পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

woq a প্রবাসী । ৭ম ভাগ । দেহসৌন্দর্যাকে ব্যক্ত প্রস্ফুটু করিবার জন্তই ব্যগ্র ছিল। সহজ উপলব্ধির জন্ত তোমাকে পরের দ্বারস্থ হইতে বর্তমান যুগে প্রতীচ্যে যে সংগ্রামুকোলাহল জাগ্রত হইয়৷ উঠিয়াছে, তাহাতে সকল জাতি-নেশার পকে ঘুরপাক খাইয়া মরিতেছে, তাহদের এখন অপাত্ম চিন্তার অবসর নাই ; সকলে ইহা লইয়া মত্ত, পরত্রের ভাবনা কে করে ? সুবিধা লইয়া ব্যস্ত, সৌন্দর্যচর্চা এখন পরাহত। এই যে প্রতীচ্যের প্রচণ্ড বিক্ষোভ তাহা শাস্তসমাহিত প্রাচ্যপ্রাচীরে আঘাত করিতেছে ; কিন্তু তথাপি সৌভাগ্যবশে প্রাচ্য এখনো আধ্যাত্মিকতা হারায় নাই। যাহারা কৰ্ম্মেও জাগ্রত হইয় উঠিয়াছে, তাহারাও সুবিধার পোষাক ক্ষণিকের খোলসের মত অবসর পাইলেই পরিহার করে। দেহের সহিত সামঞ্জস্ত হইতে পারে দ্বিবিধ পরিচ্ছদের । দেহষষ্টির প্রকৃত অমুকারী পিনদ্ধ পরিচ্ছদ বা প্রচুর শিথিল পরিচ্ছদ। প্রথমবিধ পরিচ্ছদ যুরোপের মধ্যযুগে স্পেন, ইংলও প্রভৃতি সুদুর পশ্চিমপ্রদেশে প্রাচুভূত হইয়াছিল ; দ্বিতীয়বিধ পরিচ্ছদ মিশর, গ্রীস, রোমে কিছুদিন গৃহীত হইয়াছিল এবং তাহা প্রাচ্য ভূখণ্ডের চিরন্তন কালের নিজস্ব বস্তু হইয়া রহিয়াছে। সৌন্দর্য্য আমাদের প্রয়োজনের অধিক, অথচ সৌন্দর্য্যই আমাদের নিতান্ত প্রয়োজনীয় । পিনদ্ধ পরিচ্ছদে দেহের প্রত্যেক অঙ্গরেথা আবৃত অথচ স্পষ্ট থাকে ; মনুষ্যদেহের বিচিত্র উত্থানপতন, বিবিধ ঋজুবক্র গঠনলীলা, মুক্তভাবে প্রকট হইয়া মানুষকে মুগ্ধ করিয়া ললিত-সৌন্দর্যোর চিস্তার ও উপলব্ধির অবসর প্রদান করে । শিথিলপ্রচুর পরিচ্ছদও ঠিক সেইরূপই দেহকে আবৃত করিয়াও ব্যক্ত করে । শিথিল পরিচ্ছদ দেহখানিতে গড়াইয়া জড়াইয়া ধরে, প্রতি অঙ্গের অবয়ব স্পষ্ট হইয়া উঠে। শিথিলপ্রচুর পরিচ্ছদের অধিক বাহার তাহার স্তরবিন্যাসে। স্তরে স্তরে স্তরে কুঞ্চিত গুল্ফিত হইয়া দেহলতাকে প্রচুরপুষ্পপল্লববিভূষণ লতাটির মত ঐশ্বৰ্য্যসৌন্দর্যে ভরিয়া তুলে। এই প্রাচুর্য জগতের সঙ্গে মানুষের কেবলমাত্র প্রয়োজনের সম্বন্ধ না রাখিয়া আনন্দের সম্বন্ধ স্থাপন করিয়াছে। এই স্তরবিন্যস্ত কুঞ্চিত পরিচ্ছদ নয়নানন্দকর, তাই ইহা চিত্রকলার সাধনার ধন হইয়াছে। হায় হতভাগ্য বঞ্চিত যুরোপ, সৌন্দর্যাম্পৃহা পরিতৃপ্তির জন্ত, আনন্দ-অমরার আস্বাদ পাইবার জন্য, সত্যশিবসুন্দরের N. *. झम्न । সৌন্দৰ্য-বুদ্ধিই ক্রমশঃ মানুষকে প্রয়োজনীতিরিক্ত প্রাচুর্য্যে, এবং প্রাচুর্য্য হইতে শোভনতার দিকে, শোভনতা হইতে আনন্দে, আনন্দ হইতে সত্যুশিবের দিকে অগ্রসর করিয়া দিতেছে । ইহাই উপলব্ধি করিয়া ভারত ধন্থ হইয়াছে ; যুরোপ উপলব্ধি করিতে পারে নাই বলিয়াই দুই দিন অস্তুর ফ্যাশান পরিবর্তন করিতেছে, বিরাম নাই, তৃপ্তি নাই, ফ্যাশানের ফ্যাসাদ মারাত্মক হইয় গ্রাস করিতে উষ্ঠত হইয়াছে। যুরোপের মন দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে নিবিষ্ট হইয়া গিয়াছে, সৌন্দর্য্যের ঠিক মৰ্ম্মস্থানের রস-উৎসের সন্ধান তাহার মিলিতেছে না ; তুচ্ছকে ধরিয়া সৌন্দৰ্য্যবোধের চরিতার্থতা মনে করিয়া প্রতারিত হইতেছে ; ভুল ভাঙিলেই আবার অন্ধকারে হাতড়াইয়৷ ফিরিতেছে। যুরোপের কলাকুশলগণ হয় সৰ্ব্ববাহুলারিক্ত নগ্নসৌন্দর্য্যের আরাধনা করিয়াছেন কিংবা প্রয়োজনীতিরিক্ত প্রচুর কুঞ্চিত পরিচ্ছদের স্তুতি প্রচার করিয়াছেন । কোন শিল্পনিপুণ কলাবান যুরোপের কাটাৰ্ছাটা চোঙাকৃতি পোষাক দেখিয়া মুগ্ধ হয়েন নাই ; চিত্রাঙ্কনে কৃতিত্ব দেখাইতে পারেন নাই—কেবল এক মিস হেনরিয়েটা ভিন্ন, যিনি যুরোপীয় স্ত্রীপরিচ্ছদে সৌন্দর্য্যের বিকাশ লিপিবদ্ধ করিতে সক্ষম হইয়াছেন। বৈলাতিক মোহের সঙ্কীর্ণ পরিধির মধ্যে কোন কিছু চক্ষে সুন্দর শোভন বলিয়া লাগিলেও বিশ্বপ্রকৃতির সৌন্দর্য্যের সঙ্গে মিলাইয়া দেখিলেই তাহার খৰ্ব্বতা কুত্ৰতা ধরা পড়ে। বৈলাতিক পোষাক পরিবর্তিত হইতে হইতে পুরুষের পোষাক চোঙায়, ও স্ত্রীলোকের পোষাক অনাবশ্যক আড়ম্বরে পরিণত হইয়াছে ; ইহাতে প্রাচুর্য্য যথেষ্ট, প্রয়োজনের অত্যন্ত অতিরিক্ত, কিন্তু দেহের সহিত সামঞ্জস্ত নাই বলিয়া, দেহকে একেবারে গুপ্ত লুপ্ত করিয়া দিয়াছে বলিয়া তাহ আনন্দ দেয় না। সৌন্দর্য্যের প্রধান উপাদান যে বিচিত্রতা অর্থাৎ বিরোধের মধ্যে সামঞ্জস্য তাহা যুরোপীয় পোষাকে নাই। সেই একঘেয়ে চোঙা টুপি, চোঙা কুৰ্ত্তি, চোঙ্গ পাজাম, চোঙা জুতা অথবা দৃঢ়পিনদ্ধ কর্শেট ও অনাবশ্বক মোটা কাপড়ের স্ত,প। এই প্রকার পোষাকে দেহের নমনীয়তা কমনীয়তা তিরোহিত হইয়া যায়, অঙ্গাবয়বের সুললিত গঠনলীলা গুপ্ত হইয়া