পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@bや প্রবাসী—শ্রাবণ, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড উঠেচে । এই যোগ রাজশক্তির দ্বারা স্থাপন করা হয়নি, এই যোগ উদ্যত তরবারীর জোরেও নয়—এই যোগ কাউকে দুঃখ দিয়ে নয়, নিজে দুঃখস্বীকার করে। অত্যন্ত পরের মধ্যেও যে-সত্যের বলে অত্যন্ত আত্মীয়তা স্বীকার করা সম্ভব হয় সেই সত্যের জোরেই চীনের সঙ্গে সত্য ভারতের চিরকালের যোগবন্ধন বাধা হয়েচে । এই সত্যের কথা বিদেশী পলিটিকৃসের ইতিহাসে স্থান পায়নি ব’লে আমরা একে অস্তরের সঙ্গে বিশ্বাস করিনে । কিন্তু এ'কে বিশ্বাস করবার প্রমাণ ভারতের বাইরে হুদুর দেশে আজও রয়ে গেছে । জাপানে প্রতিদিনের ব্যবহারে জাপানীর স্থগভীর ধৈর্য্য, আত্মসংযম, তার রসবোধের বিচিত্র পরিচয়ে যখন বিস্থিত হতেছিলাম তখন একথা কতবার শুনেছি যে, এইসকল গুণের প্রেরণা অনেকখানি বৌদ্ধধর্মের যোগে ভারতবর্ষ থেকে এসেচে। সেই মূল প্রেরণা স্বয়ং ভারতবর্ষ থেকে আজ লুপ্তপ্রায় হ’ল । সত্যের যে-বন্ত একদিন ভারতবর্ষের দুইকুল উপচিয়ে দেশে দেশে বয়ে গিয়েছিল, ভারতবর্ষের প্রবাহিনীতে আজ ত তলায় নেমে আসচে, কিন্তু তার জল-সঞ্চয় আজো দুরের নানা জলাশয়ে গভীর হয়ে আছে। এই কারণেই, সেইসকল জায়গা আধুনিক ভারতবাসীর পক্ষে তীর্থস্থান। কেননা ভারতবর্ষের ধ্রুব পরিচয় সেইসব জায়গাতেই । মধ্যযুগে মুসলমান রাজশক্তির সঙ্গে হিন্দুদের ধৰ্ম্মবিরোধ ঘটেছিল। সেইসময়ে ধারাবাহিকভাবে এমন সকল সাধু-সাধকদের জন্ম হয়েছিল—তাদের মধ্যে অনেকে মুসলমান ছিলেন—যারা আত্মীয়তার সত্যের দ্বারা ধৰ্ম্মবিরোধের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে বসেছিলেন। তারা পোলিটিশান ছিলেন না, প্রয়োজন-মুলক পোলিটিকাল ঐক্যকে তারা সত্য ব’লে কল্পনাও করেননি। তারা একেবারে সেই গোড়ায় গিয়েছিলেন যেখানে সকল মানুষের মিলনের প্রতিষ্ঠ ধ্রুব। অর্থাৎ তারা ভারতের সেই মন্ত্রই গ্রহণ করেছিলেন যাতে আছে, যারা সকলকে আপনার মধ্যে এক ক’রে দেখে তারাই সত্য দেখে । তখনকার দিনের অনেক যোদ্ধা অনেক লড়াই করেচে, বিদেশী ছাচেঢালা ইতিহাসে তাদেরই নাম ও কীৰ্ত্তি লিখিত হয়েচে। সেসব যোদ্ধারা আজ তাদের ক্লভ কীৰ্ত্তিস্তম্ভের ভয়শেষ ধূলিস্তুপের মধ্যে মিশিয়ে আছেন—কিন্তু আজো ভারতের প্রাণ-স্রোতের মধ্যে সেইসকল সাধকের অমর বাণী-ধারা প্রবাহিত আছে। সেখান থেকে আমাদের প্রাণের প্রেরণা যদি আমরা নিতে পারি তাহ’লে তারি জোরে আমাদের রাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি কৰ্ম্মনীতি সবই বল পেয়ে উঠতে পারে। সত্যবাণী যখন আমাদের প্রাণকে গভীর ভাবে উদ্বোধিত করে তখন সেই প্রাণ সকল দিকেই নিজের প্রকাশকে সার্থক করে। তখন সেই প্রাণ স্বষ্টির উদ্যমে পূর্ণ হ’য়ে ওঠে। চিত্তের উপর সত্যের সংঘাতের প্রমাণ হচ্ছে এই স্বাষ্ট্র-শক্তির সচেষ্টতা । Wh বৌদ্ধধৰ্ম্ম সন্ন্যাসীর ধৰ্ম্ম । কিন্তু তা সত্ত্বেও যখন দেখি তারই প্রবর্তনীয় গুহা-গহবরে চৈতাবিহারে বিপুল শক্তিসাধ্য শিল্পকলা অপৰ্য্যাপ্ত প্রকাশ পেয়ে গেছে, তখন বুঝতে পারি বৌদ্ধধৰ্ম্ম মানুষের অন্তরতম মনে এমন একটি সত্যবোধ জাগিয়েচে বা তার সমস্ত প্রকৃতিকে সফল করেচে, যা তার-স্বভাবকে পঙ্গু করেনি। ভারতের বাহিরে ভারতবর্ষ যেখানে তার মৈত্রীর সোনার-কাঠি দিয়ে স্পর্শ করেচে সেখানেই শিল্পকলার কি প্রভূত ও পরমাশ্চর্য্য বিকাশ হয়েচে । শিল্পস্থষ্টি-মহিমায় সে-সকল দেশ মহিমান্বিত হ’য়ে উঠেচে । অথচ সেখানকার লোকের সমজাতীয়দের দেখ, দেখবে তারা নরঘাতক, তারা শিল্পসম্পদহীন । এমন সকল নিরালোক চিত্তে আলো জালুলে দাধৰ্ম্ম ত্যাগধৰ্ম্ম মৈত্রীধৰ্ম্মের মহতী বাণীর দ্বারা । সেখানকার লোকে সামান্ত বেশভূয ভাষার পরিবর্তনের দ্বারা স্বাতন্ত্র্য পেয়েচে তা নয় ; স্বাক্ট করুবার স্বপ্তশক্তি তাদের মধ্যে জাগ্রভ হয়েছে—সে কি পরমাদ্ভূত স্বাক্ট । এইসকল দ্বীপেরই আশে পাশে আরো তো অনেক দ্বীপ আছে সেখানে আমরা বরবুদর” দেখিনে কেন, সে-সব জায়গায় আস্করবট-এর সমতুল্য বা সমজাতীয় কিছু নেই কেন ? সত্যের জাগরণ-মন্ত্র যে সেখানে পৌছায়নি। মাকুযকে অনুকরণে প্রস্তুত্ত করার মধ্যে গৌরব নেই, কিন্তু মামুষের স্বপ্ত শক্তিকে যুক্তিদান করার মতে এতবড়ো গৌরবের কথা আর কি কিছু আছে ? ... o.