পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఈ షా: ছেলে হুয়েছেল । কেন রে, একথান ভাল কাপড়-জামাও কি পরতে নেই? এ কি কারো বাপের শ্রাদ্ধে মন্ত্র পড়াতে যাচ্ছি ?” ভানুমতী বলিল, “কোথায় পাবে বল ? মাত্র তিন আলমারী কাপড়, জামা, চাদর ওর ? সে সব কার জন্যে জমা করছি ?” স্থবীর কথা না বলিয়াই ফিরিয়া গেল, এবং মিনিটকয়েক পরে ঢাকাই ধুতি, গরদের পাঞ্জাবী, বেনারসী চাদরে সজ্জিত হইয় ফিরিয়া আসিল। ভানুমতীর ইচ্ছা ছিল, দামী রিঃওয়াচ, হীরার আংটি, বোতাম প্রভৃতিগুলোও ছেলের গায়ে ওঠে ; কিন্তু বেশী বকবকি করিলে পাছে ছেলে একেবারেই বাকিয় বসে, এই ভয়ে সে আর কিছু বলিল না। শীঘ্রই বিধিমতে যাত্রা করিয়া, মোটর-হর্ণের শব্দে পাড় কাপাইয় সুবীর কনে দেখিতে বাহির হইয় গেল। বৃদ্ধ দেওয়ানজী এবং তাহার সঙ্গী এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক আর একথানা ধারকরা মোটরে করিয়৷ পিছনে চলিলেন। মেয়ের বাপ রাধিকাপ্রসাদ মিত্র, ওকালতী করিয়া নিতান্ত কম পয়সা রোজগার করেন নাই। আজকাল কৰ্ম্ম হইতে একরকম অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। ভবানীপুরেই কিছু দূরে র্তাহার বাড়ী। আত্মীয়স্বজন লইয়া পরিবারটি নিতান্ত ছোট নয়। বৈঠকখানায় তখন বাড়ীর লোক, আত্মীয় কুটুম্ব, পাড়প্রতিবেশী মিলিয় রীতিমত ভিড় জমাইয়া তুলিয়াছে। জমিদার-পুত্র ভাবী বরকে দেখিতে মেয়েদেরও উৎসাহের অস্তঃ নাই, কাজেই অন্তঃপুরও কোলাহল-মুখরিত। দুইটি ঘরে লোক জমা হইয়াছে সব চেয়ে বেশী। ভাড়ার ঘরে যেখানে জলখাবার সাজানো হইতেছে, সেখানে বাড়ীর যত বৃদ্ধ ও প্রৌঢ়ার সঙ্গে পাড়ার যত গৃহিণীর দল আসিয়া "যোগ দিয়াছেন। অবাধে সমালোচনা চলিতেছে । আর একটি বড় ঘরে, সেটি বাড়ীর এক বেীএর শয়নকক্ষ, ক’নে সাজানোর জের এখনও চলিতেছে। বার পাঁচ ছয় সাজ বদল করিয়া ক’নে বেচারী এতক্ষণে যেন একটু নিষ্কৃতি পাইয়াছে। ঘরভরা বালিক, কিশোরী ও তরুণী। এখনও কেহ বা কনের চুলটা একটু টানিয়া সাম্নে নামাইয় দিতেছে, কেহ বা গালে ও কপালে অল্প একটু পাউডার যোগ প্রবণসী—অাশ্বিন , రిలికి ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড করিম fಿಕ, এখানের ব্রোতুটি টানিয়। ওখানে করিম। দিতেছে। এমন সময় বাহিরে মোটরের বঁাশী শোনা গেল। “ঐ রে, এসে পড়েছে,” বলিয়া বালকবালিকার দল বাড়ী কাপাইয়া সদরের দিকে দৌড় দিল। কিশোরী ও যুবতীর দল দরজা জানলার ফঁাকে ফঁাকে উকি মারিয়াই কৌতুহল চরিতার্থ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । সুবীরদের মোটর দুইখানা বাড়ীর সাম্নে আসিবামাত্র, বৈঠকখান হইতে তাহদের অভ্যর্থনা করিবার জন্ত প্রায় শ'খানিক লোক বাতির হইয়া আসিল । বিপুল সমারোহ করিয় তাহাদের লইয়া গিয়া বসানো হইল। মেয়ের বাপ পুড়ে প্রভৃতির সঙ্গে দেওয়ানজী ও তাঁহার বৃদ্ধ সঙ্গীটিই কথাবাৰ্ত্ত বলিতে লাগিলেন, ছেলেরা একটু দূরেই বসিল । পাড়ার যুবকের দল তাহাদের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্ত। বলিবার জন্য আসিয়া জুটিল। প্রথমে আসিম জলপাবারের ডাক। সকলকে পাশের ঘরে উঠিয়া যাইতে হইল। চারজনের জায়গা পাশাপাশি করা হইয়াছে, মাৰ্ব্বেল-মণ্ডিত মেঝের উপর। আসনগুলি কালো মখমলের, বাসনগুলি রূপার এবং শ্বেত পাথরের। এক একজনের জন্য যাহা জলখাবার দেওয়া হইয়াছে, তাতাতে গোট ঢার মানুষ পেট ভরিয়৷ থাইতে পারে। থালা, রেকবী, বাটি, গেলাস বহুদূর জুড়িয়া সাজানে। হইয়াছে। সুবীর বসিয়াই চন্দ্রনাথের কানে কানে বলিল, “কি হে হামাগুড়ি দিতে হবে নাকি শেষে ? এত দূর পর্য্যন্ত হাত ত পৌছবে না । ক’নের বাড়ীর লোকের কি আমাদের মানুষের আদিপুরুষ বলে ভ্ৰম কবৃছেন ?” প্রবোধ বলিল, “গল্প শুনেছি, অনেক বনিয়াদী বাড়ীতে এইরকম করে খাবার সাঞ্জালে, সঙ্গে একটা বাকানো কাঠের লাঠি দিয়ে দেয়, যাতে দূরের বাটগুলো টেনে নিতে পারে।” সুবীর বলিল, “ভাগ্যে আমাদের তা দেয়নি। আমি অন্ততঃ লাঠি দেখলে তার অর্থ অন্ত রকম করতাম।” হাস্তালাপের ভিতর জলযোগ শেষ হইয় গেল। যাহ। খাইল, তাহার দশগুণ জিনিষ নষ্ট করিয়া, নিমন্ত্রিতের দল উঠিয়া গেল। বৈঠকখানায় গিয়া বসিবামাত্র মেয়ের এক খুড় হাকিয়া বলিলেন, “ওরে নলি, পান দিয়ে যা ”