পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७ ?२ প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৪ { ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড —আমরা সকলেই তাহার রায়ে রায় দিলাম। আমাদের সম্মতি পাইয়। বাবা বরের খুল্লতাতকে লিখিলেন যে, ২২শে অগ্রহায়ণের মধ্যে যদি তাহারা বিবাহের দিন স্থির করেন এবং ব্যবস্থা করিতে পারেন, তবে তিনি তাহার ভ্রাতু পুত্রকে আপনার কন্যা সম্প্রদন করিতে রাজী আছেন। পাইকের হাতে অমনি এই চিঠি গেল। সেদিন বোধ হয় ৯ই কি ১০ই আগ্রহায়ণ। এই চিঠি যাওয়ার পরেই আমাদের সকলের মাথায় যেন আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল । আমাদের কারই ইচ্ছা নয় যে, এখানে বিবাহ হয়। কারণ বরটি শ্রীহট্ট এবং কাছাড় দুই জেলাতেই বদ্ধ মাতাল বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন। বাবার মুখের উপরে র্তাহার ইচ্ছার প্রতিরোধ করিতে আমাদের সাহস হয় নাই । এখন সকলে মাথায় হাত দিয়া বসিলাম । বরকে কাছাড় হইতে আসিতে হইবে, কৰ্ম্ম হইতে ছুটি লইয়া । যদি কোন হেতুতে ২২শে তারিখের মধ্যে না আসিয়া পৌছিতে পারেন, তবেই সকল দিক রক্ষা পায়। বরের খুল্লতাত মহাশয় বাবার চিঠির জবাবে ২২শে অগ্রহায়ণই বিবাহের দিন ঠিক করিলেন, এবং বরকে তথষ্ট ছুটী লইয়া বাড়ী আসিবার জন্য টেলিগ্রাম করিয়াছেন এ কথা জানাইলেন। তখন আমরা অনন্তোপায় হইয়। আরেকটা টেলিগ্রাম জাল করিয়া বরকে তখনই ছুটী লইয়া আসিতে বারণ করিব স্থির করিলাম। সে জাল তার লেখা হইয়াছিল মনে পড়ে, কিন্তু পাঠান হুইয়াছিল কিনা মনে পড়ে না । *পানেথিলির” দিন ধাৰ্য্য হইল। নিৰ্দ্ধারিত দিনে বিবাহের এই পূৰ্ব্ববৃত্ত অনুষ্ঠান সব হইল । বাড়ীতে আবার নহবৎ বসিল । গ্রামের আত্মীয় স্বজনে ও নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণ ভদ্রলোকে আমাদের বাহিরবাড়ী ভরিয়া গেল । পুরস্ত্রীরা অন্তঃপুরে আসিয়া জড় হইতে লাগিলেন। ইতিপূৰ্ব্বেই ভবিষ্যৎ জামাতার অনেক কীৰ্ত্তিকথা নান লোকের মুখে মায়ের কানে পৌছিয়াছিল। আমাদের গ্রামের অনেক ভদ্র এবং ভূত্যশ্রেণীর লোকেরা কাছাড়ে চাকুরী করিতেন, তারা বরের স্বভাব-চরিত্রের কথা জানিতেন। তাহদের কেহ কেহ এই সময়ে গ্রামের বাড়ীতে ছিলেন । ইহাদের কারও কারও মুখে সে সকল কথা আমাদের অন্তঃপুরে মায়ের কানে পৌঁছিল। যে-দিন হইতে মা এই প্রস্তাবে সম্মতি দেন সেই দিন হইতেই র্তাহার আহার-নিদ্রা একরূপ বন্ধ ছিল । এই ‘পানেখিলি’র দিন প্রাতে তিনি আর আপনাকে চাপিয়া রাখিতে পারিলেন না। বাহিরে যখন নহবৎ বাজিতেছে, লোকসমাগমে বহিৰ্ব্বাট কোলাহলময় হইয়া উঠিয়াছে, অন্তঃপুরে পুংস্ত্রীরা আসিয়া জুটিয়াছেন, সেই সময়ে ম চীৎকার করিয়া ‘মড়াকান্ন। জুড়িয়া দিলেন। একথান। বঁটি সম্মুখে রাখিয়া কহিতে লাগিলেন যে, এই পাত্রে কন্যার বিবাহ দিবার পূৰ্ব্বে, কন্যাকে আপনি হত্যা করিয়া নিজে আত্মঘাতী হইবেন । বাবা মহাসঙ্কটে পড়িলেন। একদিকে কথা দিয়াছেন । আর সমগ্র দেশের লোকে জানিত র্তাহার কথা কখনও টলে না। অন্যদিকে মার এই সাংঘাতিক আপত্তি। মার সম্মতি ব্যতিরেকে এই শুভকৰ্ম্মের সূত্রপাত হইতেই পারে না। কোন পারিবারিক ব্যাপারে পতি পত্নীকে উপেক্ষা করিয়া চলিতে পারেন না —এষো ধৰ্ম্ম: সনাতন:—বাবার ইহাই আদর্শ ছিল। সুতরাং তার নিজের কথা থাকুক বা যাক তার মানই থাকুক বা অপমানই হউক-কন্যার বিবাহ-ব্যাপারে বাবা সহধৰ্ম্মিণীর এই ঘোরতর আপত্তি কিছুতেই অগ্রাহ করিতে পারিলেন না । মৰ্ম্মম্ভুদ উৎকণ্ঠায় একবার অন্তঃপুরে ও একবার বহিৰ্ব্বাটীতে যাতায়াত করিতে লাগিলেন । তাহার এই নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণা দেখিয়া আমরা সকলেই অস্থির হইয়া উঠিলাম। অবশেষে আমি মার কাছে যাইয়া তাকে বুঝাইয় বগিলাম যে, এতটা পাক কথার পরে এই বিবাহও যদি ভাঙ্গিয়া দিতে হয়, বাবা এ আত্মগ্লানি কিছুতেই সহিতে পারিবেন না। এ আঘাতে তাহার জীবন-সংশয় উপস্থিত হইবে। আমার তখন সেইরূপ ধারণাই হইয়াছিল । ম আমার কথা শুনিয়া কহিলেন,—“অণর করিব কি—কপালে যাহা ছিল ডাহাই হউক। বল গিয়া “পানেখিলি’ দিতে ।” অামি বাবাকে আসিয়া সে-কথা বলার পর বিবাহের এই প্রাথমিক মঙ্গলাকুষ্ঠান হইল। এইরূপে বিষাদের ছায়াতলে আমার ভগিনীর বিবাহ হইয়া গেল । বরের রূপ কমাপের মত ছিল। তথনকার হিসাবে লেখাপড়াও বেশ জানিতেন। স্ব ভাবচরিত্রও অন্যান্য হিসাবে একরূপ নিষ্কলঙ্ক ছিল ।