পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] আলাপ-আলোচনা Wණ්ථ দোষ নেই তাদের আবেগের সঞ্চয়ট ক্ষয় হয় না, হয়তো বয়সের সঙ্গে তার ব্যবহারটা ক’মে আসে ।” আমি বললাম, “কি রকম ?” কবি বললেন, “শিশুর প্রধান কাজ হচ্ছে বাহ্য বস্তু সম্বন্ধে ধারণা সঞ্চয় করা। বিচার ক’রে অর্জন করা তার কাজ নয়। আবেগের চঞ্চলতা তার মনকে জানবার বিষয়ের উপরে আছড়ে আছড়ে ফেলতে থাকে। যে-সব জানা কেবল মাত্র বোধ-পটের ছাপ, যাকে বলে ইম্প্রেশন, এই রকম বেগের চোটে তাদের দেগে তার কাজ চলতে থাকে। জীবনের অসংখ্য অত্যাবশ্যক পরিচয়ের বিষয় কেবল ইম্প্রেশনের রেখায় রেখায় চিত্তফলকে অঙ্কিত। বয়স যখন বেশী হয় তখন বুদ্ধির এই প্রাথমিক আহরণ ব্যাপার অনেকটা সাঙ্গ হ’য়ে আসে । তখনকার অভিজ্ঞতা অন্তরতর অভিজ্ঞতা। তখন প্রধানত যাচাই করবার বাছাই করবার কাজ, তখন বাইরের বোধের কাজটা গৌণ হয়, ভিতরের বুদ্ধির কাজটা মুখ্য হ’য়ে ওঠে। তখন শোষণ ক'রে পান করা নয়, চৰ্ব্বণ ক’রে আহার করা ।” আমি বললাম, “সেটাতে কি কোন ক্ষতি নেই ?” কবি বললেন, “ইম্প্রেশন গ্রহণ করবার যে সহজ সচেতন শক্তি, বিশ্লেষণী-বুদ্ধির একান্ত চর্চায় যারা সেটা হারিয়ে ফেলে তার দুর্ভাগ্য । জীবনে যতদিন বৃদ্ধির কাজ আছে তত দিন তার মধ্যে শিশুর শক্তি আছে, বৃদ্ধির কাজ বন্ধ হ'লেই তখন মরণ-দশ আসে, শিশুর প্রকৃতিদত্ত পাথেয় তথনি নিঃশেব হয়। যাদের চিত্তফলক শুকিয়ে কঠিন হয়েচে, বোধের ছাপ সহজে নেয় ন, তারা আপন ভাবনাকে নিয়ে ইটের মতো ইমারং গাথতে পারে, কিন্তু তাকে নিয়ে মূৰ্ত্তি গড়তে পারে না।” আমি বললাম,“কিন্তু কবির ক্ষেত্রে তো দেখা যায় যে, তারা জীবনের শেব অবধি হৃদয়াবেগের তারুণ্য বজায় রাখতে সক্ষম হন ?” কবি বললেন, “ঐখানেই তো কবির সঙ্কট। স্বভাবের নিয়মে ধে-বয়সে আবেগের একাধিপত্য, সে-বরলট কেটে গেলেও যদি তারি হাতে জীনটাকে সম্পূর্ণ সপে রাখা হয় তবে সেটাতে লজ্জাও যেমন বিপদও তেমনি । বিধাতা ষার প্রতি সদয় তিনি তার মধ্যে নবীনকে বচোন, প্রবীণকেও সমাদর করেন। তার চিত্তক্ষেত্রে জল ও স্বল দুইয়েরই ব্যবস্থা থাকে, তাজ মন নিয়ে সে ধারণ করতে পারে, পাকা মন নিয়ে তার ভাবনা /* আমি বললাম, "আর একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা ’’--sfH چxts stچ কবি বললেন, “ব’ল না, অত কুষ্ঠা কেন ?” আমি বললাম, “বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আবেগ উচ্ছ্বাসের যেটুকুও অবশিষ্ট থাকে সেটুকুও প্রকাশ করতে আমরা উত্তরোত্তর সঙ্কুচিত হ’য়ে পড়ি কেন ? অল্প বয়সে যে-সব উচ্ছাস প্রকাশ করতে এতটুকুও বাধে না, বয়সের অনুপাতে সে-সব উচ্ছ্বাস কেন আমাদের উত্তরোত্তর বিব্রতই ক’রে তুলতে থাকে অনেক সমরে ঠিক বুঝতে পারি না। কারণ, আমার প্রায়ই মনে হয় যে, উচ্ছ্বাস আবেগ আন্তরিক হ’লে তার প্রকাশে আমাদের সঙ্কোচ হওয়া উচিত নয়।” কবি বললেন, “পরিণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বিচার-বুদ্ধির কাজ যখন সম্পূর্ণ আরম্ভ না হয়েছে তখন আবেগকে আমরা অসঙ্গত পরিমাণে বিশ্বাস করি। আমার ভালো লাগচে কিম্বা লাগচে না এইটেকেই আমরা যুক্তির জায়গায় বলাই । ক্রমে দেখতে পাওয়া যায়, হৃদয়াবেগ সংসারে আমাদের অনেক ঠকান্‌ ঠকায় । এইজন্তে বয়ঃপ্রাপ্ত মানুষ আপন আত্মপরিচয়ে সেইটেকে প্রাধান্ত দিতে সঙ্কুচিত হয়। অন্তত সে এটা জানে যে, তার আবেগের উপলব্ধিকে কেউ যদি অবিশ্বাস করে তবে কোনো উপায় নেই। শুধু তাই নয়, ষে-জিনিষটার প্রমাণ যুক্তির অধীন সেটা আমারও যেমন তোমাঞ্চও তেমনি । সেখানে আমার উপলব্ধি নিয়ে তোমার উপরে জোর খাটাতে পারি। কিন্তু অধিকাংশ স্থলে আমার আবেগের জিনিব আমার একান্ত ব্যক্তিগত— সেখানে ইচ্ছা কবুলেও আর কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এই জন্যেই হৃদয়াবেগেও একটি গোপনীয়তা অাছে। ভার নিজের রাজ্যে সে যতবড়ই হোক তার এলাকার বাইরে তাকে মুকুট পরাতে গেলে তার অপমানেরই সম্ভাবনা ।” আমি বললাম, “কাব্যে তো কবির হৃদয়াবেগ সকলের কাছে প্রকাপ্ত * - কৰি বললেন, "কখনই না। মােট প্রকাগু সেট।