পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । ] কুসংস্কারের জন্ত কারে কাছে কোনো দিন লজ্জা বোধ করে না । 纖 • বিনয়। বিনয়ও ঠিক তদ্রুপ। তবে কি না সে নিজের সংস্কার নিয়ে তেড়ে অন্তকে আক্রমণ করতে যায় না । দেখিতে দেখিতে দুই বন্ধুতে তুমুল তর্ক বাধিয়া উঠিল। পাড়াহুদ্ধ লোক বুঝিতে পারিল আজ গোরার সঙ্গে বিনয়ের সাক্ষাৎ ঘটিয়াছে। গোরা কহিল—“তুমি যে পরেশ বাবুর বাড়িতে যাতায়াত করচ সে কথা সেদিন আমার কাছে অস্বীকার করার কি দরকার ছিল ?” বিনয় । কোনো দরকার বশত অস্বীকার করিনি— যাতায়াত করিনে বলেই অস্বীকার করেছিলুম। এতদিন পরে কাল প্রথম তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছি। গোরা। আমার সন্দেহ হচ্চে অভিমন্ত্রার মত তুমি প্রবেশ করবার রাস্তাই জান—বেরবার রাস্ত জান না । বিনয় । তা হতে পারে-ঐটে হয় ত আমার জন্মগত প্রকৃতি । আমি যাকে শ্রদ্ধা করি বা ভালবাসি তাকে আমি ত্যাগ করতে পারিনে। আমার এই স্বভাবের পরিচয় তুমিও পেয়েছ। গোরা। এখন থেকে তাহলে ওখানে যাতায়াত চলতে থাকৃবে। বিনয়। একলা আমারি যে চলতে থাকবে এমন কি কথা আছে! তোমারও ত চলৎশক্তি আছে তুমি ত স্থাবর পদার্থ নও ! গোরা। আমি ত যাই এবং আসি কিন্তু তোমার যে লক্ষণ দেখলুম তুমি যে একেবারে যাবারই দাখিল । গরম চা কি রকম লাগল ? বিনয়। কিছু কড়া লেগেছিল। গোরা। তবে ? 彰 বিনয়। না খাওয়াটা তার চেয়ে বেশি কড়া লাগত ! গোরা। সমাজ পালনটা তাহলে কি কেবলমাত্র ভদ্রতা পালন ? বিনয়। সব সময়ে নয়। কিন্তু দেখ গোরা সমাজের সঙ্গে যেখানে হৃদয়ের সংঘাত বাধে সেখানে আমার পক্ষে— গোর অধীর হইয়া উঠিয়া বিনয়কে কথাটা শেষ গোরা । ○ >> করিতেই দিল না। সে গৰ্জ্জিয় কছিল-"হৃদয়! সমাজকে তুমি ছোট করে তুচ্ছ করে দেখ বলেই কথায় কথায় তোমার হৃদয়ের সংঘাত বাধে। কিন্তু সমাজকে আঘাত করলে তার বেদন যে কতদূর পর্যন্ত গিয়ে পৌছয় তা যদি অনুভব করতে তাহলে তোমার ঐ হৃদয়টার কথা তুলতে তোমার লজ্জা বোধ হত। পরেশ বাবুর মেয়েদের মনে একটুখানি আঘাত দিতে তোমার ভারি কষ্ট লাগে—কিন্তু আমার কষ্ট লাগে এতটুকুর জন্তে সমস্ত দেশকে যখন অনায়াসে আঘাত করতে পার ।” বিনয় কহিল—“তবে সত্য কথা বলি ভাই গোরা। এক পেয়ালা চা খেলে সমস্ত দেশকে যদি আঘাত করা হয় তবে সে আঘাতে দেশের উপকার হবে। তার থেকে বাচিয়ে চললে দেশটাকে অত্যন্ত দুৰ্ব্বল, বাবু করে তোলা হবে।” গোর। ওগে, মশায়, ও সমস্ত যুক্তি আমি জানি-- আমি যে একেবারে অবুঝ তা মনে কোরো না। কিন্তু ও সমস্ত এখনকার কথা নয়। রুগী ছেলে যখন ওষুধ থেতে চায় না মা তখন মুস্থ শরীরেও নিজে ওষুধ খেয়ে তাকে জানাতে চায় যে তোমার সঙ্গে আমার একদশা—এটা ত যুক্তির কথা নয়, এটা ভালবাসার কথা। এই ভালবাসা না থাকলে যতই যুক্তি থাক না ছেলের সঙ্গে মায়ের যোগ নষ্ট হয়। তা হলে কাজও নষ্ট হয়। আমিও চায়ের পেয়ালা নিয়ে তর্ক করি না—কিন্তু দেশের সঙ্গে বিচ্ছেদ আমি সহ করতে পারি না—চ না খাওয়া তার চেয়ে ঢের সহজ— পরেশবাবুর মেয়ের মনে কষ্ট দেওয়া তার চেয়ে ঢের ছোট। সমস্ত দেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে মেলাই আমাদের এখনকার অবস্থায় সকলের চেয়ে প্রধান কাজ- যখন মিলন হয়ে যাবে তখন চা খাবে কি না থাবে কথায় সে তর্কের মীমাংসা হয়ে যাবে। বিনয় । তা হলে আমার দ্বিতীয় পেয়ালা চা খাবার অনেক বিলম্ব আছে দেখচি। গোরা। না, বেশি বিলম্ব করবার দরকার নেই। কিন্তু, বিনয়, আমাকে আর কেন ? হিন্দুসমাজের অনেক অপ্রিয় জিনিষের সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও ছাড়বার সময় এসেছে। নইলে পরেশবাবুর মেয়েদের মনে আঘাত লাগবে। " এমন সময় অবিনাশ ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। সে