পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

باسوارا একটা কিছুকে খাড়া করিতে তাহার নিজের ইচ্ছা হইত বলিয়াই প্রণয়ের পথের বিচিত্র কুটিল গতির দোহাই দিয়া সে আপনার প্রথম কল্পনাটাকেই প্রাণপণে সত্য বলিয়৷ ধরিয়া রাথিতে চেষ্টা করিত। মনকে বলিত, “চঞ্চলার সহিত সঞ্জয়ের সম্বন্ধটাই সত্য ; আমার স্বার্থান্বেষী মন তাহাকে মিথ্যা প্রমাণ করিতে চায় বলিয়াই সত্যের দিকে অন্ধ হইয়া বসিয়াছে।” গৌরী ঘরের বাহিরে যাইতেই চঞ্চল বলিল, “চিঠিখান ভাগ্যিস তুমি আমাকে পড়তে দিয়েছিলে, নাহ’লে একে পর তাতে আমার মত হেয় অস্পৃশ্ব পরকে যে কেউ কোলের মেয়ে হারানো মাণিক বলতে পারে তা বিশ্বাস করতেই পাতাম না। পিতৃস্নেহ যাই হোক, মাতৃস্নেহ যে একেবারে মিথ্য নয় এটা আজ আমাকে স্বীকার করতে হবে। আমার মা যখন আমাকে ফেলে চ’লে গেল, তখন তার হৃদয়হীনতার পরিচয় পেয়েই বিদ্রুপ করেছিলাম, আজ পর্যন্ত ভাবিনি কতবড় প্রেম তাকে এ ত্যাগ-স্বীকার করিয়েছে। আজ আর-এক মায়ের মুখে শুনে প্রথম ভেবে দেখছি যে, সত্যিই ‘সন্তানের সঙ্গে বুকের শিরাগুল পর্যন্ত উপড়ে ফেলতে তাকে হয়েছিল যাতে তারই মত ঘৃণ্যজীবন না তার জীবনমণিকে যাপন করতে হয়। মাতৃত্বের গৌরবের সঙ্গে কলঙ্কটাও যদি সে সগৰ্ব্বে লোকের চক্ষের সম্মুখে তুলে ধরে দেখাবার স্পন্ধা করত তাতে ত তার সন্তানকেই অপমান করা হ’ত। নির্দোষী সস্তানকে চিরকলঙ্কের টিক সে পরাতে চায়নি, তাই অসীম সাহস নিয়েই জীবনের একমাত্র মুখ ও অবলম্বনকেও সে ত্যাগ করে দূরে চ’লে যেতে পেরেছিল।’ তোমার মার চোখ দিয়ে না হ’লে আমার মাকে এমন ক’রে আমি কোনোদিন দেখতে শিখ তাম না। আমার মাকে যিনি চিনিয়ে দিলেন সেই নুতন-পাওয়া মাকে তোমার হাতে প্রণাম পাঠাচ্ছি।” সঞ্জয় বলিল, “কিন্তু ম যে তার হারানো মণিকে দেখবার জন্তে পাগল হ’য়ে উঠলেন তার কি করা যায় ?” চঞ্চল ব্যস্ত হইয়া বলিল, “ন, ন, সে হবে না। আমার অমন মাকে নিজের মা বলে পরিচয় দেবার যখন ভাগ্য আমার নেই, তথন দশজনের মাঝখানে তাকে দেপার অধিকারও আমি চাই না। মাকে বোলে ভাগ্যে § - - ? - ર૪, , প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড থাকলে তার মেয়ে তাকে নিজেই কোনোদিন দেখে ধষ্ঠ হয়ে আসবে।” সঞ্জয় বলিল, “তোমার ভার আমার মত অৰ্ব্বাচনের হাতে দিয়ে মা নিশ্চিন্ত হ’তে পারছেন না। তিনি নিজে ন তদারক করলে নাকি কোনো সুব্যবস্থাই হবে না ।” চঞ্চল একটু আনন্দের হাসি হাসিল। তারপর বলিল, “কিন্তু ম| কি জানেন না যে, তার অপার স্নেহও সমাজে আমার জাত ফিরিয়ে দেবে না ? আমার যেটুকু সুব্যবস্থ৷ সে আমার নিজের শক্তি ও চরিত্রের জোরেই ক’রে নিতে হবে । এখানে কেউ আমার সহায় হতে পারে না। একজনের শুভ ইচ্ছা তশতজনের গঠিত সমাজকে ঠেলে ফেলতে পারে ন৷ ” সঞ্জয় বলিল, “ঠেলে ফেলে দেওয়ার ত কোনো দরকার নেই। মা'র শুভ ইচ্ছা অপরের মনে শুভ ইচ্ছা আর সহানুভূতিকে জাগিয়ে তুলতে পারে ; তেমনি করেই তোমাকে সমাজে প্রতিষ্ঠা দিতে মা সবচেয়ে বড় সহায় হ’তে পারেন ।” চঞ্চল বলিল, "আমার পরিচয় অপরের কাছে প্রকাশ করতে যপন আমি পাব না এবং আমার অদ্ধ পরিচয় অর্থাৎ হীন জন্মমাত্রের পরিচয় যখন আমি কাউকে দিতে চাই না, তখন আমার সমাজে প্রতিষ্ঠা না খোজাই উচিত। পৃথিবীতে আমার একা থাকাই ভাল। পরকে ছলনা ক’রে অথবা পরের করুণা উদ্রেক ক’রে পতিতোদ্ধারের কার্য্যে তাদের আমি লাগাতে চাই না।” সঞ্জয় শিহরিয়া উঠিয়া বলিল, “ছিঃ চঞ্চল, নিজের সম্বন্ধে অমন ক’রে কথা তুমি বোলে না। আমাদের চেয়ে একবিন্দুও নীচে যে তুমি নও, তা কি তোমাকে বলে দিতে হবে ? সত্যি, চঞ্চল, এমন করে দিন চলবে না। তুমি আমাকে অনুমতি দাও আমি মার সাহায্যে তোমাকে আপনার বলবার অধিকারটুকু যেমন ক’রে পারি সংগ্ৰহ ক'রে নি। মা ত লিখেইছেন, “আমি হাতে পায়ে ধীরেও তোমার বাবার কাছ থেকে আমার হারানো মেয়েটিকে ফিরে নিতে চাই।” ” চঞ্চল বলিল, “সে হয় না।”