পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] ঘটনার চেয়ে বাক্য সম্বন্ধে একথা আরো বেশি খাটে। জামাদের প্রত্যেকেরই নিজের ভাবার বিশেষত্ব আছে। জামাদের নিজের ভাববার বিশেষত্ব অনুসারেই সেই ভাষার গড়ন তৈরি হয়। আর-একজনের চিস্তাকে সেই ভাষার মধ্যে প্যাকু করতে গেলে তার চিস্তার গড়ন ঠিক থাকে না। কেউ কেউ হয়ত ভাব তে পারেন যে, চিন্তার বস্তুটাই আসল, তার গড়নটা কিছু নয়, আমি তা একেবারেই মনে করি না । চিস্তার প্রধান প্রকাশ চিস্তার আকৃতি স্বারা। সকল সজীব পদার্থই আপনার আকৃতি-ক্ষেত্রেই আপনার পরিচয় দিয়ে থাকে । সেই আকৃতি কেবল বাহ্যিক নয়, তার একটা আভ্যস্তরিক দিক আছে। অর্থাৎ আমি যেসব চিন্তা প্রকাশ করি তার চেহার কেবল যে ভাষায় তা নয়, তার প্রকৃতিগত স্বরূপের মধ্যেও । অর্থাৎ, আমার চিন্তা যে-ভাবে ঝোক দেয়, তার যে-সব ইসারা ইঙ্গিত, ভাযকে সহজে সে যেরকম ক’রে সাজায় সেটার দ্বারা সে একটা জাস্তরিক রূপ পায়। এই স্কুয়ের ধোগে তবে তার যথার্থ প্রকাশ হ’য়ে থাকে। স্মৃতি থেকে আমার বাহ্য মূৰ্ত্তি আকৃতে গেলে অল্প পরিমাণেও আমার নাকচোখের এদিক-ওদিক হ’য়ে গেলেই সেটাকে আর আমার চেহারা বলবার জো থাকে না। চিস্তারও তেমনি অতি শূন্ম বদলেও তার এমনি গভীর বদল ঘটে যে, কেবল মাত্র বস্তু-বিচার ক’রে তার নীচেআর নিজের নাম সই ক’রে দেওয়া চলে না । অনেক আলাপের প্রসঙ্গ আছে যার গুরুত্ব তেমন নেই ; যার বিষয়টা মোটামুটিই কোন একরকমে ব্যক্ত হ’লেই চলে, এমনকি যার সম্বন্ধে ভুল করলেও বিশেব কিছু আসে যায় না। কিন্তু যে আলাপটির ভূমিকা লিখছি সেট। তেমন জাতের নয়। এই প্রসঙ্গ সম্বন্ধে লোকের মতামত প্রবল, সেইজন্তেই যেটা বলচি সেটাকে ঠিকমত শোল্বার পক্ষে লোকের মনের মধ্যেই বাধা আছে। এই কারণে, এই বিষয়ট। যে-মানুষ চিন্তা করেচে সেই মানুষই নিজের ভাষায় সেটা ব্যক্ত করলে বিপদ কিছু পরিমাণে বঁাচে । দিলীপকুমারের একটি মন্ত গুণ আছে, তিনি শুনতে চান, এইজন্তেই শোনুবার জিনিব তিনি টেনে আনতে আলাপ-আলোচনা \లి) পারেন। শুনতে চাওয়াট। অকৰ্ম্মক পদার্থ নয়, সেটা সকৰ্ম্মক । তার একটা নিজের শক্তি আছে, বলবার শক্তিকে সে উদ্বোধিত করে। যে-মানুষ বলে তার পক্ষে সে বড় কম স্থযোগ নয় । কেননা, বলার দ্বারাই আপন মনের সঙ্গে আমাদের সত্যকার পরিচয় হয়। দিলীপকুমার অনেক সময়ে আমাকে এই আত্ম-চিস্ত আবিষ্কারের আনন্দ দিয়েছেন । যখন তাকে কথা শুনিয়েচি তখন বস্তুত সে-কথা আপনিই শুনেচি । বিশেষ প্রসঙ্গ নিয়ে ঘরে বসে প্রবন্ধ লেখবার সময় এই ব্যক্তিগত আহানের দাবীট স্পষ্ট ক’রে থাকে না ব’লেই সব কথা বলা হয় না এবং বলা হয়নি ব’লে নিজেই জানতে পারিনে। এইজন্য দিলীপ যখন আমাকে কথা কইয়েচেন তথন শ্রোতা-রূপে আমার নিজের কাজ হ’য়ে গেচে । আজ তিনি এইটেকে অন্তেয় শ্রুতিগোচর করতে চান। এইখানে আমি উদ্বিগ্ন । নিজের কথা আমি নিজে যেরকম শুনেচি লেখায় সেট। আর একরকম শুনচি । আমার রচনারীতি থেকে দিলীপকুমারের রচনারীতি স্বতন্ত্র প্রকারের ব’লেই যে সেটা ঘটুচে তা নয়—স্থতি জিনিষটা সজীব সচল ব’লেই স্বভাবতই বাণীর বিপৰ্য্যয় ঘটে। বস্তুত আমাদের স্মৃতির অনেকটা অংশই বিস্মৃতি। মন আপন শক্তিকে ভারাক্রাস্ত করতে অনিচ্ছুক, কেবলি তাকে চলতে হয় ব’লেই ফেলতে হয়। তাতে মোটামুটি সংসারের কাজ ভাগই চলে, কিন্তু প্রতিলিখনের কাজটার সঙ্গে মনের এই অভ্যাস ভাল নয় । এই কথা ভেবে নিজের কথা আবার নিজেকে দিয়ে বলিয়ে নিলুম। সেদিন ঠিক যে কথাগুলি বলেছিলুম তাকে অনুলিথিত করা শক্ত । একেতো মনে নেই, দ্বিতীয়তঃ কথাগুলি যে-পরিবেষ্টনের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল সেই পরিবেষ্টনটি শুদ্ধ ভাষায় তুলে দিতে যে সময়ের দরকার তা আমার হাতে একেবারেই নেই । সমাজে নারীশক্তির প্রভাৰ ৪ঠা এপ্রিল ১৯২৬ সাল। ফাত্তনের সন্ধ্যা । একটু চুপ ক’রে থেকে কবি জামাকে বললেন— “পূৰ্ব্ববঙ্গে এবার আগরতল থেকে ডোমায় সেদিন