পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] জীবনদোলা ‘》》 পরিচয়টুকুও পাইল, সেদিন হইতেই শুধু কাজে নয় অকাজেও গৌরীকে তাহার মনে পড়িতে লাগিল। সে যে বুদ্ধিমতী, শক্তিশালিনী কি কৰ্মিষ্ঠ৷ এইটুকুই মাত্র আর তাহার সংজ্ঞা রহিল না ; সে মামুষের বিচিত্র পরিচয়ের একটি আধার, একথাও বার বার তাহার মনে পড়িয়া যাইতে লাগিল । চোখের সামনে দেখিয়াও যাহ। সে এতদিন দেখে নাই, অমুভবেই গেীরীর এমন অনেক পরিচয় সে আবিষ্কার করিতে লাগিল। সাধিয়া গায়ে পড়িয়া সে গৌরীর ফরমাস খাটিতে আরম্ভ করিল ; তাহার বাড়ীর চিঠি লইয়। যাওয়া, শঙ্করকে খবরাখবর দেওয়া, আবার বাড়ী হইতে তাহার মনে ছোটখাট জিনিবপত্র আন, এত কাজের মধ্যেও এসব সঞ্জয় খাচিয়া করিতে লাগিল। কাছে আসার একটা নূতন বাতিক তাহাকে পাইয়া বসিল। গৌরী অবাক হইত তাহার কাণ্ড দেখিয় । কি এমন সে করিয়াছে যাহার জন্য এত করিয়া কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে হইবে ? আবার ভাবিত—ন!, ইহা কৃতজ্ঞত হইতে পারে না, একদিনের জন্য এত দিন ধরিয়া কৃতজ্ঞতা পাগলেও দেথায় না, তা ছাড় তাহাতে এমন প্রাণ, এমন স্বক্ষ দৃষ্টির পরিচয় থাকিতে পারে না। সঞ্জয় তাহার দাদার বন্ধু, বুঝি তাই তাহারও বন্ধু হইয়৷ উঠিতেছে । বন্ধুত্বের চেয়ে বেশী আরেী কিছু কল্পনা করিবার সাধ মাঝে মাঝে আপন হইতেই তাহার মনে উকি দিয়; উঠিত। কিন্তু তখনি সে আপনাকে শাসন করিতসকল লোভকে ভ্যাগ করিবার স্পৰ্দ্ধ দেখাইয়া শেষে এই কি তাহার পরিণাম ? : চঞ্চলার বন্ধু সাজিয়া এই কি তাহার প্রতিদান ? আপনাকে জপাইত, আমি তুচ্ছতার উপরে উঠিবার জল্প, লোভকে জয় করিবার জন্য, মামুষের মত মাছুষ হইবার জন্য প্রতিজ্ঞা করিয়া কাৰ্য্যক্ষেত্রে নামিয়াছি ; ও পথ আমার নয়, নয়, নয় । তবু মন ব্যথায় ভরিয়া উঠিত। অতীতের ষে জীবনকে সে না দেখিয়াই হারাইয়াছে, ভবিষ্যতের যে জীবনকে পাইবার ক্ষীণ আশাটুকুও আজ ত্যাগ করিয়া জাসিয়াছে দুই-ই তাহাকে কাদাইত। অতীত ও ভবিষ্যতের অশ্রু তাহার কৰ্ম্মনিষ্ঠ সংযত জীবনের হিমের আগল ভাঙিয়া চোখ ছাপাইয়া উঠিত । সমাজ তাহার জীবনের ভবিষ্যৎটার একটা বিরাট কক্ষ অন্ধকারই রাখিবার ব্যবস্থা দিয়াছে, তবু পিতৃস্নেহ সে অন্ধকার হরণ কয়িবার চেষ্টা করিয়াছিল। কিন্তু যে কারণেই হউক অল্প বয়সে সে চেষ্ট। সার্থক হয় নাই। তাই তাহার এই জীবনই হয়ত আজ সকলে মানিয়া লইয়াছে। সে নিজে ত ধাচিয়াই ইহা বরণ করিয়াছে । তবু মনে হয় জীবনের আনন্দ-খনিরূপে কিছু একটা সে পাইবেই। কিছু না পাইয়াই জগৎ হইতে বিদায় লইবে ইহাও কি সম্ভব ? কিন্তু কেনই বা হইবে না ? অনেক মানুষই ত তেমন গিয়াছে ; তাহীদের মত তাহারও সত্ত্বেন হইবে, "দুঃখ যে তোর নয় রে চিরন্তন।” কিন্তু হায়, যেীবনধৰ্ম্ম এ সাত্ত্বনায় শাস্তি পায় না, ইহজীবনের এ নিঃস্বতাকে বিশ্বাস করে না । জীবন-জোড়া মুখ না হউক, তবু দু-দিনের জন্যও সৰ্ব্বহার আনন্দের উন্মত্ত প্লাবনে একবার আপনাকে ভাসাইয়া দিবার সাধ মামুষের থাকে। কাজের মধ্যে আপনাকে ডুবাইয়। এসব খেয়ালকে ভুলিতে হইবে গৌরী সংস্কল্প করিল। সে হৈমবতীকে গিয়া ধরিল, “মাসিম, আমাকে খুব শক্তরকম একট। কাজ দিতে হ’যে । এমন স্বচ্ছন্দে দিন কাটিয়ে কাটিয়ে আমি বড় কুঁড়ে হয়ে যাচ্ছি।” হৈমবতী বলিলেন, “তোমার কলেজের পড়া রয়েছে মা, এই ত আসছে বছরই বি-এ দেবে ; তার উপর বাড়ীর কাজের পাল ত আছেই। এতেও যদি তুমি নিজেকে কুঁড়ে মনে কর তাহলে তোমাকে স্বানিতে যুতে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই ।” গৌরী বলিল, “পূজোর ছুটিত এল ব’লে, তখন কলেজও থাকৃবে না, এখানেও অনেকে বাড়ী চ’লে যাবে ; সব কাজই হাস্ক হ’য়ে যাবে। তখন আমি ব’সে বসে করব কি ? পরীক্ষার পড়া ত সেই শীতের পর থেকে স্বরু করলেই চলবে ।” হৈমবতী গৌরীর রকম দেখিয়৷ বিস্মিত হইলেন। সে যে নিজের হাত হইতে নিজে পরিত্রাণ পাইবার জন্যই নিজেকে পিবিয়া মারিতে চাহিতেছে তাহা বুঝিতে তাহার মত তীক্ষুবুদ্ধি মামুষের দেরী হইল না। না-জানি