পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩২ প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩৩৪ [ २१* ठाँ१, ४भ पं७ হইতেই আমি বিদ্রোহী হইয়া উঠিয়াছিলাম। কহিয়াছি, আমাদের শ্রীহট্টের বাসায় প্রতি শনিবারে শনির সেবা হইত। শ্ৰীহট্টে খুব উৎকৃষ্ট কলা পাওয়া যায়। কলা, দুধ, চিনি এবং আতপ চাউল শনির ভোগে লাগিত । সেমিষার ও শুক্রবার শ্রীহট্টে হাটবার ছিল । এই দুই দিন চারিদিকের পল্লী হইতে তরী-তরকারী ফল ও অন্যান্য পণ্য হাটে আসিয়া জমা হইত। প্রতি শুক্রবারের হাট হইতে আমাদের বাসায় শনির সেবার জন্ত যখনকার যে ফল তাহা যত্ব করিয়া কিনিয়া আন হইত। কলা বারমাসই আসিড। একবার শনিবারে পুরোহিত শনির ভোগ সাজাইতে গিয়া কলা পাইলেন না ; চাকরকে ডাকিলেন। সে বলিল, হাট হইতে সে শনির বরাদ্দ কলা কিনিয়া আনিয়া রাখিয়াছিল। মা তখন সহরের বাসায় ছিলেন না, আর মা যখন বাসায় থাকিতেন না, তখনই আমার ভাগ্যে যত অনর্থ ঘাটত। বাবার কাণে শনির কলা নাই, একথাটা গেল। অমনি তিনি মাজেরস্থলে গিয়া অমুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন। চাকরের উপরে তম্বী আরম্ভ হইল। সে কৈফিয়ৎ দিল, কলা সে আনিয়াছিল, সে কল। কি হইয়াছে, এখন সে জানে না। বোধ হয় সে ইহাও ইঙ্গিত করিয়াছিল যে, আমিই শনির সে কলা খাইয়াছি। দেবতার নৈবেদ্যের কলা বা অন্য কোন ফল আমি যে থাইতে পারিতাম না, এমন নহে । এসকল বিষয়ে দেবতার ভয় অপেক্ষ আমার লোভ তখন খুব বেশী হইয়া গিয়াছে। আর হওয়ারই কথা। দুর্গাপুজা বা কালীপূজার সময়ে যে ছাগ-শিশু বলি দিবার জন্ত আনা হইত, বলির পুর্কে যে তাহাদের প্রতি অনেকের লোভ পড়িত না, এমন কথা সাহস করিয়া বলা যায় না। শনির সেবার কলাতে আমার লোভ হয় নাই, এ কল্পনা করি না। বোধ হয় আমিই এই কলা খাইয় ফেলিয়াছিলাম। যাহা হউক, আমিই যে এ অপরাধে অপরাধী, বাবা কথাটা শোনামাত্রই ধরিয়া লইয়াছিলেন, এবং আমি তার সম্মুখে উপস্থিত হইব। মাত্র খড়ম তুলিয়া আমাকে মারিতে যান। আমি এই আক্রমণের মুখে ছুটিয়া পালাইলাম। বাবাওআমার পিছনে পিছনে ছুটিলেন। আমাদের হাতাতেই আমার এক পিসতুত ভাই ছিলেন। আমি একেবারে ছুটিয়া তাহার অন্তঃপুরে বধু ঠাকুরাণীর ঘরে গিয়া ঢুকিলাম। আমাদের অঞ্চলের প্রাচীন হিন্দু আচারে মামাশ্বশুরের পক্ষে ভাগিনেয়-বধুর মুখদর্শন একেবারে নিযিদ্ধ ছিল। ঘটনাক্রমে মামাশ্বশুর ভাগিনেয়-বধুর মুখ দেখিলে তখনই স্বান করিয়া শুদ্ধ হইতে হইত। সুতরাং বাবা আমার পিছনে পিছনে আমার পিসতুত ভাইয়ের অন্তঃপুরে প্রবেশ করিতে পারিলেন না ; আমিও সেদিন তাহার প্রহার হইতে অব্যাহতি পাইলাম। Հb প্রহারের ভয়ে মাচুষের ধৰ্ম্মবিশ্বাস গড়িয়া উঠে না । ভিতরে যার দুষ্কৰ্ম্মের প্রবৃত্তি আছে, সে-প্রবৃত্তিও কখন নষ্ট হয় না। আহারাদির সম্বন্ধ হিন্দুস্থানীর বিধিনিষেধ অামি কোন দিন মানিতাম বলিয়া মনে পড়ে না । যাদের জল চল নাই, তাদের ছোয়া পানীয়ের বা খাদ্যের প্রতি কোন দিন আমার কোন প্রকারের বিতৃষ্ণ ছিল না। অতি শৈশবে এসকল নিষিদ্ধ পাদ্যাদি খাইতাম না। কিন্তু খাইতে 4োল দিন ভিতরে কোন অপ্রবৃত্তি ছিল ন; } একটু বড় হইলে এসকল বিধিনিষেধ অনর্থক বন্ধন বলিয়া মনে হইতে লাগিল। মানুষ যাহাকে ধন্ধন ভাবে, তাহাকে কখনই আন্তরিক শ্রদ্ধা করিতে পারে না। আমিও একটু বড় হুইবার পরে পানাহার সম্বন্ধে প্রচলিত হিন্দুসমাজের ছুংমার্গকে অগ্রাহ করিয়া চলিতে আরম্ভ করি। আমার বাবা এসকল মানিয়া চলিতেন। কিন্তু ইসলাম সাধনার সংস্পর্শে আসিয়া এসকল সম্বন্ধে তাহার কোন সরল শ্রদ্ধা থাকা সম্ভব ছিল কি না, সন্দেহ হয়। আমার মুসলমানের তৈরী লেমনেড খাওয়ার কথা পূৰ্ব্বেই লিখিয়াছি। এই লেমমেড খাইতে আমার মনে কেশাগ্র পরিমাণ দ্বিধ উপস্থিত হয় নাই। বাবার কঠোর শাস্তিতেও মুসলমানের ছোয়া জলের প্রতি আমার অস্তরে বিন্দুমাত্র বিতৃষ্ণার উদয় হয় নাই। কালী দুর্গ প্রভৃতি যখন মানিতাম, প্রাণ খুলিয়া দুর্গোৎসবের সময় পুজার অনুষ্ঠানে যোগ দিতাম ; আৰ্ত্ত হইলে চোখ বুঝিয়া কালীর