পাতা:প্রবাসী (সপ্তবিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᎿbᎭ° সমস্তার মীমাংসা সে কি করিয়া করিবে ? গৌরীর তপস্তার হাত হইতে গৌরীকে রক্ষা করিবার অধিকার তাহাকে অর্জন করিতে হইবে, আবার চঞ্চলার নিৰ্ব্বাসন হইতে তাহাকে মুক্তিও সঞ্জয়কেই আনিয় দিতে হইবে। কিন্তু একল সে এই দুই পথের মাঝখানে স্বার্থের গন্ধ যেদিকে সেই দিকেই যদি বেশী ঝুকিয়া পড়ে ? গৌরী আসিয়া বলিল, “মাসিমার হয়েছে ; এইবার তবে চলুন যাওয়া যাক।” সঞ্জয়ের ইচ্ছা করিল বলে, “আমি কি কেবল তোমার আশ্রমের পথ দেখাতেই এসেছি ? তপস্বিনী হ’য়ে বিশ্বের সেবার চিস্তায় কাছের মামুষগুলোকে এমন ক’রে অবজ্ঞ কর কি ক’রে ?” কিন্তু মুখে বলিল, “হ্য, চলুন, আপনার আবার কলেজ আছে। ফিরতে দেরী হ’লে খাওয়া-দাওয়ারও সময় পাখেন না ।” তিনজনে পথে বাহির হইয়া পড়িল । গৌরীর পথ হাটার কোনো দিন বিশেষ অভ্যাস ছিল না ; কিন্তু তবু সকল সঙ্কোচ অতিক্রম করিয়া সে হৈমবতী ও সঞ্জয়ের সঙ্গে স্বচ্ছন্দেই রাজপথ বাহিয়া চলিল। ( >> ) ছোট একটি তিনতলা বাড়ী। তিনতলায় তিনখানি মাত্র ঘর ; তাহার একখানিতে তিনটি পুরুষ কৰ্ম্মী এবং অন্ত দুইখানিতে সপরিবারে ভূষণ-বাবু থাকেন। তাহার দুইটি কন্যা ও একটি পুত্র। গৃহিণী ও বড়মেয়েট সংসারের সমস্ত কাজ করেন, তাহার উপর আছে রোগীর সেবা । একতলায় ও দ্রুতলায় পাঁচখানা করিয়া ঘর, সবই রোগীদের থাকিবার জন্ত । একতলায় পুরুষের থাকে, দোতলায় থাকে মেয়ের । হৈমবতী, সঞ্জয় ও গৌরী বাড়ীতে আসিয়া ঢুকিতেই ভূষণবাবু ষ্টোভের উপর হইতে ফুটন্ত জলের কেট্‌লিটা ও টেবিল হইতে একটা তুলার প্যাকেট হাতে করিয়াই তাহাদের অভ্যর্থনা করিতে দরজায় আসিয়া দাড়াইলেন । তাহার দুইটা হাতই জোড়, সুতরাং সহাস্যমুখে কেবল একবার মাথাটা নোয়াইয়াই নমস্কারটা সারিয়া লইলেন । প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩৩৪ [ ২৭শ ভাগ, ১ম খণ্ড তারপর হৈমবতীকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “আজি আমার পরম সৌভাগ্য যে, আপনাদের মত তিনজন মানুষকে সকালবেলাই আমাদের মাঝখানে পেলাম। আপনারা ত্যাগী, কৰ্ম্মী, আপনাদের আদর্শেই আমাদের মাথা তুলে চলতে হবে।” হৈমবতী বলিলেন, “আপনি সস্ত্রীক সন্তান-সন্ততি নিয়েও যে ত্যাগ ও নিষ্ঠ দেখিয়েছেন তার তুলনায় আমার সন্ন্যাসী মানুষের এ সামান্ত কাজ ত কিছুই নয়।” ভূষণ-বাবু সলজ্জ সন্ত্রমে চকিত হইয়া বলিলেন, “আপনি অমন কথা বলবেন না। আসুন, সকলে ভিতরে আসুন।” সকলে রোগীদের ঘরগুলি দেখিতে দেখিতে চলিলেন । ছোট ছোট ঘর, একখান। ঘরে তিনখানার বেশী খাট ধরে না। ভূষণ-বাবু বলিলেন, “রোগী কম থাকলে ঘরে ঘরে দুজন ক’রেই আমরা রাখি। নেহাৎ যখন বেশী হয় তখন ওরি মধ্যে তিনজনকে স্থান দিতে হয় । যদিও তাতে ওদেরই স্বাস্থ্যের ভয় আছে।” হৈমবতী বধিলেন, “আপনারও ত লোকজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে হয়, একটা আপিসঘর রাখেননি ?” ভূষণ-বাবু হাসিয়া বলিলেন, “গৃহিণীর ভাড়ার-ঘরের কোণেই আমার আপিসের সমস্ত সাজ-সরঞ্জামকে স্থান দিতে হয়েছে ; আর দেখা-সাক্ষাতের ব্যাপারট। ওই বারাণ্ডাতেই সেরে নিতে হয় ।” বারাণ্ডার কোণে একটা চৌকা টেবিল, একটা মোট কাঠের চেয়ার ও দুইখানা ধূসর রঙের বাৰ্ণিশকরা বেঞ্চি ঝড়জলের চিহ্ন বুকে করিয়া বিরাজ করিতেছিল। দোতলায় মেয়েদের ঘরগুলি পার হইয়া সকলে তিনতলায় উঠিলেন। মেঝেতে বসিয়া ভূষণ-বাবুর ছোট মেয়েটি একটা লালপাড় দিয়া তাহার পুতুলের পায়ে ব্যাণ্ডেজ বাধিতেছিল এবং কোমরে একটা কাপড়ের পুটলি লইয়া সেক দিতেছিল। বাবাকে দেখিয়া সে পরম গম্ভীর ভাবে বলিল, “বাবা আমার ছেলেটার বাত বড় বেড়েছে, কালী ডাক্তারকে একবার খবর দাও না !”