পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

❖ጫ8 প্রবাসী—ভাদ্র, ১৪৫৪ [ २१* छां★, »म थ७ টের পেলুম। রাজমহেন্দ্রীতে দুশো আন্দাজ কলেজের ছাত্র এসে হাজির ৷ এরা সকলেই কাগজে কবির যাত্রার তারিখ সম্বন্ধে ভুল খবর পড়ে আগের দিনেও ষ্টেশনে এসেছিল। অনেক লোকের ভীড়ের মধ্যে একটি সাদাসিধে ধঃণের লোক জানালা দিয়ে কবিকে একটি লেবু, একটি কাঠের উপর রঙকর একাধারে ফুলদানী আর ধূপদানী,—তাতে কিছু ফুল আর কিছু দক্ষিণী ধূপ জালিয়ে দেওয়া আছে—আর একটি রঙীন কাঠের নলে ক'রে ধূপ দিয়ে নীরব ভাষায় কবির প্রতি প্রতি জানিয়ে নমস্কার ক'রে ভীড়ের মধ্যে মিশে চ’লে গেল। কবির এই অজ্ঞাত ভক্তের এইরকম নির্বাঞ্চ অনাড়ম্বর বাহউচ্ছাসবিহীন শ্রদ্ধা-নিবেদনটি আমাদের বড় ভালে লাগল। রাজমহেশ্রী গোদাবরীর উপর । গোদাবরী হচ্ছে দক্ষিণের গঙ্গা । মাহাঝে গঙ্গার চেয়েও বেশী তো কম নয়। এখানে স্নান ক’রলে বিশেষ পুণ্য সঞ্চয় হয়। রাজমহেন্দ্রীতে নেমে একদিন থেকে স্বান করবার জন্য বিশুদ্ধংস্কৃত-বহুল তেলুগু ভাষায় (যার আশয় বুঝতে আমাদের বিশেষ কষ্ট হ’ল না ) অকুরোধ এল এক পাণ্ডার কাছ থেকে। লোকটি সরেও না, আর তার সঙ্গের কলেজের ছাত্রেরাও তার কথায় সায় দিয়ে মাদ্রাজী কায়দায় মাথা নাড়ে, আর ইংরেজিতে বলে—“আপনি দয়া ক’রে নামুন, এখানে থাকুন একদিন । আমাদের কিছু বলুন—এ স্থানটি কাশীর চেয়েও বড় পুণ্যক্ষেত্র—এখানে তে। আপনি কখনও আসেননি।” রাজমহেশ্রীতে নাম অসম্ভব তা বুঝিয়ে বলা গেল। তখন তারা বলে, “তাহ’লে কবি আমাদের কিছু উপদেশ দিন—কোনও message বা বাণী বলুন—” তার বক্তব্য যা বলবার তিনি অন্যত্র বলে আসছেন । হঠাৎ ষ্টেশনে দাড়িয়ে পলিটিক্যাল সর্দারের মতন দুমিনিটের দাড়া বক্তৃভা দেওয়া তার ধাতে সয় না, এ-কথা বগা গেল। পাগুটি কিন্তু নাছোড়বানা—জানালা ধ’রে দাড়িয়ে তার তেলুগু গোদাবরী-মাহাত্মা শোনাতে লাগল। দামি এগিয়ে গিয়ে আমার "বৈয়া” (অর্থাৎ বি-এ ক্লাস পর্যাপ্ত পড়) সংস্কৃত নিয়ে তার উপর চড়াও হ’লুম—“যা ব’লতে চাচ্ছ বাপুহে, সংস্কৃতে বল, আমরা তোমার ভাষা -বুঝি না-সংস্কৃত জানো না দেখছি,তীর্থগুরু হ’তে এসেছে, ংস্কৃত জানোনা ?” পাও! সংস্কৃত জানে না, খালি তেলুগু জানে, এই কথা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথের মত অত বড় যজমান পাকুড়াবার আশা নেই দেখে, আর পিছনের ছেলেদের ধাক্কাথুকিতে সরে গেল। ছেলেরা এসেছিল নিজেরাই, এদের বড়োর তেমন কিছু সংবৰ্দ্ধনার ব্যবস্থা ক’রে উঠতে পারেননি। গাড়ী ছাড়বার সময়ে “রবীন্দ্রনাথ কী জয়” আর "বন্ধে মাতরম" ধ্বনি উঠ ল । রাজমহেন্দ্রীর পরেই গোদাবরী নদীর প্রশস্ত হৃদয়— আর লম্বা রেলের সাকে । তখন সন্ধ্যা হ’ল প্রায় । মেঘের আড়ালে স্বৰ্য্য অস্তে যাচ্ছেন। ঘোলা জল, হ'লদে বালিব রঙ গোদাবরী, দূরে পাহাড়,-দৃশুটি চমৎকার লাগল। গাড়ীর খোলা জানলা আর দরজা দিয়ে বেশ মিষ্টি ঠাণ্ডা হাওয়া আসতে লাগল। কবির ক্লান্ত শরীরের পক্ষে এই হাওয়া বিশেষ শ্রাস্তিহর হ’ল । আমি তখন তারই গাড়ীতে ছিলুম-কবি একটা আরামের নিঃশ্বাস ফেলে ব’ল্লেন—“আঃ, এই হাওয়াটুকুন এসে বঁাচালে । এমনি অবসন্ন ক’রে ফেলেছিল এই গরম আর এই গাড়ীর ঝাকানি আর লোকের ভীড়—এখন আর কোনও কষ্ট নেই-আমার সব শ্রান্তি যেন এখন দূর হয়ে গেল।” দুরে অন্তগামী স্বৰ্য্যকরোম্ভাসিত পাহাড়ের আর গাছপালার দৃশ্বের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন— *দেখো হে, যাই বল, এই দেশের প্রতি স্বাভাবিক নাড়ীর টান ছাড়া এর সৌন্দর্য্যের জন্য আরও একটা টান আছে— এ দেশ ছেড়ে আর কোথাও যেতে ইচ্ছে হয় ন—মনে হয় আবার ঘুরে এসে যেন এই দেশেই জন্ম নিই।” কবির কাছে আমাদের দেশের সম্বন্ধে তার এই গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার পরিচয় বহুবার পেয়েfছ-কিন্তু দেশ ছেড়ে বাইরে যাবার পথে তার মুখে এই কথাগুলি আস্তমিক দৃঢ়-আস্থাপূর্ণভাবে শুনে আমার মন খুবই অভিভূত হ’ল । আমিও তাকে ব’ললুম—“আমাদের দেশ এখন ভিতরে আর বাহিরে এই রকম হীন আর উপেক্ষিত হ’য়ে আছে। ভিতরে আমাদের এত জৈষ্ঠ, এত আত্মবিশ্বাসের অভাব, এত নীচতা, সঙ্কীর্ণচিত্ততা, আত্মকলহ আর পরাম্ভব। কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে আমার