পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হৃদয়-ঈশ্বরী মোর, কোথা—কোথা তুমি ? হের দেবি ! তোমাবিনে শূন্য বিশ্ব-ভূমি— শ্মশানের সম শুধু ঘোর অন্ধকারে, আৰ্ত্ত ব্যাকুলত ল’য়ে, শুধু হাহাকারে খাসি’ছে বেদন ভরে ! (অন্নপূর্ণার প্রবেশ । ) অন্নপূর্ণ। রাত্রি দ্বিপ্রহর । অরবিন্দ। ঘুমাক অনন্তকাল বিশ্ব-চরাচর এই মত স্তব্ধতায় ! অজয় ৷ . কল্যাণি, প্রণমি শ্ৰীচরণে তব । ( জনাস্তিকে ) বন্ধু, মোরে তবে ক্ষমি’ দেহ হে বিদায় এবে । মনে রেখো, হায়--- প্রেম নাহি হয় লুপ্ত বিচ্ছেদের ঘায়ে ; কিন্তু, উপেক্ষার বিষে হ’লে ‘জর-জর’— সে-ও নাহি রহে আর । অরবিন্দ। (কর-ধারণ করিয়া ) এসে বন্ধুবর, দেখা দিতে ভুলিও না । [ অজয় প্রস্তান । রাত্রি বেড়ে যায়। অভুক্ত গুহের সবে তোর প্রতীক্ষায় ;– আয় অন্তঃপুরাবাসে । অরবিন্দ । দিদি, চল যাই । (স্বগত) কোথা যাব ? কোথা যাব ? শাস্তি কোথা পাই ! I উভয়ের প্রস্থান। শ্ৰীদেবকুমার রায়চৌধুরী। S. f. ীতা । ( রামায়ণের ও মেঘনাদবধের ।) বোধ হয় ইহা বলা বাহুল্য মাত্র যে সীতাদেবীর চরিত্রে এমন একটা অলৌকিক মাধুর্য্য আছে, যে র্তাহার প্রসঙ্গ মাত্রই সকলের মনোহরণে সমর্থ হয়। এই কারণেই মহর্ষি বাল্মীকির সীতাচরিত্র ভারতবর্ষের রমণীগণের চিরদিনের অন্নপূর্ণ। প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । প্রস্থত বলিয়াই লওয়া যায় তাহা হইলে অবশু স্বীকার করিতে হইবে যে এমন সুসঙ্গত ও সুচিত্রিত রমণীচরিত্র জগতের সাহিত্যে আর দ্বিতীয় নাই। আমাদের ধারণা ছিল যে বাল্মীকির সীতাচরিত্র দোষে গুণে এতদূর সম্পূর্ণ যে তাহাকে আবার উন্নত করিবার প্রয়াস পাওয়া নিতান্ত বিড়ম্বন মাত্র। আদিকবি বাল্মীকির পদাঙ্কামুসরণে অনেক সুকবি সীতাচরিত্র সৃষ্টি করিয়াছেন, কিন্তু কেহই সে চরিত্রকে উন্নত করিতে পারেন নাই ইহাই সৰ্ব্ববাদিসম্মত মত । বঙ্গের আধুনিক কবিদিগের মধ্যে মাইকেল মধুসুদন দত্ত তদীয় “মেঘনাদবধে” সীতাপ্রসঙ্গ উত্থাপিত করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গ উপলক্ষ করিয়া মাইকেলের জীবনী প্রণেতা সুলেখক শ্ৰীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ বসু সেই গ্রন্থে লিখিয়াছেন —“কিন্তু কেবল বর্ণনার মাধুৰ্য্যের ও গাম্ভীর্য্যের জন্ত সীতা ও সরমার কথোপকথনের প্রশংসা নয়, সেই সঙ্গে সীতাচরিত্রের উৎকর্ষ সাধনের জন্যই মধুসূদনের অধিকতর প্রশংসা ।” পুনশ্চ “শাণনিৰ্ম্মক্ত মণির “দ্যায় সীতাচরিত্র তাহার হস্তে যেন একটু উজ্জ্বল হইয়াছে।” ইত্যাদি। কথাটা যখন প্রথম পাঠ করি তখন অতিশয় বিস্ময়ান্বিত হইয়াছিলাম । কারণ মেঘনাদবধে রামায়ণের চরিত্রগুলির অবনতি ঘটিয়াছে ইহাই আমাদিগের ধারণা ছিল। তাহার পর বহুদিন যাবৎ এই বিষয়ে চিন্তা করিয়াছি, বহুবার মূল রামায়ণের সীতাচরিত্র ও মেঘনাদবধের সীতাচরিত্র মিলাইয়া দেখিয়াছি, বহুবার যোগীন্দ্র বাবুর মত বিবেচনা করিয়া দেখিয়াছি; করিয়া যে সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারিয়াছি, তাহাই এতৎ প্রবন্ধে প্রকটিত করিব। নিজ মতামত যতদূর সম্ভব সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করিব, কিন্তু উদ্ধৃতাংশ অনেক স্থলেই অনতিবিস্তর দীর্ঘ হইবে তজ্জন্ত পাঠকগণ আমাকে ক্ষমা করিবেন। . • প্রধানতঃ দুইটী বিষয় লইয়া শ্ৰীযুক্ত যোগীন্দ্রনাথ বস্থ উপরি কথিত মত প্রকাশ করিয়াছেন। প্রথম সীতা কর্তৃক লক্ষ্মণের প্রতি তীব্র তিরস্কার ও দ্বিতীয় আততায়ী রাক্ষস কুলের প্রতি দয়ার অভাব। আমরাও প্রথমে এই