পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t)ఫి প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ। গোরার শিষ্য। গোরার মুখহইতে সে যাহা শোনে তাহাই সে কাছে নিজেকে নত করিতে কোনো দিন সঙ্কোচ বোধ করে, নিজের বুদ্ধির দ্বারা ছোট এবং নিজের ভাষার দ্বারা বিকৃত করিয়া চারিদিকে বলিয়া বেড়ায় । গোরার কথা যাহারা কিছুই বুঝিতে পারে না, অবিনাশের কথা তাহার বেশ বোঝে ও প্রশংসাও করে। বিনয়ের প্রতি অবিনাশের অত্যন্ত একটা ঈর্ষার ভাব আছে । তাই সে জো পাইলেই বিনয়ের সঙ্গে নিৰ্ব্বোধের মত তর্ক করিতে চেষ্টা করে। বিনয় তাহার মুঢ়তায় অত্যন্ত অধীর হইয়া উঠে--তখন গোরা অবিনাশের তর্ক নিজে তুলিয়া লইয়া বিনয়ের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়। অবিনাশ মনে করে তাহারই যুক্তি যেন গোরার মুখ দিয়া বাহির হইতেছে। অবিনাশ আসিয়া পড়াতে গোরার সঙ্গে মিলন ব্যাপারে বিনয় বাধা পাইল। সে তখন উঠিয়া উপরে গেল। আনন্দময়ী তাহার ভাড়ার ঘরের সম্মুখের বারান্দায় বসিয়া তরকারী কুটিতেছিলেন । আনন্দময়ী কহিলেন—“অনেকক্ষণ থেকে তোমাদের গলা শুনতে পাচ্চি। এত সকালে যে ? জল খাবার থেয়ে বেরিয়েছ ত ?” অন্ত দিন হইলে বিনয় বলিত, না খাই নাই—এবং আনন্দময়ীর সম্মুখে বসিয়া তাহার আহার জমিয়া উঠিত। কিন্তু আজ বলিল—“ন, মা, খাব না—থেয়েই বেরিয়েছি।” আজ বিনয় গোরার কাছে অপরাধ বাড়াইতে ইচ্ছ করিল না। পরেশবাবুর সঙ্গে তাহার সংস্রবের জন্য গোর যে এখনো তাহাকে ক্ষমা করে নাই—তাহাকে একটু যেন দূরে ঠেলিয়। রাখিতেছে ইহা অনুভব করিয়া তাহার মনের ভিতরে ভিতরে একটা ক্লেশ হইতেছিল। সে পকেট হইতে ছুরি বাহির করিয়া আলুর খোসা ছাড়াইতে বসিয়া গেল। মিনিট পনেরো পরে নীচে গিয়া দেখিল গোরা অবিনাশকে লইয়া বাহির হইয়া গেছে। গোরার ঘরে বিনয় অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। তাহার পরে খবরের কাগজ হাতে লইয়া শূন্তমনে বিজ্ঞাপন দেখিতে লাগিল। তাহার পর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বাহির হইয়া চলিয়া গেল । 38 মধ্যাহ্নে আহারের পর গোরার কাছে যাইবার জন্ত বিনয়ের মন আবার চঞ্চল হইয়া উঠিল। বিনয় গোরার নাই। কিন্তু নিজের অভিমান না থাকিলেও বন্ধুত্বের অভিমানকে ঠেকানো শক্ত। পরেশ বাবুর কাছে ধরা দিয়া বিনয় গোরার প্রতি তাহার এতদিনকার নিষ্ঠায় একটু যেন খাটো হইয়াছে বলিয়া অপরাধ অনুভব করিতেছিল বটে কিন্তু সেজন্ত গোরা তাহাকে পরিহাস ও ভৎসনা করিবে এই পৰ্য্যন্তই সে আশা করিয়াছিল, তাহাকে যে এমন করিয়া ঠেলিয়া রাখিবার চেষ্টা করিবে তাহা সে মনেও করে নাই। বাসা হইতে খানিকটা দূর বাহির হইয়া বিনয় আবার ফিরিয়া আসিল ;–বন্ধুত্ব পাছে অপমানিত হয় এই ভয়ে সে গোরার বাড়িতে যাইতে পারিল না । মধ্যাহ্নে আহারের পর গোরাকে একখানা চিঠি লিখিবে বলিয়া কাগজ কলম লইয়া বিনয় বসিয়াছে ; বসিয়া অকারণে কলমটাকে ভেঁাতা অপবাদ দিয়া একটা ছুরি লইয়া অতিশয় যত্নে একটু একটু করিয়া তাহার সংস্কার করিতে লাগিয়াছে এমন সময় নীচে হইতে “বিনয়” বলিয়া ডাক আসিল । বিনয় কলম ফেলিয়া তাড়াতাড়ি নীচে গিয়া বলিল-- “মহিম দাদা, আমুন উপরে আমুন।” মহিম উপরের ঘরে আসিয়া বনয়ের খাটের উপর বেশ চৌকা হইয়া বসিলেন এবং ঘরের আসবাবপত্র বেশ ভাল করিয়া নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন-—“দেখ বিনয়, তোমার বাসা যে আমি চিনিনে তা নয়—মাঝে মাঝে তোমার খবর নিয়ে যাই এমন ইচ্ছাও করে কিন্তু আমি জানি তোমরা আজকালকার ভাল ছেলে, তোমাদের এখানে তামাকটি পাবার জো নেই তাই বিশেষ প্রয়োজন না হলে--” বিনয়কে ব্যস্ত হইয়া উঠিতে দেখিয়া মহিম কহিলেন— “তুমি ভাবচ এখনি বাজার থেকে নতুন হকে কিনে এনে আমাকে তামাক খাওয়াবে, সে চেষ্টা কোরো না। তামাক না দিলে ক্ষমা করতে পারব কিন্তু নতুন ইকোয় আনাড়ি হাতের সাজা তামাক আমার সহ হবে না।” এই বলিয়া মহিম বিছানা হইতে একটা হাতপাখা তুলিয়া লইয়া হাওয়া খাইতে খাইতে কহিলেন—“আজ রবিবারের দিবানিদ্রাট সম্পূর্ণ মাটি করে তোমার এখানে এসেছি তার একটু কারণ আছে। আমার একটি উপকার তোমাকে করতেই হবে।” * -