পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা] জীবনদোলা ዓ »© আশ্রমের দুজন ডাক্তার অভিভাবক রয়েছেন ; তার কি আর তাহ’লে আমাকে ছেড়ে কথা কইবেন ?” সঞ্জয় বলিল, “আপনি ভূষণবাবুকে চেনেন? তাদের একটা আতুর-আশ্রম আছে।" গৌরী উৎফুল্প হইয়। বলিল, “হ্য, মাসিম আজই তাদের কথা বলছিলেন। আমি না চিনলেও তারা যে খুব মহৎ লোক তা বুঝেছি।” সঞ্জয় বলিল, “ৰ্তাদের আশ্রমে যে-সব রুগীরা থাকে, তাদের চিঠিপত্র পড়ে শোনাবার আর লিখে দেবার কোনো লোক নেই। এর অভাবে ভূষণ-বাবুর স্ত্রী বড় মুস্কিলে পড়েছেন। রোজ সকালে সব চিঠি পড়ে দিয়ে আসবে এমন একজন লোক আমি ঠিক ক’রে দিয়েছি। কিন্তু পড়ার চেয়ে লেখায় সময় লাগে বেশী, অথচ সেটা অবসর মত করা চলে। আপনি যদি সপ্তাহে দুদিন কি তিনদিন এই কাজটা ক’রে দেন ত ওঁদের খুব উপকার হয়। কিন্তু য’ খান চিঠি লেখার পর আপনার শ্রান্তিবোধ হবে ত’ খান লিখেই আপনি সেদিন থামৃতে পারবেন। এমন কি দরকার কিম্ব ইচ্ছা হ’লে দিনক্ষণ সব বদলে নিতে পারবেন। এতে কারুরই কিছু ক্ষতি হবে না ।” গেীরী বলিল, “হঁ্য, আমি নিশ্চয় করব । তার আগে একদিন আমি আশ্রমটা দেখতে চাই।” সঞ্জয় উৎসাহিত হইয়া বলিল, “আচ্ছ, আমি আপনাকে কালই নিয়ে যাব ।” গৌরী হাসিয়া যলিল, “মাসীম আপনার সঙ্গে আমায় যেতে দেবেন বুঝি, ভাবছেন?” সঞ্জয় এ উত্তরে শুধু শুধুই লাল হইয়া উঠিল। তারপর বলিল, “মাগিমাকে শুদ্ধই নিয়ে যাব। আপনাকে একলা যেতে তিনি দেবেন না তা জানি।” চঞ্চল একরাশ বই হাতে করিয়া আসিয়া বলিল, “এই বইগুলো একজন আশ্রমের নাইটস্কুলে দান করেছেন, কিন্তু ওদের পক্ষে এগুলো শক্ত হবে। আপনি যদি বইগুলো বিক্ৰী ক'রে দিয়ে এদের মত বই কিছু সেই পয়সা দিয়ে জুটিয়ে দিতে পারেন তাহ’লে খুব ভাল হয় ।” গৌরী দেখিল চঞ্চলার মুখ আশ্চৰ্য্য গম্ভীর। সঞ্জয়ও খুব প্রফুল্ল নয় । সে বই কয়খানা লইয়া বলিল, “হ্যা, আমি চেষ্টা ক’রে বিক্ৰী করিয়ে দেব।” তারপর পকেটের ভিতর হইতে একথান খোলা চিঠি বাহির করিয়া চঞ্চলার হাতে দিয়া বলিল, “এই চিঠিখানা পড়ে দেখ বেন ।” - চঞ্চলার মুখ অদ্ভুত রকম কঠিন হইয়া উঠিল। গৌরীর সামনেই তাহার হাতে চিঠি দেওয়াতে সে অত্যন্ত বিরক্ত ভাবে সঞ্জয়ের মুখের দিকে তাকাইল। চিঠিখানাও ফিরাইয় দিতে যাইতেছিল। কি ভাবিয়ু বলিল, “আচ্ছ, আমি পড়ব পরে। আশ্রমের কথা বুঝি কেউ লিখেছেন ?” সঞ্জয় পাছে কোনো উত্তর দেয় এই ভয়ে সে কথাটা বলিয়াই চলিয়া গেল। তাহার এ ছলনাটুকু বুঝিতে গেীরীর একটুও অসুবিধা হইল না। কিন্তু সে বিস্থিত হইল তাহাদের দুইজনের দুই বিভিন্ন রকম ব্যবহার দেখিয়া । সঞ্জয়ই বা তাহার কাছে সব প্রকাশ করিতে উন্মুখ কেন আর চঞ্চলাই বা সব লুকাইতে চাহে কেন? এ যদি কেবল কুমারীর স্বাভাবিক লজ্জার জন্যই হইত, তাহা হইলে এমন তীব্র বিরক্তি তাহার সহিত আসিয়া জুটিত না । তাছাড়া সঞ্জয়কে এমন করিয়া এড়াইয়া চলাও অত সহজ হইত না । কি হইয়াছে ইহাদের মধ্যে ভাবিয়া সে স্থির করিতে পারিতেছিল না। অথচ ইহাদের ভাবনাট। তাহাকে কিছুতেই ছাড়িয়া যাইতেছিল || চঞ্চলার আকস্মিক আবির্ভাব ও অন্তৰ্দ্ধানে সঞ্জয় যেন একটু লজ্জিত হইয়া কৈফিয়তের স্বরে বলিল, “বড় রকম দুঃখ পেলে মানুষের সব সময় মাথার ঠিক থাকে না।” গৌরী প্রশ্ন করিয়া এবিষয়ে নূতন কিছু জানিবার কৌতুহল আর দেখাইল না। ( ক্রমশঃ } 'ఘోస్తొ