পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লম্ব গ্রীষ্মের ছুটী পাইয়া শিশু কন্যা ও পত্নী সহ হীরেন দেশে যাইবার ব্যবস্থা করিয়া ফেলিল। রেঙ্গুনে থাকিয় থাকিয় তাহদের স্বামীস্ট্রীর একেবারে অভক্তি জন্মিয় গিয়াছিল। যেমন দেশ তাহার তেমন মানুষ ! প্রভা ত স্ত্র সীতা দেবী : & মনে করিতেই পারে না যে, এই দীর্ঘ ব্রহ্মপ্রবাসের মধ্যে, সে . দুইট, বড় জোর তিনটার বেশী নূতন মানুষের সঙ্গে আলাপ করিয়াছে। করিবার দরকারও সে বিশেষ অনুভব করিত না । এবার বেশ কিছুকাল দেশে কাটাইয়া আসিবে আশা করিয়া, যথাসাধ্য জিনিষপত্র সঙ্গে লইয়া, বাদবাকি এক বন্ধুর বাড়ী রাখিয়া, বাড়ী ছাড়িয়া দিয়া তাহারা যাত্রা করিল। কথা ছিল, ছুটী শেষ হইলে হীরেন ফিরিয়া আসিয়৷ মেসে থাকিবে, প্রভা পাচ ছয় মাস পরে একেবারে পূজার ছুটী পার করিয়া ফিরিবে । গ্রীষ্মের ছুটী দেখিতে দেখিতে শেষ হইয়া আসিল, আর দিন দশ বাকি। আহারান্তে মাদুর পাতিয়া শুইয়া হীরেন খবরের কাগজ হাতে ঘুমের আয়োজন করিতেছিল। প্রভা খুকীকে কোলে করিয়া তাহার পাশে আসিয়া বসিল । বলিল, “বাবা, যা গরম। দুপুর-বেলা আমার মাথা যেন পাগল হ’য়ে ওঠে। একটু বে ঘুমিয়ে কাটাব, তারও যো নেই, যা লক্ষ্মীর অবতার মেয়ে।” হীরেন বলিল, “ওকে আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দাও, তাহলে বেশ নিশ্চিন্ত হ’য়ে যুমুতে পারবে। আমারও একটা দিনান্তে গল্প করবার লোক থাকবে।” - প্রভার মুখখান একটুখানি মান হইয়া আসিল, বলিল, <RTE LIBEās:

  1. "

“সত্যি, এইত সেদিন এলাম। এর মধ্যেই ফিরবার দিন এসে পড়ল। আবার সেই হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলি, পুটলি বাধ আর খোল । জাহাজের ছোট খুপ্রী আর খুকীর। চীৎকার মনে করলেই আমার প্রাণ হাপিয়ে ওঠে।” হীরেন বলিল, “তোমার প্রাণ এখনি হাপাবার ত কোনো সঙ্গত কারণ দেখতে পাচ্ছি না, যাবে ত ছ'মাস পরে। আমি বরং কাল সকালে একবার বার্থ এনগেজ” করার চেষ্টায় বেরলে পারি। সুখের বিষয়, আষাঢ় মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘোণ খাবার জন্তে কিছু ধাত্রীর হুড়োহুড়ি, প’ড়ে যাবে না।” প্রভা মুখ আরো বেশী, গম্ভীর করিয়া বলিল, “হ্যা, ছ’মাস পরে যাব, না আরেী কিছু! তোমায় রেজিষ্ট্রি করে লিখে দিয়েছি আর কি ” হীরেন একেবারে খাড়া হইয়া উঠিয়া বসিয়া বলিল, “তার মানে ?” প্রভা বলিল, “মানেটা ত বেশী কিছু শক্ত নয়। আমিও তোমার সঙ্গে যাচ্ছি!” অতিশয় ভীত সন্ত্রস্ত হইবার ভান করিয়া মাথায় হাত দিয়া হীরেন বলিল, “আঃ সৰ্ব্বনাশ । তাই নাকি ?” প্রভা বলিল, “আঞ্জে হ্যা তাই । আপনার যে, একেবারে মাথায় বাজ পড়ল দেথছি। ছুটীর পরে গিয়ে খুব ফুৰ্বিতে কাটাবার সব ব্যবস্থা করে এসেছিলে বুঝি? আমি গেলে বাধা পড়বে ?” গৃহিণীর চোখে জলের আবির্ভাব হইতে আর দেরি নাই দেখিয়া হীরেন বুদ্ধিমানের মত সুর ফিরাইয়া লইল ।