পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ه ه به শূলোপরি র্তাহার জীবন-মরণেরবন্ধগণ প্রাণ বিসর্জন করিত। নিরূপায় শৃঙ্খলাবদ্ধ খস্র বাষ্পাকুললোচনে দেখিতেন যে র্তাহাকে প্রাণপণে ভালবাসিয়াই তাহার বন্ধুবৰ্গ, কেহ বা শুলে, কেহ কৃপাণাঘাতে, কেহ বা সঙ্ক আনীত গোচৰ্ম্ম মধ্যে আবদ্ধ হইয়া রৌদ্রতপ্ত রাজপথে মৃত্যুমুখে পতিত হইতেছে! পিতা যদি বিদ্রোহী পুত্রকে এরূপ দণ্ড না দিয়া বধ করিতেন তাহা হইলেও হয়ত খস্র অনেক পরিমাণে শান্তি লাভ করিতেন । কিছুকাল পর জাহাঙ্গীর শুনিলেন যে বিদ্রোহিগণ তাহাকে হত্যা করিবার পরামর্শ করিতেছে । লোকে সেই কুমন্ত্রণার সহিত থস্ক্রর নামও সংযুক্ত করিয়া দিল। খঙ্ক প্রতিদিন পিতার চক্ষে তীক্ষ্ণ শলাসদৃশ হইতে লাগিলেন। জাহাঙ্গীরের দেহ তখন শের আফগানের তরলশোণিতে রঞ্জিত-- শের আফগানের অতৃপ্ত আত্মা তখন জাহাঙ্গীরকে ঘিরিয়া প্রতিশোধ লইবার জন্য ফিরিতেছে । এদিকে আবার খস্ক্রর পিতৃদ্রোহের সম্যক্ প্রায়শ্চিত্তকালও সমাগত হইল । জাহাঙ্গীর প্রতিদিন পুত্রের জন্য নিদারুণ মনঃকষ্ট পাটতে লাগিলেন । এমন সময় এক দিন সংবাদ আসিল যে খঙ্ক নিহত হইয়াছেন । পিতৃদোষ্ঠীর প্রায়শ্চিত্ত হইল বটে . কিন্তু বৃদ্ধ জাহাঙ্গীরের তখন আরও অনেক সহ করিবার ছিল ! তিনি সম্রাট হইয়া আশিতের পত্নী লাভেচ্ছায় পতিকে নিহত করাষ্টয়াছিলেন, সুতরাং এক পুত্ৰশোকরূপ বজ্র জাহাঙ্গীরের জন্য যথেষ্ট হয় নাই । খস্রর মৃত্যু-সংবাদে জাহাঙ্গীর একান্ত মৰ্ম্মাহত হইয়াছিলেন । তিনি কবর হক্টতে পুত্রের মৃতদেহ তুলিয়া পরীক্ষা করিলেন ; শেষে যখন অনুসন্ধান করিয়া জানিলেন যে শাজেহানই ভ্রাতৃহস্তা, তখন জাহাঙ্গীরের জীর্ণঙ্গদয়ে যে কি বিষম আঘাত লাগিয়াছিল তাহ সহজেই অনুমেয়। জাহাঙ্গীর শাজেহানকে অত্যন্ত স্নেহ করিতেন। সেই স্নেহধিক্যই তাহার মৰ্ম্মযাতনা আরও বাড়াইয়া তুলিয়াছিল। পরস্ত্রীকামীর দণ্ড মহাগ্রন্থ রামায়ণ আমাদিগকে দেখাইয় দিয়াছে, ভারতবর্ষের ইতিহাসও পুনরায় দেখাইতেছে। জাহাঙ্গীর শোকে মুহামান কিন্তু চর আসিয়া সংবাদ দিল -প্রাণাধিক প্রিয় শাজেহান তাহারই শির লক্ষ্য করিয়া খড়গ তুলিয়াছেন । পাপিনী মেহের-উন-নিসা—জাহাঙ্গীরের নয়নের প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ। মণি নুর মহাল নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্ত সেই বিদ্রোহানয়ে, ইন্ধন যোগাইতে লাগিলেন। জাহাঙ্গীর মন্ত্ৰমুগ্ধ ছিলেন, তিনি নুর মহালের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করিতে পারিলেন না। শেষে পিতাপুত্রে ঘোরতর মনোমালিন্ত ও সমর উপস্থিত হইল । জাহাঙ্গীরের অদৃষ্টে আরও ছিল। এক দিন সংবাদ আসিল যে প্রিয়তম পুত্র পাবেজ যুদ্ধে নিহত হইয়াছেন ! তার পর এমন দিনও আসিয়াছিল যখন মোগল বাদশাহ আপন পটাবাসে আপনিই বন্দী হইয়াছিলেন । মেহের-উন-নিসার কি হইল ? ইতিহাস সে কাহিনীও কহিতেছে। যে বালিকা একদিন বালুময় মরুভূমে প্রস্ফুটিত স্থলকমলবৎ শোভা পাইয়াছিল, যাহাকে জীবন-সঙ্গিনী করিয়া হতভাগ্য শের আফগান জাহাঙ্গীরের কোপানলে দগ্ধ হইষাছিল—সেই মেহের-উন-নিসা যখন রাজধানীতে আনীত হইলেন তখন জাহাঙ্গীরের রূপতৃষা যেন মিটিয়া গিয়াছিল। তিনি মেহেরের সহিত সাক্ষাতই করিলেন না ! মেহেরের হৃদয়ে তখন দিল্লীশ্বরী হইবার বাসনা ভীমবেগে জলিতেছিল। মেহের-উন-নিসার বাসের জন্য বেগম মহলের একটা অতি নিকৃষ্ট কক্ষ নিদিষ্ট হইল—বাদশাহের আদেশে সুন্দরী মেহের দৈনিক চৌদ্দ অনা করিয়া মুশাহারা পাইতে লাগিলেন ! স্বয়ং দিল্লীশ্বর এক দিন যাহার প্রেমাৰাজক্ষা করিয়াছিলেন তাহার দৈনিক মুশাহারা চৌদ্দ আনা ! মায়াবিনী তখন কৌশলজাল বিস্তার করিতে লাগিল । জাহাঙ্গীরের জননী পুত্রকে অনেক অনুরোধ করিলেন, কিন্তু সম্রাট তত্ৰাচ মেহেরের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন না। কি ঘৃণা ! কি লজ্জা ! পদদলিত নাগিনীর দ্যায় মেহের জ্বলিতে লাগিলেন । মেহের-উন-নিসা তখন শিল্পকলার সাহায্যে জীবনপাত করিতে লাগিলেন । র্তাহার কারুকার্য্যের প্রশংসায় সমগ্র দিল্লি ও আগ্রা পূর্ণ হইয়া উঠিল। চারি বৎসরে তাহার প্রভূত আর্থিক স্বচ্ছলতা ঘটিল। তাহার দাস দাসীগণ সুন্দর পরিচ্ছদসমূহ পরিধান করিয়া পুরীমধ্যে বিচরণ করিত, কিন্তু তিনি নিজে সামান্ত রমণীর ভূষণে সজ্জিত থাকিতেন। কাল ক্রমে র্তাহার গুণপণার কথা জাহাঙ্গীরের কর্ণগোচর হইল। তিনি কৌতুহলী হইয়া মেহের-উন-নিসাকে দর্শন দিতে গেলেন। দর্শন মাত্রেই জাহাঙ্গীরের চারি বৎসরের