পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । ] f প্রতিশোধ বেতার ও দাউদৰ্থকে নিস্কৃতি দিল না—তাহার ছিন্ন শির আগ্রার রাজসিংহাসনতলে প্রেরিত হইল! দাউদের সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গালায় পাঠানরবি অস্তমিত হইয়া গেল—দুই শতাব্দীর সুদৃঢ় সিংহাসন চূর্ণ-বিচূর্ণ হইল—সুলতান ইব্রাহিম ও লোদি গাঁর আত্মা পরিতৃপ্তি লাভ করিল ! ( & ) যাহা সত্য তাঁহাই সনাতন ও সৰ্ব্বকালব্যাপী । ইতিহাস অঙ্গুলী নির্দেশে যাহা দেখাইয়া দিতেছে তাহ সেই সনাতন সত্য। দেশ বা জাতি বা সমাজ বিভিন্ন হইলেও ঐতিহাসিক সত্য বিভিন্ন নহে। সিজরের অপঘাত মৃত্যু বা ইংলণ্ডেশ্বর জনের ম্যাগনাকার্ট স্বাক্ষর, টমাস বেকেটের হত্য বা প্রথম চার্লসের শিরচ্ছেদন, নিহিলিষ্ট কর্তৃক সমগ্র রুষিয়ার জারের পতন বা গই ফক্সের গন্‌ পাউডার প্লট কিম্বা মহাশক্তিধর নেপোলিয়নের সেণ্ট-হেলেন দ্বীপে মহাপ্রস্থান ও যোসেফাইন নিগ্ৰহ অথবা ফরাসী লুইয়ের রাজত্বকালে বিশ্বনাশকারী প্রজাশক্তির তীব্র উন্মত্ততা এ সমস্তই আমাদিগকে সেই একই সত্যের দিকে লষ্টয়া যায়—আমাদিগকে বুঝাইয়া দেয় যে প্রকৃতির প্রতিশোধ অবশ্যম্ভাবী, দেবতার দণ্ড চির-জাগ্ৰত—উহ! কাহাকেও ক্ষমা করে নাই, কাহাকেও ক্ষমা করিবে না--রাজা, প্রজা, সমাজ কাহারও নিস্তার নাই ! ঢুদ্ধৰ্ষ তৈমুর যখন শুনিলেন যে ভারতীয় নৃপতিবর্গ পরস্পর পরস্পরের কণ্ঠ কাটিবার জন্ত উদ্‌গ্ৰীব-ভারতে একতার বন্ধন নাই, দেশের জন্ত স্বার্থ-বলি নাই, পরের জন্ত আত্মজয় নাই তখন বিধাতার বজ স্বরূপ তিনি সসৈন্তে সিন্ধু নদের তীরে আসিয়া উপনীত হক্টলেন । তাহার সে ছদমনীয় গতি কেহ রোধ করিতে পারিল না । তৈমুর যতই অগ্রসর হইতে লাগিলেন তাহার পশ্চ্যুতে কেবল রুধির-স্রোত বহিতে লাগিল—চিতাধুমে ভারতের নীলাকাশ সমাচ্ছন্ন হইয়া গেল ! কিন্তু তৈমুর অবশেষে ভারতবর্ষকে আপনার করতলগত রাখিতে পারেন নাই—-ভারতের ধনরত্ন পরিত্যাগপূৰ্ব্বক তাহাকে প্রস্থান করিতে হইয়াছিল। যে নাদির শাহের কথা মনে হইলে আজিও হৃৎকম্প উপস্থিত হয়, যাহার লুণ্ঠনে ও হত্যাকাণ্ডে ভারতবর্ষ ত্রাহি প্রায়শ্চিত্তে প্রতিশোধ । ত্রাহি করিয়াছিল, তিনিও আপন পাপের উপযুক্ত দওভোগ 8సిసి করিয়াছিলেন ; পারস্তের শুষ্ক ভূমি তাহার শোণিতে রঞ্জিত হইয়াছিল---গুপ্তহস্তার সুশাণিত কৃপাণ যেন ভারতবর্ষের পক্ষ হইতেই প্রতিশোধ গ্রহণ করিয়াছিল ! عصبجي আপন স্বার্থের জন্য নরহত্যা ও তাহার প্রণয়শ্চিত্তের উদাহরণ ইতিহাসে বিরল নহে। ইতিহাস ইহা অপেক্ষ আরও গুরুতর পাপকাহিনী বর্ণনা করিয়াছে । সেলিম যখন জাহাঙ্গীর নামে পরিচিত হইয়া ভারতসম্রাট আকবরের পবিত্র সিংহাসনে উপবেশন করিলেন তাহার অল্পকাল পরই সম্রাটপুত্র খস্র কুমন্ত্রণায় পরিচালিত হইয়া পিতৃসিংহাসনের দিকে কুটিল কটাক্ষপাত করিতে লাগিলেন । নিজের দলে লোক জুটাইবার জন্য তিনি অকম্পিত চিত্তে নরহত্য করিতেও কুষ্ঠিত হইলেন না।* মানুষ যখন প্রথমে ক্ষিপ্ত হয় তখন তাহার হিতাহিত বিবেচনা থাকে না, উন্মত্ততার অনল প্রশমিত হইলে সে তখন নয়ন মেলিয়া চাহিয়া দেখে। খস্রও দেখিলেন। তিনি একান্ত বিষন্ন চিত্তে দেখিলেন— “সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় ! হায় ! কেহ করে নয়।” সুসময়ের বন্ধুগণ তখন অনেকেই গতক্রকে পরিত্যাগ করিয়াছিল। অবশেষে পিতৃদ্রোহী খস্র সুবর্ণ শৃঙ্খলে আবদ্ধ হইয়া কয়েকজন বন্দী অনুচরসহ পিতার সমক্ষে আনীত হইলেন। থস্ক্রর করুণ নিবেদন উপেক্ষা করিয়া জাহাঙ্গীর সেই সকল বিদ্রোহীদিগকে একে একে নিতান্ত নিগৃহীত করিয়া বধ করিতে লাগিলেন। খঙ্কর চক্ষের সম্মুখে সেই সকল নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিতে লাগিল ! তাহার প্রায়শ্চিত্ত আরম্ভ হইল। তিনি কারামধ্যে বসিয়া অশ্রুবিসর্জন করিতে লাগিলেন। অনুচরদিগের দুর্দশা দেখিবার জন্ত বাদশাহের আদেশে তাহাকে প্রতিদিন কারার বাহিরে রাজধানীর রাজপথে আসিতে হইত। তিনি রোদন করিতে করিতে রাজপথ বহিয়া চলিতেন আর পথিপাশ্বস্থ শতাধিক সুতীক্ষ

  • Those who refused, were, without mercy, put to the sword. after being plundered of all their effects.Dow's Hindustan.