পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ) হইতে গোয়ালন্দ যাওয়া যাইত। জাহাজ দুখানির নাম এখনও ভুলি নাই। একখানি ছিল “Prince of Wales,” wig off for “Princess Alice” ào; sers কলিকাতায় যে-সকল মালের জাহাজ চলিত এ দুখানি জাহাজ তার চাইতে অনেক ভাল ছিল । এ দুখানি যাত্রীজাহাজ ছিল। মাল জাহাজ প্রায়ই দুই পাশে দুখান৷ অতিকায় আঁধা বোট বা গাধা বোট বাধিয়া টানিয়া নিত, ঢাকা-গোয়ালন্দের যাত্রী-জাহাজে সচরাচর কোন গাধাবোট বাধা থাকিত না। তবুও একদিনে ঢাকা হইতে গোয়ালন্দে যাওয়া যাইত না । নারায়ণগঞ্জে যাইয়া গোয়ালদের জাহাজের জন্য পথ চাহিয়া থাকিতে হইত। শ্রীহট্টের জাহাজে জাহাজের কেরাণী হরমোহন-বাবুর অনুগ্রহে কোনো রকমে জাত বঁাচাইয়া আসিয়াছিলাম। কিন্তু গোয়ালন্দের জাহাজে হরমোহন-বাবুর মত কোনো কৰ্ম্মচারী ছিলেন না। সুতরাং এখানে মুসলমান খালাসীদের আতিথ্য স্বীকার করিতে হয়। এই আমার প্রথম মুসলমানের অন্নপ্রাশন। এসকল জাহাজে তখনও দেশীয় লোকের ইংরেজী ধরণে খান খাইতে আরম্ভ করেন নাই। উচ্চশ্রেণীতে দেশীয় যাত্রীও চলাচল করিতেন না। উচ্চশ্রেণীর ধাত্রীর এখনকার মতন কোন ব্যবস্থাও ছিল না। এখন আমাদের নদীর জাহাজে দেশীয় লোকেরাই কাপ্তানের বা সারেংয়ের কাজ করিয়া থাকেন। পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে তাদের এশিক্ষা লাভ হয় নাই । তখন র্তারা খালাসীর কাজই কেবল করিতেন । জাঙ্গজের কাপ্তান এবং এনজিনিয়ার দুইই বিদেশীয় ছিলেন। ইংরেজ যাত্ৰী আসিলে তাহারা কাপ্তানের ক্যাবিনেই আশ্রয় পাইতেন এবং কাপ্তানের টেবিলেই থানা থাইতেন । দেশীয় যাত্রীদের সে-লোভও জন্মে নাই আর ইংরেজের সঙ্গে সমকক্ষ হইয়া বসিবার-দাড়াইবার সাহস এবং অভ্যাসও হয় নাই। সুতরাং আমাদের মতন আচার-ভ্রষ্ট হিন্দুদিগের পক্ষে মুসলমান খালাসীদের আতিথ্য গ্রহণ করা ব্যতীত আহারাদির জন্য অন্ত কোন ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না। খালাসীদের আতিথ্য তবে এই খালাসীর খান খাইতে যাইয়া মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে কিছু কিছু গোলমালও বাধিত। আমাদের e-జ:చి সত্তর বৎসর b^&సి মতন ছেলেদের উদর পূর্ণ করা তাদের পক্ষে সৰ্ব্বদা সহজ ছিল না। বিশেষতঃ আট আনায় এত পরিমাণ কারী-ভাত জোগাইতে গেলে অতিথি-সেবাই করিতে হইত, লাভবান ব্যবসা করা সম্ভব ছিল না । এইজন্য প্রায়ই তাদের সঙ্গে আমাদের খটখটি বাধিয়া যাইত। আমরাও ছাড়িবার পাত্র ছিলাম না। কারীর বরাদ্দ যথেচ্ছা বাড়ান যখন অসম্ভব হইল তখন ভাতের দাবী চড়ান গেল। এ ভাত যে সকলই আমাদের পেটে যাইত তাহা নহে। প্রকাতে, খালাসীর হাতে খাইবার সাহস তখনও হয় নাই ! সারেংয়ের ক্যাবিনেই, আর কখনে। কখনো জাহাজের চাকার উপরে যে ছোট ঘর থাকিত তাহাতে, বসিয়া খাইতে হইত। অার ভাত দিয়া গেলেই সে ভাত আমাদের পেটে না যাইয়া অনেক সময় পদ্মা-গর্ভে যাইয় অদৃশু হইত। এইরূপে খালসী যখন দেখিল যে ব্যঞ্জনাদির সাহায্য ব্যতীতও আমরা এত পরিমাণ অন্ন ধবংস করিতে লাগিলাম তখন আমাদের কারীর মাত্রা সম্ভব মত বাড়াইয়া একট রফা করিল। এইরূপে অনেক সময় অনেক কৌতুকের সৃষ্টি হইত। গোয়ালদের রেল—পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে এইরূপে জাত খোয়াইয়া কোনো প্রকারে প্রাণ বঁাচাইয়া নারায়ণগঞ্জ হইতে দুই দিন পরে গোয়ালন্দ পৌছিয়া রেল গাড়ীতে উঠিলাম। আমরা রেলের কৰ্ত্তাদের নিকট হইতে যে সুখ-স্বচ্ছন্দতার দাবী করি তাহা পাই নাই। কিন্তু প্রথম যে রেলগাড়ীতে চড়ি, সে গাড়ীর তুলনায় আজিকালিকার গাড়ী কত যে শ্রেষ্ঠ তাহ মনে করিলে অসন্তোষের কারণ অনেকটা কমিয়া যায় । তথন নিম্নতম শ্রেণীর গাড়ীগুলিকে চতুর্থ শ্রেণী কহিত। মধ্যম শ্রেণীর বা Intermediate গাড়ী তখনও হয় নাই। তবে পূৰ্ব্বে যাহা তৃতীয় শ্রেণী কহিত তাহাই কাৰ্য্যতঃ এখন মধ্যম শ্রেণী হইয়াছে। নিম্নতম শ্রেণীর গাড়ীতে কাঠের জানাল ছিল, কাচের জানাল তখনও হয় নাই । এখনও তাহাতে গদী নাই, তখনও ছিল না। পায়খানা গাড়ীর ভিতরে হয় নাই। ষ্ট্রেশনে নামিয়া মল-মুত্রাদি ত্যাগ করিতে হইত। ইহাতে কখন কখন যাত্রীদের পথের মাঝখানে পড়িয়াও থাকিতে হইত। এ অভিজ্ঞতাও যে আমাদেরও হয় নাই এমন নয়।