পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] সঞ্জয় বলিল, “কেন হবে না চঞ্চল ? মা যদি তার সন্তানকে ফিরে পাবার জন্তে সংগ্রাম করতে চান, তুমি কেন তাতে বাধা দেবে ?” চঞ্চলা বলিল, “মনে হবে আমিষ্ট যেন চক্রান্ত ক’রে তোমাদের দলে টেনেছি।” সঞ্জয় বলিল, “যা সত্য নয় তা মনে হবে বলে তুমি কোনো মামুযের আন্তরিক ইচ্ছায় বাধা দিতে পারে না। তা ছাড়া তুমি জান না যে, আমার মা কত সাবধানী। তিনি যখন একথা তুলবেন তখন তার কথার ভাবে তুমিই একথা জান কি না বাবার সন্দেহ হবে।” চঞ্চল। বলিল, “আমি যে সমস্তষ্ট জানি তা তিনি জানেন ।” সঞ্জয় বলিল, “কিন্তু তোমার সঙ্গে যে আমার চাক্ষ্য পরিচয়ও আছে তা তিনি জানেন না। তুমি আর কোনো আপত্তি কোরে না, লক্ষ্মীটি : অমি কাউকে কোনো অনুরোধ করব ন!—কিন্তু মা নিজ ইচ্ছায় যা করতে চাইছেন তাতে আমি বাধা দিতে চাই না।” চঞ্চল বলিল, “আচ্ছ, তাই হবে। এপন আমি চললাম, নইলে নান! কথা উঠতে পারে।” চঞ্চল দ্রুত পদে ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয় গেল । সঞ্জয় আপনার কথা ও ঘরের কথা কোনো দিন ভাবে নাই, পরের কথা ভাবাই তাহার কাজ । আজ কিন্তু আপনাকে কেন্দ্র করিয়াই নান চিন্ত তাহাকে ঘিরিয়া ধরিল । কোথা হইতে এই চঞ্চল। আজ তাহার জীবনের সঙ্গিত এমন করিয়৷ জড়াইয় পড়িল যে, তাহাকে ছাড়িয় এক পাণ্ড কোনো দিকে সরিয়া যাইবার তাহার উপায় নাই ? এই স্বেচ্ছাজ্জিত দায়ীত্বের বোঝার জন্ত ইহ কি পর জগতে কাহারও নিকট সে দায়ী নহে বলিয়াই ইহার সম্বন্ধে এতটুকু অবিচারের ভয়ে সে পদে-পদে আপনাকে অপরাধী করিতেছে। পাছে সে স্বার্থপরের মত আপনার মুখ খুজিতে গিয়া চঞ্চলাকে অবহেলা করে এই ভয়ে আপনার সকল কাজকেই সে ওজন করিয়া দেখিতে আরম্ভ করিয়াছে। দুদিন আগে এমন দিন ছিল যখন বাস্তবিকই পরহিতচিন্তাই তাহার একমাত্র চিন্তা ছিল, আত্মমুখ বলিতে ভিন্ন আর-এক পর্যায়ের জিনিষ তখন তাহার মনোরাজ্যে দেখা দিত না ; সুতরাং আপনাকে اسنامb স্বার্থপর বলিয়া দোষ দিবার তাহার কোনো প্রকৃত ਾਂ ছিল না। কিন্তু প্রথম যৌবনে সকল মামুষেরই মত যে একটা মুখ-কল্পনা তাহার মনটাকে রাঙাইয়া তুলিয়াছিল এবং তাহার পর কৰ্ম্মক্ষেত্রের একটাল ভিড়ের ভিতর মাঝে মাঝে কেবল ক্ষণিকের মত চোখের সমুখ দিয়া যাহা ঝলকিয় গিয়াছে মাত্র আজ এতদিন পরে সেই সুখ-স্বপ্ন তাহাকে শয়নে জাগরণে ঘিরিয়। ধরিতেছে। সকলের জন্য নয়, কেবল নিজের জন্য আর আর-একটি মাত্র মানুষের জন্ত জীবনটাকে একবার পরিপূর্ণরূপে পাইতে সাধ হইতেছে। এই কাজের ভীড়ের বাহিরে কোনো-একটা মানুষ তাহাকে কাজের জন্ত নয়, গুণের জন্ত নয়, কেবল তাহারই জন্ত, তাহার দোষ-গুণ, অপূর্ণতা, ক্ষ্যাপামি, পাগলামি সব-কিছুর জন্যই আপনার বলিয়। কাছে টাকুক, কৰ্ম্মীর যোদ্ধৃবেশ ছাড়িয়া ভদ্রতার ছদ্মবেশ ছাড়িয় আপনার ঘরোয় সরল বেশে যাহার বুকের কাছে পড়িয়া অসম্বদ্ধ প্রশাপ বকা যায় এমন একটা একান্ত নিজের মানুষ নিরালায় তাহাকে লইয়া সকল ভুলুক এই কামন মনে আজ জাগিয়াছে বলিয়৷ আপনার সকল চিন্তু! সকল কাজেই স্বার্থের গন্ধ পাইয়া সে চমকিয়া উঠিতেছে। গৌরীকে সেই স্বপ্লরাজ্যের রাণীরূপে যেন সে দেখিয়াছে এ সন্দেহটা তাহার মনে ক্রমেই বদ্ধমূল হইয়া উঠিতেছে। সুখ-চিন্তার হাত হইতে এই তরুণ যৌবনেই আপনাকে ছিনাইয়া লইবার জন্ত যে আপনার চারিদিকে কেবল প্রহরীর পর প্রহরী খাড়া করিতেছে, সেই পুষ্প-পেলবার কঠোর তপস্ত। সঞ্জয়ের মনে এমন একটা আঘাত দিতেছিল বাঙ্গকে করুণ বলিতে তাহার লজ্জা হয়, সহানুভূতি বলিলেও ঠিক বোঝানো যায় না, অথচ যাহা গৌরীর সম্বন্ধে তাহাকে সৰ্ব্বদা জাগরূক করিয়৷ তুলিতেছিল। তাহার স্বপ্ন-সাধের সহিত এই তপঃক্লিষ্টার প্রতি মমতাটা এমন এক হইয়া উঠতেছিল যে, এখানে সাধটাকে কেবল মাত্র আপনার ঐকটা স্বার্থের প্রকাশ বলিয়। সে স্থাটির ফেলিতেও পারিতেছিল না। আপনার স্বার্থ ভুলিব বলিলে যাহা ভোগ সহজ, গৌরীর আত্মনিপীড়িত সুকুমার মুখখানি মনে করিলে তাহ ভোলা ত তত সহজ থাকে না । এই