পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

锦 *} 義 سراسراب ما بد ة ـسهـ রাজা কহিলেন, "এ ব্যক্তি রাজদ্রোহী । সৈনিকের উদয়নকে ধরিতে উদ্যত হইল। মাঝে আর কয়েকজন লোক আসিয়া পড়িল । একজন উদয়নের কাণে কাণে বলিতেছিল, ‘পশ্চাতে মহামায়ার মন্দিরদেখিতে পাইতেছ না ? মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ কর, সেখানে বন্দী করিবার আদেশ নাই।’ সে ব্যক্তি উদয়নকে পশ্চাৎদিকে ঠেলিতে লাগিল। মন্দিরের বৃহৎ দ্বার, তাহার পর প্রশস্ত প্রাঙ্গণ । উদয়ন বেগে প্রাঙ্গণ পার হইয়া, মন্দিরে প্রবেশ করিয়া দেবীমূৰ্ত্তির সম্মুখে সাষ্টাঙ্গে পতিত হইলেন। কহিলেন, “আমি ভীত, আমি দেবীর শরণার্থী !’ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পঞ্চপ্রদীপ হস্তে দাড়াইয়াছিলেন। দীর্ঘ, সেীমামূৰ্ত্তি, দীর্ঘকেশ, শ্মশ্রমণ্ডিত মুখশ্ৰী, কোমল গম্ভীর স্বরে কহিলেন, ‘বৎস, আশ্বস্ত হও, অশরণকে শরণ দিবার জন্যই মা আছেন।” উদয়ন কহিলেন, ‘রাজা মিত্রদলের সহিত সন্ন্যাসীকে অবমাননা করাতে আমি আপত্তি করিয়াছিলাম। এই অপরাধে তিনি আমাকে রাজদ্রোহী বলিয়া বন্দী করিতে আসিতেছেন ।” "এখানে ? ‘সৈনিকদিগকে লইয়া রাজা মন্দির-প্রাঙ্গণে প্রবেশ করিয়া থাকিবেন।’ "এখানে রাজরাজেশ্বরীর রাজ্য, এখানে রাজা-প্রজা সকলেই সমান। পুরোহিতের চক্ষু জলিয়া উঠিল। ‘মন্দিরপ্রাঙ্গণে সৈনিক । রাজদ্রোহী ? রাজা স্বয়ং যখন নিজের শত্ৰু, অপর শক্র হইতে কতক্ষণ ? অপর পুরোহিতকে কহিলেন, “আমি বাহিরে যাইতেছি, দ্বার রুদ্ধ কর। আমি ন: আসিলে দেবীর দর্শন হইবে না।’ পুরোহিত বাহিরে অসিলেন । ভিতর হইতে দ্বার রুদ্ধ হইয়া গেল। রুদ্ধ দ্বারের সম্মুখে দাড়াইয়া পুরোহিত দেখিলেন, প্রাঙ্গণে লোক ঠেলিয়া প্রবেশ করিতেছে, সৰ্ব্বাগ্রে রাজা, হস্তে মুক্ত অসি, তাহার পশ্চাতে সৈনিক, সঙ্গে সঙ্গে জনতা-স্রোত। মন্দিরের দ্বার রুদ্ধদেখিয়া সকলে থম্কিয়া দাড়াইল, কেবল রাজা দ্রুতপদে মন্দিরের অভিমুখে অগ্রসর হইলেন, সৈনিকেরাও অগত্যা তাহার অনুগমন করিল। প্রবাসী-ভান্দ্র, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড রাজা কিছু বলিবার পূৰ্ব্বেই পুরোহিত মুক্ত কণ্ঠে, সকলকে শুনাইয়া, কহিলেন, ‘মহারাজ, অসি হস্তে সশস্ত্র সৈনিক সঙ্গে আপনি এখানে প্রবেশ করিয়াছেন, ইহা কি দেবীর স্থান না শক্রর রণস্থল ? বিরূপাক্ষ উন্মত্ত বলিলেই হয়। অসংযত যৌবন, সকল প্রকার অত্যাচার, তাহার উপর মগধরাজের দূতের ভয়ে সমস্ত রাত্রি আত্মনিধাতন । রুদ্ধ চিত্ত মুক্ত হইয়া রাজা ক্ষিপ্তের ন্যায় হইয়া উঠিলেন, কৰ্ত্তব্যাকৰ্ত্তব্য জ্ঞান তিরোহিত হইল । কহিলুেন, ‘আমি দেবীর মন্দিরে আসি নাই, পলাতক অপরাধীকে বন্দী করিতে আসিয়াছি।’ পুরোহিত পূর্বের ন্যায় উচ্চ কণ্ঠে কহিলেন, ‘এখানে কেহ কাহাকেও বন্দী করিতে পারে না। এ স্থান অভয়ার, ভীত ব্যক্তিকে তিনি অভয় দেন, শরণাগতকে শরণ দেন ।” - রাজা একেবারে মন্দিরের সোপানের উপর উঠিয়া, হস্তের অসি না নামাইয়া, তীব্র, রুক্ষ স্বরে কহিলেন, ‘ব্রাহ্মণ, পথ ছাড় ! ভিতরে প্রবেশ করিব, দ্বার রুদ্ধ থাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিব !’ জনতা শিহরিয়া উঠিল । পুরোহিত দুই বাহু উত্তোলন করিয়া, দুই হস্তে বক্ষের কাযায়-বস্ত্র ছিড়িয়া ফেলিয়া, রাজার তরবারির সম্মুখে প্রশস্ত বঙ্গ পাতিয়া দিলেন । তুর্য্যধ্বনির ন্যায় কণ্ঠনিনাদে কহিলেন, ‘প্রথমে ব্ৰহ্মহত্যা কর, তাহা হইলে দেবীর দ্বার সহজে ভাঙ্গিতে পারিবে ।’ সমবেত জনসংঘ হাহাকার করিয়া উঠিল । ‘পৰ্ব্বনাশ হইল ! সৰ্ব্বনাশ হইল!’ বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল, অনেকে দুই হস্ত দিয়া শ্রবণ রোধ করিল, অনেকে মন্দিরের অভিমুখে ধাবিত হইল । সৈনিক দুই জন ভল্পে ভল্ল যোজনা করিয়া, পুরোহিতের সম্মুখে রাজার পথ রোধ করিয়া দাড়াইল। রাজা দন্তে দন্তে নিষ্পেষিত করিয়া কহিলেন, "তোমরাও রাজদ্রোহী, শূলে যাইবে । ‘রাজদও মস্তকে পাতিয়া লইব, দেবীর অভিশাপের ভাগী হইতে পারিব না। দেবীর অপমান হইলে নগর ধ্বংস হইবে।”