পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] পাত্র হইয় উঠেন ; রাজরাণী দেদিস ছিলেন অপরূপ রূপসী, জাভায় তাহার মতন রূপসী আর কেউ ছিল না। অনেক চক্রান্ত, অনেক ষড়যন্ত্রের পর, কেন অরোকের গুপ্ত-চুরিকার আঘাতে কেদিরি-রাজ নিহত হন এবং ১২২০ খৃষ্টাব্দে কেন অরোক্ সিঙ্গসারি’র সিংহাসন অধিকার করিয়াই বিধবা রাণী দেদিসের পাণিগ্রহণ করেন । রাজ হষ্টয়াই কেন অরোক জঙ্গল ও কেদিরি রাজ্য অধিকার করেন, এবং সিঙ্গসারি রাজ্যকে সমৃদ্ধির শিখরে তুলিয়া দিয়া “রাজস সঙ অমূৰ্ব্বভূমি” উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯২৭ খৃষ্টাব্দে তিনি নিহত হন । জাভায় প্রজ্ঞাপারমিতার যে অপূৰ্ব্ব সুষম ও সৌন্দর্য্যাভিষিক্ত ভাস্কর্য-নিদর্শনটি রহিয়াছে তাঙ্গ এই কেন আরোকের রাজত্বকালেই নিৰ্ম্মিত। পণ্ডিতের বলেন, রূপসী রাণী দেদিসেরই ইহা রূপমূর্তি। সিঙ্গসারির চতুর্থ রাজা ছিলেন কৃতনগর (১২৬৮১২৯২ খৃষ্টাব্দ ) । কৃতনগর জাভার ইতিহাসকে একটি নূতন রূপ প্রদান করেন, কিন্তু তাহাতেই সিঙ্গসারির রাজ-বংশের ধ্বংসের পথ প্রশস্ত হইয় উঠে । “শিব-বুদ্ধ’ বলিয়া তিনি দেশের লোকের নিকট হইতে পূজা পাইতেন, কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন অত্যন্ত অসংযমী ও দুৰ্ব্বলচিত্ত । তিনি বিজয়-অভিযান পাঠাষ্টয়াছিলেন মলয়ুতে ( সুমাত্রায় ), বালিতে, বকুলপুরে (দক্ষিণ-পশ্চিম বোর্ণিও ) ; অথচ তাদের নিজের ঘরে, নিজের রাজ্যে সমস্ত শক্তি দরাজ হস্তে অপব্যয়িত হইতেছিল, কোনো সঞ্চয়, কোনো শৃঙ্খলাই ছিল না। এদিকে আপন গৰ্ব্বে দপিত রাজা চীন-সম্রাট কুবলাই থা'র দূতকে অপমান করিয়া বিদায় দিলেন। সুযোগ বুঝিয়া কেদিরির সামন্তরাজ জয়কতোঙ বিদ্রোহ ঘোষণা করিলেন । রতনগরের কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন রাদেন বিজয় । এই রাদেন বিজয় বিদ্রোহী জয়কতোঙকে বাধা দিতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু বিদ্রোহীবীরের অমিত বিক্রমের সম্মুখে রাদেন বিজয়ের ক্ষুদ্র শক্তি স্রোতের মুখে তৃণের মত ভাসিয়া গেল। জয়কতোঙ কৃতনগরকে হত্যা করিয়া সিঙ্গসারি অধিকার করিলেন, রাদেন বিজয় জাভার উত্তরে মাদুর দ্বীপে পলাইয়া গেলেন। কয়েক দিন পরেই আবার ফিরিয়া আসিয়া পূৰ্ব্বশত্রু জয়কতোঙর রাজ-সভায় অন্যতম { ঘবদ্বীপে ভারতীয় উপনিবেশ b->? মন্ত্রীরূপে প্রবেশ করিলেন এবং রাজার অনুমতি লইয়। এক জনবিরল বিস্তীর্ণ ভূমিখণ্ডে এক নূতন নগরী প্রতিষ্ঠা করিলেন । এই নগরীই পরে মজাপচিত্ নগরী নামে খ্যাত হয়। বিজয় প্রতি মুহূর্তে হৃতরাজ্য পুনঃ প্রতিষ্ঠার সুযোগ খুজিতেছিলেন—১২৯৩ খৃষ্টাব্দে সেই সুযোগ আসিয়া উপস্থিত হইল। এতদিন পরে রূতনগর চীন-দুতকে যে অপমান করিয়া বিদায় দিয়াছিলেন তাহারই প্রতিশোধ লইবার জন্য কুবলাই খাঁ তাতার সৈন্ত প্রেরণ করিলেন ; রাদেন বিজয়ের পরামর্শানুসারে এই চীন-সৈন্ত-বাহিনী জয়কতোঙ’র কেদিরি রাজ্য আক্রমণ করিল—যুদ্ধক্ষেত্রেই জয়কতোঙ প্রাণত্যাগ করিলেন। রাদেন বিজয় এইবার এই চীনা সৈন্তদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাভিযান প্রেরণ করিলেন— · হঠাৎ আক্রমণে ভীত ও হস্ত হইয়। চীনা সৈন্ত স্বদেশে পলায়ন করিল। জাভায় ভারতীয় উপনিবেশ সমস্ত শত্র চারিদিক হইতে এইভাবে নিঃশেষ করিয়া লষ্টয় রাদেন বিজয় ১২৯৪ খৃষ্টাবে আপনার প্রতিষ্ঠিত মজ্যপহিত বাষ্ট্রে আপন সিংহাসনে প্রতিষ্ঠা লাভ করিলেন । এবং ‘রুতরাজস-জয়বৰ্দ্ধন উপাধি লইয়৷ পূৰ্ব্ব জাভার কর্তৃ হইয়া বসিলেন। মজ্যপহিতের এই সৰ্ব্বপ্রথম রাজার একটি সুন্দর শিল্প-মূৰ্ত্তি আছে—বিষ্ণুর প্রতিরূপে তিনি রূপায়িত। মৃত রাজাদিগকে তাহদের উপাস্ত দেবতার রূপে রূপায়িত করার প্রথা জাভাতে যেমন, কম্বোজেও তেমনি ছিল। কৃতরাজসর পুত্র পিতার সম্মান ও স্বকৃতির মূল্য রক্ষা করিতে পারেন নাই। সে সম্মান ও স্বকৃতিকে শুধু রক্ষা নয়, তাহাকে আরও সমৃদ্ধ করিয়াছিলেন মজ্যপহিতের তৃতীয় শাসনকৰ্ত্ত কৃতরাজস’র কন্ঠ ত্রিভুবনোত্ত স্ব দেবী জয়বিষ্ণুবন্ধনী । এষ্ট মহীয়সী নারী তাহার মাতা গায়ত্রীদেবী ও ভগিনী রাজদেবীর সঙ্গে একযোগে রাজকাৰ্য্য পরিচালনা করিতেন—তাহার স্বামী ছিলেন রাজ্যের মহাদণ্ড নায়ক । কিন্তু বীরত্বে ও পৌরষে সকলের অপেক্ষ সমৃদ্ধ ছিলেন রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী গজমদ । একদিন এক শুভ মহুর্তে সকল সভাসদৃবর্গের সমক্ষে তিনি প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিলেন, যতদিন