পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ> Վ প্রবাসী—ভাদ্র, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ; ১ম খণ্ড কি দুঃখজালে সে জড়াইয়া পড়িয়াছে ভাবিয়া মমতায় ও চিন্তায় তাহার মন ভরিয়া উঠিল। হৈমবতী মনের বেদন মনে চাপিয়াই বলিলেন, “মেয়েদের কাজ তম, অনেকই আছে। বরং যত কাজ তার তুলনায় মানুষ মোটেই মেলে না, এই দুঃখ । কিন্তু হাসপাতালে কি আতুর-আশ্রমে সেবার কাজের মত কাজ ত পড়াশুনার মাঝখানে তুমি পারবে না। না হ’লে সেদিন ভূষণ-বাৰু আমাকে বললেন যে, তাদের আতুর আশ্রমে তারা পুরুষ তিনজন আর তাদের গিন্ধীর তিন জন ছাড়া দিনরাত্রি রোগীদের খবর নেবার কেউ লোক নেই। অথচ ভূষণ-বাবুর স্ত্রীর তিনটি ছোট ছেলেমেয়ে। এইসকল কাজের উপর ছোট ছেলের মা’র পক্ষে যে-কোনো রোগের সেবা করা কম শক্ত কথা নয় ; তবু ব্ৰত নিয়েছেন ব’লে তিনি কোনোদিন কোনো কাজে আপত্তি করেন না। র্তার চান একটি অল্পবয়স্ক তোমারই মত মেয়ে । কিন্তু তোমাকে ত অন্য জায়গায় কাজের জন্য এখন পাঠানে যায় না। তাতে অনেক হ্যাঙ্গাম বাধ বে, তাছাড়া তোমার পড়ার সময়ও পাবে ন৷ ” গৌরী বলিল, *কেবল অবসর সময়-গুলোয় করা যায় আর ছুটিটা পুরে করা যায় এমন কোনো কাজ জোটে না ?” হৈমবতী হাসিয়া বলিলেন, “কি জানি মা, আমাকে ত লোকে ইস্কুল, হাসপাতাল, পতিতোদ্ধার এই সবেরই জন্য লোক দিতে বলে। আর কিছুর কথা ত এখন শুনিনি। তবে সঞ্জয় আমাদের মস্ত ‘কৰ্ম্মথালি’র গেজেট আছে ; তাকে জিজ্ঞাস করলে হয়ত তোমার ফরমাস মত কাজ জুটিয়ে দিতে পারে।” গৌরী বলিল, “আচ্ছ। তাই আজ খোজ করব।” সন্ধ্যায়ু সঞ্জয় আসিতেই গৌরী তাহাকে গিয়া ধরিয়া বসিল, “আমার জন্যে কিছু কাজ জুটিয়ে দিতে হবে।” । সঞ্জয় অকারণে খুলী হইয়া বলিল, “বলুন না, কি কাজ চাই, আমার দপ্তরে অনেক কাজ আছে । কিন্তু আপনি হঠাৎ এত স্বাবলম্বী হ’তে চাইছেন যে ! পড়াশুনোয় আর মন যায় না ?” গৌরী যেন ধরা পড়িয়া গিয়াই একটু লজ্জিত ভাবে বলিল, “না, না, চাকুরী চাইছি না, অন্য কাজ ।” সঞ্জয় বলিল, “ও: খয়রাতী ! ত দিতে পারি যত চান ।” কিন্তু পরক্ষণেই একটু গভীর হইয়া বলিল, “আপনার ত কাজের কমৃতি নেই ; তার উপর আবার কাজ চাপানে মানে আত্মহত্যার একটা চেষ্টা করা। কি হবে অমন ক’রে নিজেকে মেরে ? আপনার এই ত বয়স, এখনও কাজ করবার অনেক দিন পড়ে আছে। এখন যা কাজ করছেন সেগুলো শেষ হ’য়ে যাক, তারপর অন্ত কাজ করবেন।” সঞ্জয়ের এই দরদে গৌরীর দুইচোখ সজল হইয়। আসিল। সত্যই ত সে আত্মহত্যা করিতেছে। শরীরটাকে হত্যা করিতেছে না বটে কিন্তু মনটাকে ত গল টিপিয়৷ মারিতেই চাহিতেছে। কিন্তু ন মারিয়াই বা উপায় কি ? কি হইবে তাহার সে মন লইয়। যাহা কেবল পাগলের মত স্বপ্ন দেখে, আর অসম্ভব আকাশ-কুসুম রচনা করিয়া তাহারই জন্য মাথা খুড়িয়া মরে? মনের ত তাহার কোনো প্রয়োজন নাই ; কাজের জন্য একটা নিখুঁত কল যদি সে হইতে পারে তবেই জগতে যাহা সে হইতে চাহিতেছে, অপরেও যাহা তাহাকে করিতে চায়, সেট সম্ভব হইবে । গৌরী চোখট নামাইয়া বলিল, “ম, সঞ্জয় বাবু, আমি শরীরের খুব যত্নষ্ট করি। আত্মহত্য আমি করতে চাইছি না । কিন্তু কাজের মাহব হতে হ’লে মনটাকে খুব শক্ত ঘানিতে দিবারাত্রি যুতে রাখা দরকার ।” একথাটা গৌরী বলিতে চাহে নাই। তবু ফস করিয়া এই কথাটাই তাহার মুখ দিয়া বাহির হইয় গেল। সঞ্জয়ও এরকম উত্তর আশা করে নাই। সে ব্যথিত ও বিস্মিত দৃষ্টিতে একবার গৌরীর দিকে তাকাইয়া বলিল, ”আচ্ছ, আমি আপনাকে ঠিক কাজ খুজে দেব, যদি আপনি কথা দেন যে ভ্রান্ত হ’লেই বিশ্রাম নেবেন এবং মনটাকেও একেবারে জেলখানার কয়েদীর মত নিষ্ঠুর ভাবে বিচার করবেন না ।” গৌরী শেষ কথার কোনো উত্তর না দিয়া বলিল, "স্থ্য, শ্রাস্ত হ’লে ত নিশ্চয়ই বিশ্রাম করব। আমাদের