পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

%-৫২

  • আহা, কিবা ভোর, আটটা বেজে গেছে কোনকালে ।” বলিয়া প্রভ রান্নাঘরে তাড়াতাড়ি চায়ের জোগাড় করিতে ও ভাড়ার বাহির করিয়া দিতে গেল ।

চাকরটা তাহার অনেককালের, তাহাকে বেশী কিছু দেখাইয়া দিতে হইত না । কাজেই ভাড়ার বাহির করিয়া দিয়া, চা খাইয় এবং বাজারের পয়সা দিয়া প্রভা অনেকখানি নিশ্চিন্ত মনে সাম্নের ছোট বারান্দাটিতে আসিয়া *াড়াইল । বাড়ীখানার সাম্নে, রাস্তার ওপাশে একটি খৃষ্টিয়ান মিশনারী স্কুল। গাছের সারে তার সাম্নের দিকটা অনেকটাই ঢাকা, বাড়ীখান বিশেষ চোখে পড়ে না । মেয়েদের খেলিবার মাঠটা অনেকখানি দেখা যায়। তখনও স্কুল বসিতে অনেক দেরী, মেয়েরা আসিয়া জুটে নাই, কেবল বোর্ডিংএর দুই চারিটি ছোট ছোট মেয়ে দোলনায় কুলিয়া ও একটা কাঠের তত্তশয় চড়িয়া থেলা করিতেছিল। প্রভাদের বাড়ীর নীচের তলাটা সবটাই দোকান, মুসলমান দোকানদার লুঙ্গি ও টুপি পরিয়া, বাহিরে একটা ভাঙা টুল ভাইয়া বসিয়া আছে । তাহার একপাশে দোতলায় একটি মন্দ্রিাজী পরিবার ও তিনতলায় একটি মেম সাহেব থাকে বোঝা গেল। মাঙ্গাজীর বারান্দায় একপাল ঘোরতর কৃষ্ণবর্ণ ছেলেমেয়ে অৰ্দ্ধ উলঙ্গ অবস্থায় মহা কলরব করিয়া খেলা করিতেছিল। এমমটি একবার বাহিরে আসিয়া দাড়াইল, পরক্ষণেই ভিতরে চলিয়া গেল । প্রভা যতক্ষণ ইহাদের দেখিতেছিল, ততক্ষণ অন্ত পাশের বারানা হইতে দুইজোড়া চোখ তাহাকেও যে খুব ভাল করিয়া দেখিতেছে, তাহা সে বুঝিতে পারে নাই। হঠাৎ এধারে মুখ ফিরাইতেই সে দেখিতে পাইল, একটি বছর চল্লিশ বয়সের স্ত্রীলোক, কোমরে দুই হাত দিয়া দাড়াইয়া, তাহাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিতেছে। পরণে তাহার মেমের পোষাক, রংটা বেশ কালে, মুখ দেখিয়া বুঝিবার যো নাই তিনি কোন জাতীয়া । দো-আঁশলা হওয়াই সম্ভব, ব্রহ্মদেশের রক্ত যে তাহার শরীরে খানিকট আছে, তাহাও বোঝা যায়। চোখ দুইটা ছোট, মুখ দেখিলেই বোঝা যায় প্রচণ্ড রাগী। ইনিই যে সেই স্বনামধন্ত মহিল, প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৪ .............০৮:১৯, ১৫ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)TarunnoBot (আলাপ) ০৮:১৯, ১৫ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)~ ০৮:১৯, ১৫ এপ্রিল ২০১৬ (ইউটিসি)TarunnoBot (আলাপ)^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড তাহা বুঝিতে প্রভার দেরি হইল না। ফিরিঙ্গী মহিলার পিছন হইতে আর-একটি অল্পবয়স্ক মেয়েও প্রভাকে উকি মারিয়া দেখিতেছিল, তাহার মুখ দেখিয়া বোধ হয়, সে বয়োজ্যেষ্ঠাটিরই ছোট বোন। প্রভা তাহাদের দিকে ফিরিতেই তাহারা গুরুগম্ভীর ভাবে ঘরের ভিতর চলিয়৷ গেল । প্রভা ঘরে ঢুকিয়া দেখিল, হীরেন খাট ছাড়িয়া উঠিয়া, চা খাইবার জোগাড় করিতেছে। স্ত্রীকে দেখিয়া বলিল, “এতক্ষণ অত মন দিয়ে কাকে দেখছিলে ?” প্রভা বলিল, “যার গুণের সৌরভে মুগ্ধ হ’য়ে এখানে এসেছি, তাকেই।” হীরেন জিজ্ঞাসা করিল, “কি রকম ? প্রথম দর্শনে প্রেমে পড়া চলে ?” প্রভা বলিল, “আমি ত পড়িনি, তবে তুমি চেষ্টা করে দেখতে পার ।” হীরেনের সেদিকে বিশেষ উৎসাহ আছে বলিয়া মনে হইল না। সে চা-পানান্তে, কাপড় জামা বদলাইয়া বাহির হইয় গেল। মেয়েকে সকালের খাওয়া খাওয়াইয়া প্রভা একটু রান্নাবান্নার তদারক করিতে চলিল। রান্নাঘরের পিছনে একটি বারান্দ, একটি ঘোরানো লোহার সিড়ি দিয়া তাহাতে ওঠা যায়। প্রভা বাহির হইয়া দেখিল, বাড়ীটার মস্ত গুণ এই যে, পিছনে রেজুনের বিখ্যাত কাচড় গলি নাই। বাংলা দেশ হইতে আসিয়া প্রথমেই এই আঁস্তাকুড়ের অত্যাচারে প্রভ। অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছিল। রেঙ্গুনের সর্বত্রই প্রায় দুই সার বাড়ীর মাঝখানে এই জাতীয় একটি গলি থাকে। দুই পাশের বাড়ীর সব ক’টি তলা হইতে তাহার মধে) সৰ্ব্বজাতীয় ময়লা এবং আবর্জন বর্ষিত হয়। মুনিসিপ্যালিটির মেথর সকালে একবার তাহা পরিষ্কার করিয়া যায়, কিন্তু পাচ মিনিট যাইতে-না-যাইতেই তাহ আবার উকুনের ছাই উচ্ছিষ্ট ডাল, ভাত, তরকারী, ঘর ঝাট দেওয়া ধূলা, বালি, কাগজের টুক্‌র এবং দুই সার বাড়ীর শিশুদের বিষ্ঠায় ভরিয়া ওঠে। নীচের তলায় অধিকাংশ স্থলেই ব্ৰহ্মদেশীয়েরাই বাস করে, কারণ তাহারা সিড়ি ওঠা-নাম করিতে একান্তই নারাজ। তাহাদের কিন্তু এই আবর্জন