পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আওড়াইয়া লইতে চেষ্টা নি বিশেষ কিছুই ভাবিয়া 彭 পাইল না। বিনয় যে মুহূর্তে ৭৮ নম্বরের দরজার কাছে আসিয়া পৌছিল ঠিক সেই সময়েই পরেশও বিপরীত দিক দিয়৷ সেখানে আঁসিয়া উপস্থিত হইলেন। 貌 "আস্থন আম্বন,বিনয় বার, বড় খুসি চলুম।" এই বলিয়া পরেশ বিনয়কে তাহার রাস্তার ধারের বসিবার ঘরটাতে লইয়া গিয়া বসাইলেন। একটি ছোট টেবিল, তাহার এক ধারে পিঠওয়াল বেঞ্চি, অন্ত্যধারে একটা কাঠের ওঁ বেতের চৌকি ; দেয়ালে একদিকে যিশুখৃষ্টের একটি রং করা ছবি এবং অন্যদিকে কেশব বাবুর ফোটােগ্রাফ। টেবিলের উপর দুই চারি দিনের খবরের কাগজ ভাজ করা, তাহার উপরে শাষার কাগজ চাপা । কোণে একটি ছোট আলমারি তাহার উপরের থাকে থিয়োড়োর পার্কারের বই সারি সারি সাজানো রহিয়াছে দেখা যাইতেছে। আলমারির মাথার উপরে একটি গ্লোব কাপড় দিয়া ঢাকা রহিয়াছে । বিনয় তাহার কোচার প্রান্ত সাবধানে জুতার উপরে ছড়াইয়া দিয়া বসিল । তাহার বুকের ভিতর সংপিগু ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল ; মনে হইতে লাগিল তাঙ্গার পিঠের দিকের খোলা দরজা দিয়া যদি কেহ ঘরের ভিতরে আসিয়া প্রবেশ করে । পরেশ কহিলেন,-“সোমবারে সুচরিতা আমার একটি বন্ধুর মেয়েকে পড়াতে যায় সেখানে সতীশের একটি সমবয়সী ছেলে আছে তাই সতীশও তার সঙ্গে গেছে । আমি তাদের সেখানে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসূচি। আর একটু দেরি হইলেক্ট ত আপনার সঙ্গে দেখা হত না ।” . খবরটা শুনিয়া বিনয় একটুকালে একটা আশাভঙ্গর খোচা এবং আরাম মনের মধ্যে অনুভব করিল। কোচাটার প্রতি আর তাহার দৃষ্টি রহিল না এবং পরেশের সঙ্গে তাঙ্গর কথাবার্তা দিব্য সহজ হইয়া আসিল । * গল্প করিতে করিতে একে একে পরেশ আজ বিনয়ের সমস্ত খবর জানিতে পারিলেন । বিনয়ের বাপ মা নাই ; খুড়িমাকে লইয়া খুড়া দেশে থাকিয়া পিষয় কৰ্ম্ম দেখেন। তাহার খুড়তুত দুই ভাই তাহার সঙ্গে এক বাসায় থাকিয় পড়াশুনা করিত--বড়টি উকীল হইয়া তাঙ্গদের জেলা কোটে প্রবাসী । ব্যবসায় চালাইতেছে, ছোটটি কলিকাতায় থাকিতেই ওলাউঠা হইয়া মারা গিয়াছে। খুড়ার ইচ্ছা বিনয় ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটির চেষ্টা করে কিন্তু বিনয় কোনো চেষ্টাই না করিয়া নানা বাজে কাজে নিযুক্ত আছে। , - এমনি করিয়া প্রায় একঘণ্টা কাটিয়া গেল। বিন প্রয়োজনে আর বেশিক্ষণ থাকিলে অভদ্রত হয় তাই বিনয় উঠিয়া পড়িল কহিল, “বন্ধু সতীশের সঙ্গে আমার দেখা হল না দুঃখ রইল তাকে খবর দেবেন আমি এসেছিলুম ”ি পরেশ বাবু কহিলেন, “আর একটু বস্লেই তাদের সঙ্গে দেখা হত। তাদের ফেরবার আর বড় দেরি নাই।” এই কথাটুকুর উপরে নির্ভর করিয়া আবার বসিয়৷ পড়িতে বিনয়ের লজ্জা বোধ হইল। আর একটু পীড়াপীড়ি করিলে সে বসিতে পারিত--কিন্তু পরেশ অধিক কথা বলিবার বা পীড়াপীড়ি করিবার লোক নহেন, সুতরাং বিদায় লইতে হইল। পরেশ বলিলেন, “আপনি মাঝে মাঝে এলে খুসি হব।” রাস্তার বাহির হইয়া বিনয় বাড়ির দিকে ফিরিবার কোনো প্রয়োজন অনুভব করিল না । সেখানে কোনো কাজ নাই । বিনয় কাগজে লিখিয় থাকে--তাহার ইংরেজি লেখার সকলে খুব তারিফ করে কিন্তু গত কয় দিন হইতে লিখিতে বসিলে লেখা মাথায় আসে না । টেবিলের সামনে বেশিক্ষণ বসিয়া থাকাই' দায়--মন ছট্‌ফট্‌ করিয়া উঠে। বিনয় তাই আজ বিনা কারণেই উল্টা দিকে চলিল । ছপা যাক্টতেই একটি বালক কণ্ঠের চীৎকারধ্বনি শুনিতে পাইল “বিনয় বাবু, বিনয় বাৰু!” মুখ তুলিয়া দেখিল একটি ভাড়াটে গাড়ির দরজার কাছে ঝুঁকিয় পড়িয়া সতীশ তাঙ্গকে ডাকাডাকি করিতেছে। গাড়ির ভিতরের আসনে খানিকটা শাড়ি খানিকটা শাদা জামার আস্তিন যেটুকু দেখা গেল তাহাতে আরোহীটি যে কে তাঙ্গ বুঝিতে কোন সন্দেহ রহিল না। বাঙ্গালী ভদ্রতার সংস্কার অনুসারে গাড়ির দিকে দৃষ্টি রক্ষা করা বিনয়ের পক্ষে শক্ত হইয়া উঠিল, ইতিমধ্যে সেই খানেই গাড়ি হইতে নামিয়া সতীশ আসিয়া তাহার হাত ধরিল-কহিল “চলুন আমাদের বাড়ি !” • , বিনয় কহিল-“আমি যে তোমাদের বাড়ি থেকে এখনি আসচি ।”