পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । ] অনুরোধ করিলেন।* আকারণ প্রাণিনাশে তাহার রুচি ছিল না। যতদিন পতিসম্মিলন-পথ রোধ করিয়াছিল, ততদিনই রাক্ষসকুলকে তিনি পরমশক্র বলিয়া মনে করিয়াছিলেন। যখন রাবণের মৃত্যুতে র্তাহার অনন্ত যন্ত্রণার শেষ হইল, তখন আর তাহার কাহারও প্রতি বিদ্বেষ রহিল ন, তাই যখন রাবণবধ-সংবাদ দিতে আসিয়া হনুমান তাহার প্রতি অসহনীয়োৎপীড়ন-কারিণী চেড়ীগণকে শাস্তি দিবার প্রস্তাব করিলেন, তখন তিনি তাহাকে তৎক্ষণাৎ সেই অনর্থক অত্যাচার করিতে নিষেধ করিলেন। তাহীদের বিষম অপরাধ তখনি তিনি ক্ষমা করিলেন ; সাক্ষাৎ সম্বন্ধে তাহার প্রতি অত্যাচার রাবণ বা অন্ত রাক্ষসে করে নাই, ইহারাই করিয়াছিল, এক বৎসর ধরিয়া দিনে দিনে ইহরাই তাহাকে অশেষ যন্ত্রণা দিয়াছিল, ইহরাও রাক্ষস ংশের, ইহারাও অত্যাচারী। ইহাদের প্রতি অনুকম্পাও অত্যাচারী রাক্ষসবংশেরই প্রতি অনুকম্পা। মানবসুলভ প্রতিহিংসা প্রবৃত্তি দমন করিয়া এই সকল চেড়ীগণকে ক্ষমা করায় যে দেবভাব প্রকাশ পাইয়াছে, মহৰ্ষি সীতাদেবীর এই সময়কার আচরণে ও কথায় যে মহত্ব প্রদান করিয়াছেন, তাহ, বোধ হয় ইন্দ্ৰজিতের বা রাবণের মৃত্যুতে তাহাকে কাদাইলে প্রকাশিত হক্টত না । আর ইহাই সীতাচরিত্রের মূলতত্ত্ব স্মরণ করিলে স্বাভাবিক বলিয়া প্রতীয়মান হইবে । সে সময়ে তাহার হৃদয়ে যে অমেয় আনন্দ উদিত হইয়াছিল, তাহীর সহিত কোনও ইতর ভাবের সমাবেশ অসম্ভব ; তখন তিনি মুক্তিমতী দয়া, পতিদশনসম্ভাবনায় তাহার সকল জ্বালা যন্ত্রণা ঘুচিয়া গিয়াছে, তখন কি আর তিনি কাহারও অমঙ্গল বাঞ্ছা করিতে পারেন? এমনি করিয়া, এমনি স্বাভাবিক উপায়ে মহর্ষি বাল্মীকি সীতাদেবীর দেবীত্ব প্রকটিত করিয়াছেন। মাইকেলবিলম্বিত পন্থা যে নিতান্ত অস্বাভাবিক তাহা পূর্বেই বলিয়াছি। অতএব দেখা যাইতেছে যে, যোগীন্দ্র বাবুর সমালোচনাধীন মতের কোনও যথার্থ ভিত্তি নাই । মধুসূদন সীতাচরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করিতে পারেন নাই।

  • রামায়ণ—সুন্দরকাণ্ড, ২৭শ সর্গ দেথ । + রামায়ণ-- অরণ্যকাগু ৯ম সর্গ দেখ। } রামায়ণ– লঙ্ককৈাণ্ড ।

সীতা । o 8-૧ উন্নতি হওয়া দূরে থাকুক মধুসূদনের স্তে সাতৃচরিত্রের বিশেষ অবনতি হইয়াছে তাহ সুক্ষদশী পাঠকমাত্রেই অবগত হইবেন । বাল্মীকিচিত্রিত চরিত্রের উন্নতিসাধন আমি অসম্ভব বলিয়া মনে করি ; তাহা করিতে পারেন নাই, বলিয়া আমি মধুসূদনকে দোষ দিতেছি না। কিন্তু তিনি সীতাচরিত্রের অবনতি ঘটাইয়াছেন বলিয় তাহাকে আমি দোষভাক্ করিতেছি । কিসে মধুসুদন সীতাচরিত্রের খৰ্ব্বতসাধন করিয়াছেন, তাহাই দেখাইতে অগ্রসর হইতেছি । সীতাদেবী রাজনন্দিনী, রাজকুলবধু, রাজভায্য, ক্ষত্রিয়রমণী । তিনি পরন্তপ রাজা দশরথের পুত্রবধু, মহাবীর শ্রীরামচন্দ্রের পত্নী, অপূৰ্ব্ব সতীতেজঃসম্পন্ন আর্য্যনারী। ক্ষত্ৰিয়রমণার নির্ভীকতা, শুধু পুরাণেতিহাসে নহে, সৌভাগ্যের বিষয় ইতিহাসেও উজ্জ্বল অক্ষরে ঘোষিত হইয়াছে। রামায়ণের সীতা সেই আর্য্যরমণী । শ্রীরামচন্দ্র বনগমনকালে সীতাকে অযোধ্যায় রাখিয়া আসিতে চাহিয়াছিলেন, তদুত্তরে সীতাদেবীর নিভাক উত্তর সকল পাঠ করিলে শরীর রোমাঞ্চিত হয়। (১) রাবণ তাহাকে হরণোদ্যম করিলে তিনি তাহাকে যে তিরস্কার করিয়াছিলেন, তাহা অতীব প্রতিপ্রদ ও তেজোব্যঞ্জক। (২) রাবণ যখন তাহাকে হরণ করিয়া লইয়া যাইতেছে তখনও তিনি সতীত্ববলে বলবর্তী থাকিয় তাহাকে মৰ্ম্মাত্ত্বিক তিরস্কার করিতেছেন। (৩) পরে যখন রাবণ সীতাকে নিজপুর মধ্যে আনয়ন করিয়া নানা প্রলোভনে প্রলোভিত করিয়া নিজাঙ্কশায়িনী হইতে আহবান করিল তখনও সীতাদেবীর প্রত্যুত্তর বীরাঙ্গনার উপযুক্ত ; (৪) তখনও তিনি নির্ভয়, শোকাভিভূত হইলেও ভয়হীনা--- “স তথোক্ত তু বৈদেহী নির্ভয় শোককৰ্ষিত ” সীতাদেবীর এই অমানুষী সতীত্ব প্রভারও তত্ত্বখ ভীতিহীনতার পরিচয় যাহারা সমাকৃরূপে পাইতে ইচ্ছা করেন, র্তাহারা তাহার জীবনের একটা ঘটনা স্মরণ করুন। (৫) মহাবীর হনুমান সীতাদেবীকে বলিলেন চলুন আমি আপনাকে (১) অযোধ্যাকাণ্ড ২৭শ সর্গ ও ২৯শ সর্গ ও ৩•শ সর্গ দেখ । (২) অরণ্যকাগু ৪৭শ সর্গ দেখ । (৩) অরণ্যকাণ্ড-৫৩শ সর্গ দেখ । (৪) অরণাকাগু—৫৬শ সর্গ দেখ । (৫) সুন্দরকাগু. ১৭শ সর্গ দেণ।