন । কাব্যসমালোচকের মুখে এমন কথা প্রত্যাশাই করা যায় না। কবিমাত্রেই নিজকৃত শাসন নিজের লেখার উপর প্রচার করেন । সেটাতে অধীনতা নাই, সেটাতে কর্তৃত্ব । এই স্বপ্রতিষ্ঠিত শাসনের সীমার দ্বারাই স্বয়ং বিশ্ববিধাতাও স্বষ্টি করেন। তিনি মামুযের দেহে নাকের দুই পাশে দুই চক্ষু, মাথার দুই পাশে দুই কর্ণ, বক্ষের দুই ধারে দুই বাছ, যোজন। করিয়াছেন। করতলের পাঁচ পাঁচ আঙুল দুই হাতে কেবল যে সমান করিয়া গণিয়া দিয়াছেন তাহা নহে, এ-হাতের আঙুলের সঙ্গে ও হাতের আঙুলের আকৃতিও একই রকমের । এই সমস্ত বিচার করিয়া আমার বিশ্বাস টম্সন সাহেবও বলিবেন না যে, নরদেহ রচনা করিবার সময় বিশ্ব কবির প্রতিতা ক্লাস্ত হইয়াছিল, তাই তিনি পুনরাবৃত্তিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন । টমসন সাহেব এই প্রসঙ্গে সনেট কাব্যরূপের চতুর্দশ পদের কোনে উল্লেখ করেন নাই। সনেটের পদশালনসঙ্কীর্ণতায় টমূলন সাহেব কোনো অবজ্ঞ বোধ করেন না। তার কারণ, স্কুলমাষ্টারের কাছে সনেট সুপরিচিত,—কিও স্বাদশপদীর কোনো নজিরের দলিল তাহার জানা নাই। সে কথাও যাক। টমূলন যদি তার ছাত্রমণ্ডলীর বাহিরে অল্পমাত্র অনুসন্ধান করিতেন, তবে খবর পাইতেন যে, আস্থায়ী অস্তর প্রভৃতি ভাগ অনুসারে আমাদের সঙ্গীতের একটা কলেবর বিভাগ আছে। তাছারই অনুসরণ