পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭২৬ প্রবাসী-ভাদ্র, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড সকল পদার্থই গহনার উপকরণ হিসাবে ব্যবহারের যোগ্য। মূল্য হেতুক অন্ধদেশাচার-নির্দিষ্ট এইরূপ জাতিবিচারকে প্রকৃত শিল্পী ও রূপরসজ্ঞ ব্যক্তি মাত্রেরই হেয়ঞ্জান করা উচিত। বিদেশে ঐক্লপ অন্ধবিচার নাই, সুতরাং তথাকার শিল্পীর পরিকল্পনায় হীরক ও মুক্ত শুক্তি, মুক্ত ও কচ্ছপের থোল একত্রে স্থাপিত হইয়া পরম্পরের শোভা বৰ্দ্ধন করে । কোণশূন্য মণি-সংযোজিত হার ও দোলক (ধুকধুকি), ल्लिी মণিমুক্তার এই জাতি-বিচারের ফলে লোকের রুচি এতই বিকৃত হইয়াছে, যে, মণিমুক্ত সংযোজন বা ব্যবহারের সহিত কলাকৌশল বা সৌন্দৰ্য্যজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক নাই বলিলেও চলে। সাধারণতঃ যে-সকল জড়োয়। গহনা দেখা যায়, সে-সকলের মধ্যে শতকরা ৯৯টি দৃষ্টিকটু অশোভন, যথেচ্ছভাবে সংযোজিত, এবং মণিসকলের আয়তন ভিন্ন অন্য সকল গুণ নিৰ্ব্বিচারে সংস্থাপিত। “চোখঝলসান” বা “তাকূলাগান” ভিন্ন অন্ত কোনও কারণে এইরূপ গহনার অস্তিত্বের সার্থকতা নাই। মণিসংযোজনে আমাদের গহনাশিল্পের পূর্বকালের বিশেষত্ব সকল লোপ পাইয়াছে। প্রাচীন হিন্দুগহনাশিল্পে বহু কোণ, স্বল্প-কোণ, ও কোণবিহীন এই তিন প্রথায় কৰ্ত্তিত মণিরই ব্যবহার ছিল। স্ফটিক-ভাবাপন্ন মণিমাত্রই যথাযথভাবে বহুকোণ-সমন্বিত আকারে কর্তন করিলে তাহার castfeo (glitter) s is (radiance) fo হয়। কিন্তু এই জ্যোতি ও প্রভ উগ্র ও কঠোর ; কোণশূন্ত বা স্বল্পকোণ, মস্কণ, পিও, বৰ্ত্তল, ডিম্ব বা ফলক, ইত্যাদি আকারের মণির বিমল স্নিগ্ধ জ্যোতি ও প্রভ তাহাতে নাই। কিন্তু এথন “লোকদেখান”ই মণি ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশু, স্বতরাং স্নিগ্ধ অপেক্ষা কঠোর উগ্রভাবেরই সমাদর। গহনায় স্নিগ্ধতা বা কোমলভাবের যে কোনও সার্থকতা ত্মাছে, সে-বিচার কেহই করে না । - চিত্রাঙ্কনে যেরূপ মৃদু হইতে অত্যুজ্জল সকল ছায়ার বর্ণ সমীচীন ভাবে প্রয়োগ করিতে হয়, অলঙ্কারেও সেইরূপ নানাবর্ণ ও ছায়াযুক্ত উপকরণ সকলের যথাযথ ব্যবহার কর্তব্য। এককালে এইরূপ নানাবর্ণ ও ছায়ার বিভিন্নভাবে কৰ্ত্তিত মণির ব্যবহার দ্বারা অলঙ্কারের শোভাবৰ্দ্ধন কার্য্যের জন্য এদেশের গহনাশিল্পী ভুবনপ্রখ্যাত ছিল। এখন কেবল মাত্র উৎসাহদাতা ও পোষকের অভাবে এই শিল্প ও শিল্পী উভয়েই মরণোন্মুখ । “ভারতীয় শিল্পীদের রচনা, কারুনৈপুণ্য ও কারুকার্য্য সম্বন্ধে এতই জ্ঞান আছে যে, অল্পপরিমাণ স্বর্ণ ও স্বল্পমূল্য মণিমুক্তার দ্বারা তাহারা অতি উচ্চশ্রেণীর অলঙ্কার প্রস্তুত করিতে সমর্থ। পরিকল্পনায় রূপ, রুচি, শোভন ও অশোভনের সম্বন্ধ বিচার তাহদের এতই স্বক্ষ, যে, প্রভূত পরিমাণ মণিয়ত্ব ব্যবহার এবং অতি জটিল কারুকার্য্য থাকা সত্ত্বেও, তাহাদের প্রস্তুত অলঙ্কারাদি নয়ন-স্থখকর হয়। ইয়োরোপীয় গহনার তুলনায় তাহাদের গহনার এই বিশেষত্ব অতীব প্রশংসনীয়, কেননা ইয়োরোপীয় শিল্পীর ধারণায় “উচ্চশ্রেণীর গহনা" বলিতে অত্যস্ত অধিক পরিমাণ উপকরণে, অতি অল্প কারুকার্য্য-শোভিত দ্রব্য ।”