পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] সত্তর বৎসর Ꮤ©Ꮔ করিতে যাহারা আসিডেন র্তা গরাও একরূপ পরিবারপরিজনের নিকট হইতে চিরবিদায় লইয়াই আসিতেন । কলিকাতা সেকালে বিস্তুচিকার একরূপ নিত্যবিলাসভূমিই হইয়াছিল। আমি যখন প্রথম কলিকাত যাত্রা করি তখন কলিকাতা শ্রীহট্টের অনেক কাছে যাইয়াছে। রেল হয় নাই বটে, কিন্তু মাসে দুবার করিয়া শ্ৰীহট্ট হইতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় এবং সপ্তাহে দুবার কkিয় ঢাকা হইতে গোয়ালনে ষ্টীমার ( Steamer ) চলিতে আরম্ভ করিয়াছে। এই ষ্টীমারেই আমি শ্ৰীঃট হইতে গোয়ালন্দ পৰ্য্যস্ত আসিয়াছিলাম । প্রথম যখন শ্ৰীচট্টের নদীতে জাহাজ যায় তখন আমি শ্ৰীহট্ট স্কুলে পড়ি, সেকথা পূর্বেই কহিয়াছি। কিন্তু জাহাজে চড়িয়া বিদেশযাত্রা আমার এই প্রথম । শীতকালে জল শুকাইয়া যায়ু বলিয়া শ্ৰীহট্ট পৰ্য্যস্ত এসকল জাহাজ যাতায়াত করিত না । শ্ৰীষ্টটের প্রায় দশ ক্রোশ নীচে ছাতক পর্যন্তই জাহাজ যাইত । এসকল জাহাজে যাত্রীর জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না। মাল বোঝাই হইয়াই আসা-যাওয়া করিত। শ্রীহট্টে ও কাছাড়ে নূতন চায়ের কারবার খুলিয়াছে। এই চায়ের ব্যবসায়ের প্রয়োজনেই বিশেষভাবে এসকল জাহাঙ্গ প্রথম আমাদের ক্রমে আলু দ্য মালও জাহাজ বোঝাই করিয়া কলিকাতার দিকে আসে । শ্ৰী ট্টের নিকটের পাহাড় অঞ্চলে প্রচুর তেজপাতার গাছ চিল ; চায়ের সঙ্গে-সঙ্গে এই তেজপাতাও শ্ৰী:ট হইতে রপ্তানী হয়। শ্রী ট্টে নারিকেল জন্মায় না বলিলেও চলে । কিন্তু সৰ্ব্বত্রই প্রচুর সুপারী উৎপন্ন হয়। এই স্বপারীও জাহাজে করিয়া রপ্তানী হইতে আরম্ভ করে । আমি যখন প্রথম কলিকাতায় আসি সে-সময়ে থাসীয় পাগড় হইতে নানা জাতীয় অর্কিড (Orchid) সংগৃহীত হইয়। কলিকাতায় চালান হইতে আরম্ভ করে। এ ছাড়া ঐহাটুর সংলগ্ন চেরাপুঞ্জী পাহাড়ে পাখরিয়া চুণ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই চুণ বেশীরভাগই বড় বড় নৌকা বোঝাই হইয়। কলিকাতায় আসিত - কিয়ংপরিমাণে জাহাজেও আসিত। এই মালজাহাজ চড়িয়াই আমি সৰ্ব্বপ্রথমে কলিকাতা রওয়ানা হই । অঞ্চলে যাতায়াত অগ্রস্ত করে । শ্ৰীহট্ট সঙ্কর হইতে ছাতক প্রায় কুড়ি মাইলের পথ । এই কুড়ি মাইল ঘোড়ায় চড়িয়া আসিয়া ছাতকে জাহাজে চাপি । শ্ৰীযুক্ত সুন্দরীমোহন দাসের বাড়ী শ্রীহট্ট হইতে ছাতকের পথে পড়ে। শীতের ছুটতে স্বন্দরীমোহন বাড়ী গিয়াছিলেন । র্তাহারই একসঙ্গে আমি কলিকাতায় আসিব, বাবা এই ব্যবস্থা করিয়াছিলেন । একদিন পৌষমাসের পূর্বাহে বেলা দশটার সময় যথাবিহিত মাঙ্গলিক অকুণ্ঠান করিয়া আমি স্বদুর প্রবাসে শুভযাত্রা করি। যাত্রার মন্ত্রটা আজিও স্কুল নাই। বাসগৃহের দরজায় আসন পাতিয়া মঙ্গলঘটের সামনে নবধৌত বস্ত্র পরিধান করিয়া বসিতে হইয়াছিল। সম্মুখে একখানা থালায় ধান, দুৰ্ব্ব, ফুলের মালা, দধি, মধু, একটা টাকা রাখা হইয়াছিল । পুরোহিত পাশে বসিয়া মন্ত্র পড়াইলেন— “দ্বিজ-ৰূপ-গণিক, পুষ্পমালা পতাকা সদ্যমাংসমৃ স্ব স্থং বা দধি-মধু-র জুতং কাঞ্চনং শুক্লধান্তং দৃষ্ট, শ্ৰুত্বা, পঠিত্ব বা ফলমিহ লভতে মানবঃ গন্তুকাম?” এই মন্ত্র পাঠ করিয়া যে মাক দিয়া নিশ্বাস পড়ে সেই প। আগে বাড়াইয়া দুর্গ। দুর্গ বলিয়া ঘরের বাহির হইলাম মা অন্দর হইতে বাহির বাড়ী যাইবার পথে আসিয়া মঙ্গলচণ্ডীর “খিলি’ হাতে লইয়া দাড়াইয়াছিলেন । আমার উত্তরীয়ের কোণে সেই খিলি বাfধয়া দিলেন । তার পর মাটীতে একটু থুথু ফেন্সিয়া বঁ। পায়ের বড়ে আঙ্গুল দিয়া সেই থুথু ঘসিয়া বঁ হাতের বড়ে ভাঙ্গুল দিয়া তাই তুলিয়া লইয়া আমার কপালে টপ কাটিয়া দিলেন। তখন আমি তার পায়ে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিয়া বাড়ীর বাহির হইলাম । মা কেবল আমার ভবিষ্যৎ মঙ্গলকামনায় একমাত্র পুত্রকে বহুবিপদসঙ্কুল বিদেশে পাঠাইয়াছিলেন। উার ভিতরে কি কঠোর সংগ্রাম চলিতেছিল তখন তার ইঙ্গিতম্যত্রও পাই নাই। প্রথম বিদেশযাত্রার কুতুহলে আমার মন ভরপুর হইয়াছিল, সুতরাং বাবা মাকে ছাড়িয়া