পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । ] . আশ্চর্য! স্বচরিতার ঘরে প্রবেশকে,স্বচরিতার বর্তমানতাকে বিনয় সহজ ঘটনার মত কোন মতেই দেখিতে পারে না। প্রথমেই তাহার মনের মধ্যে এমন একটা বিস্ময়ের ধাক্কা লাগে যে সে হতবুদ্ধির মত হইয়া যায়। তাহার মূৰ্ত্তি, তাহার বেশভূষা, তাহার চালচলন, তাহার কথাবার্তা তাহার আবির্ভাবটি বিনয়ের কাছে যেন একটি সুসম্পূর্ণ সঙ্গীতের মত ঠেকে—পরিপূর্ণতার এমন প্রকাশ সে কোথাও আর কখনো দেখে নাই। মুখের দিকে না চাহিলেও তাহার মুকুমার হাতের উপর যদি চোখ পড়ে, তাহার পরিপাটি আঁচলের একটি পাড়ের ভঙ্গীও যদি তাহার দৃষ্টিতে ঠেকে তবে মুহূর্তের মধ্যে বিনয়ের সমস্ত মস্তিষ্ক যেন রন্ধে রন্ধে সৌন্দর্য্যে ভরিয়া যায়। অথচ এই মাধুর্য্যের আবেশকে সে অন্যায় বলিয়া জ্ঞান করে, এই জন্য তাহার নিজের মধ্যে নিজের দ্বন্দু বাধিয়া যায়--তাক্ট স্বচরিতার সঙ্গে সাক্ষাতের আরম্ভেই কথাবার্তায় যোগ দেওয়া তাহার পক্ষে কঠিন হইয় উঠে। এই বাধাটাকে ঠেলিতে না পারিয়া তাহার ভারি একটা কষ্ট হইতে থাকে। বিনয়ের এই প্রকার জড়ীভূত অবস্থায় স্বচরিতা মনে মনে একটু না হাসিয়া থাকিতে পারিল না। সে কিন্তু করুণা এবং আনন্দমিশ্রিত হাস্য। ভক্তির প্রাবল্যে ভক্তের জড়িমা উপস্থিত হইলে দেবতা এমনি করিয়া হাসেন, এই রুদ্ধবাক জড়িমাই যে পূজা। দ্বারের কাছে ললিতাকে দেখিয়া সুচরিতা তাড়াতাড়ি উঠিয়া তাহার গলা ধরিয়া তাহাকে কানে কানে কি বলিল । ললিতা ঘরে আসিয়া সুচরিতার আড়ালে বসিয়া তাহার কাপড়ের পাড় লইয়া নাড়িতে লাগিল । সুচরিতা বিনয়ের সঙ্কোচ ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য গোরার কথা তুলিল। হাসিয়া কহিল, “তিনি বোধ হয় আমাদের এখানে আর কখনো আসবেন না ?” 彰 বিনয় জিজ্ঞাসা করিল,—“কেন ?” স্নচরিত কহিল—“আমরা পুরুষদের সাম্নে বেরই দেখে তিনি নিশ্চয় অবাকু হয়ে গেছেন। ঘরকরনার মধ্যে ছাড়া মেয়েদের আর কোথাও দেখলে তিনি বোধ হয় তাদের শ্রদ্ধা করতে পারেন না।” निम्न छेशब ७ख्न हिङ किङ्ग श्रृष्णि बिcश्रण। গোরা । o Q)Q কথাটার প্রতিবাদ করিতে পারলেই সে খুসি হইত কিন্তু মিথ্যা বলিবে কি করিয়া ? বিনয় কহিল—“গোরার মত এই যে, ঘরের কাজেই মেয়েরা সম্পূর্ণ মন না দিলে তাদের কর্তব্যের একাগ্রতা নষ্ট হয়।” সুচরিত কহিল—“তাহলে মেয়েপুরুষে মিলে ঘরবাহিরকে একেবারে ভাগ করে নিলেই ত ভাল হত। পুরুষকে ঘরে ঢুকতে দেওয়া হয় বলে তাদের বাইরের কর্তব্য হয় ত ভাল করে সম্পন্ন হয় না। আপনিও আপনার বন্ধুর মতে মত দেন না কি ?” নারীনীতি সম্বন্ধে এ পর্য্যন্ত ত বিনয় গোরার মতেই মত দিয়া আসিয়াছিল । ইহা লইয়া সে কাগজে লেখালেখিও করিয়াছে। কিন্তু সেইটেই যে বিনয়ের মত এখন তাহ তাহার মুখ দিয়া বাহির হইতে চাহিল না। সে কহিল— “দেখুন, আসলে এ সকল বিষয়ে আমরা অভ্যাসের দাস। . সেই জন্যেই মেয়েদের বাইরে বেরতে দেখলে মনে খটুকী লাগে—অন্যায় বা অকর্তব্য বলে যে খারাপ লাগে সেটা কেবল আমরা জোর করে প্রমাণ করতে চেষ্টা করি । যুক্তিটা এস্থলে উপলক্ষ্য মাত্র সংস্কারটাই আসল।” সুচরিতা কহিল—“আপনার বন্ধুর মনে বোধ হয় সংস্কার গুলো খুব দৃঢ়।” বিনয়। বাইরে থেকে দেখে হঠাৎ তাই মনে হয়। কিন্তু একটা কথা আপনি মনে রাখবেন আমাদের দেশের সংস্কারগুলিকে তিনি যে চেপে ধরে থাকেন তার কারণ এ নয় যে সেই সংস্কারগুলিকেই তিনি শ্রেয় মনে করেন। আমরা দেশের প্রতি অন্ধ অশ্রদ্ধাবশত দেশের সমস্ত প্রথাকে অবজ্ঞা করতে বসেছিলুম বলেই তিনি এই প্রলয় কার্য্যে বাধা দিতে দাড়িয়েছেন । তিনি বলেন আগে আমাদের দেশকে শ্রদ্ধার দ্বারা প্রতির দ্বারা সমগ্র ভাবে পেতে হবে জানতে হবে, তার পরে আপনিই ভিতর থেকে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের নিয়মে সংশোধনের কাজ চলবে ।” সুচরিত কহিল—“আপনিই যদি হ’ত তা হলে এতদিন হয়নি কেন ?” বিনয়। হয় নি তার কারণ, ইতিপূৰ্ব্বে দেশ বলে আমাদের সমস্ত দেশকে, জাতি বলে আমাদের সমস্ত জাতিকে . এক করে দেখতে পারিনি। তখন যদি বা আমাদের স্বজা