পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ৷ রাজরোষ W*○ পিতৃশ্ৰাদ্ধ করিতেছে। মন্ত্ৰোচ্চারণ করিতেছে।” আর একজন কহিল, ‘না হে, ইহারা নটের দল । আজ রাত্রে প্রেতপঞ্চাশিকা নাটক অভিনয় হইবে তাহাই আবৃত্তি করিতেছে। এই শ্মশানভূমি তাহার উপযুক্ত স্থান ৷” নাথপুত্র মৌনাবলম্বন করিয়া অবনত মস্তকে বসিয়াছিলেন। রাজা তাহাকে লক্ষ্য করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কে তুমি ? ব্রাহ্মণ ? গুরু মাথা তুলিয়া ধীর স্বরে কহিলেন, “আমি তোমার দাস ।” রাজা পারিষদদিগকে কহিলেন, "এই দেখ, এক রকম । কতকগুলা অনাৰ্য্য, এখানে ৰসিয়া কি পরামর্শ করিতেছে। আর এক দল হইয়াছে, দেখিয়াছ ? মুণ্ডিত শির, মুণ্ডিত তুও, পীতবস্ত্র ধারণ করিয়া ভিক্ষাপাত্র হস্তে ঘুরিয়া বেড়ায় ।” রাজার সঙ্গিগণ হাসিতে লাগিল, একজন কহিল, ‘জানি বই কি ! তাহীদের গুরু শাক্যবংশীয় রাজপুত্র, উন্মাদ, বীভৎস আচার, চণ্ডালের গৃহু হইতে অন্ন ভিক্ষা করে ।” যুবকেরা অট্টহাস্য করিয়া উঠিল । একজন হাসিতে হাসিতে কহিল, ‘রাজস্থথের অপেক্ষ ভিক্ষাভোগ উত্তম, ইহাতে আর সন্দেহ কি ! কিন্তু এই যে লোকগুলা, ইহার কে ? রাজদ্রোহী নয় ত ? আবার হাস্তের তরঙ্গ উঠিল। বিদ্রপ-বাক্য শুনিয়া নাথপুত্ৰ আসন ত্যাগ করিয়া উঠিলেন। শ্রোতাদের মধ্যে এক যুবক ধৈৰ্যচ্যুত হইয়া বলিয়া উঠিলেন,সাধু-সন্ন্যাসীকে বিদ্রুপ অপমান করা রাজার উচিত কৰ্ম্ম বটে!" যুবা তেজস্বী, বলবান, অথচ সৌম্যমূৰ্ত্তি। সে স্বয়ং ক্ষত্রিয়, দূর সম্বন্ধে রাজার জ্ঞাতি, তাহাকে দেখিয়া রাজা চিনিলেন। ক্রোধে চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া কছিলেন, ‘উদয়ন, তুমি এখানে ? যেমন দলে মিশিয়াছ সেইরূপ তোমার প্রকৃতি হইয়াছে। কাহার সহিত কথা কহিতেছ, তোমার স্মরণ নাই ? তোমার মুখে এরূপ কথা ? মধ্যস্থলে পুরোহিত বসিয়া উদয়ন কহিলেন, ‘সকলের মুখে এইরূপ কথা। গুপ্তচরের সে-সংবাদ দেয় না ?” রাজার সন্ধিগণ তর্জন-গর্জন করিয়া উদয়নের অভিমুখে অগ্রসয় হইল। নাথপুত্রের শিষ্যগণ তৎক্ষণাৎ উদয়নকে বেষ্টন করিয়া দাড়াইল । এরূপ স্থলে বলপ্রকাশ যুক্তিযুক্ত নহে বিবেচনা করিয়া রাজার মোসাহেবরা ক্ষাস্ত इट्रेल । নাথপুত্র হস্ত উত্তোলন করিয়া হউক!" এই বলিয়া তিনি সে-স্থান পরিত্যাগ করিলেন । শিষ্য ও শ্রোতাগণ র্তাহার সঙ্গে গেল। রাজা চীৎকার করিয়া কহিলেন, ‘উদয়ন, আজিকার অপমান আমার স্মরণ থাকিবে ।’ উদয়ন কোন উত্তর দিলেন না । কহিলেন, “মঙ্গল R রাজবাট পরিত্যাগ করিয়া রাজা বিরূপাক্ষ কিছু দূরে বিস্তৃত উদ্যানের মধ্যে প্রমোদ-ভবনে বাস করিতেন । রাজমাতা বর্তমান, রাজবংশের কয়েকজন বৃদ্ধও জীবিত, রাজ-বাটতে বিরূপাক্ষ যথেচ্ছাচার করিতে পারিতেন না। উদ্যানে তাহাকে নিষেধ করিবার বা বুঝাইবার কেহ ছিল না। প্রমোদ-ভবনে কি হইত রাজ-বাটতে সংবাদ আসিত, কিন্তু রাজা বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়াছেন, রাজ্যভার তাহার হস্তে, কে তাহাকে নিবেধ করিবে ? রাজা কথন কখন রাজবাটতে গিয়া মাতাকে প্রণাম করিয়া আসিতেন, অধিক কথাবাৰ্ত্ত হইত না । রাজমাতা মনে করিতেন বিবাহ হইলে এরূপ উচ্ছ জ্বল থাকিবে না, এই ভাবিয়া তিনি পুত্রের বিবাহ দিবার চেষ্টা করিতেছিলেন । পুত্র অসৎসঙ্গে প্রমোদে মত্ত, বিবাহের জন্য কোনরূপ আগ্রহ ছিল না । উদয়নের কথায় রাজা ক্রোধে জ্ঞানশূন্ত হইয়াছিলেন। বাগানে ফিরিবার পথে আর কোন কথা হইল না। ‘দেখিয়াছ, কতকগুল ভিখারীর সম্মুখে জামাকে অপমান করিল ! উহার দেশে দেশে ঘুরিয়া বেড়ায়, সৰ্ব্বত্র এই কথা রাষ্ট্র করিবে ।’