পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫২৮ পরিত্যাগ,—ব্রহ্মচৰ্য্যার প্রধান অঙ্গমধ্যে গণ্য। বিধবা উক্তরূপ ব্রহ্মচৰ্য্যব্রত পালন করিতে করিতে দেহমনের পবিত্রতা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইলে, সকল জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ যে আত্মজ্ঞান,--তাহা লাভ করিয়া চরমে মোক্ষ বা নিৰ্ব্বাণ মুক্তি প্রাপ্ত হইতে পরিবেন, ইহাই শাস্ত্রকারের উদ্দেশু। গীতায় ভগবান বলিয়াছেন, আত্মজ্ঞান ব্যতীত মুক্তি লাভ হয় না। যদি আত্মজ্ঞান ব্যতীত মুক্তি লাভের—সংসার কারাগার হইতে উদ্ধারের-—অন্য উপায় না থাকে, তবে মনুষ্য মাত্রেরই কর্তব্য, সেই আত্মজ্ঞান লাভের চেষ্টা করা । সমগ্র হিন্দুশাস্ত্র নানাবিধ রূপক ও উপাখ্যানের মধ্য হইতে সেই এক ব্ৰহ্ম বা আত্মজ্ঞানের কথাই প্রচার করিয়াছেন। আমরা শাস্ত্রার্থ ঠিক বুঝিতে পারি না বলিয়াই নানামুনির নানামত ভাবিয়া ভ্রান্ত হইয়াছি। যে আত্মজ্ঞান যোগীঋষি গণের সদা প্রার্থনীয়, হিন্দু শাস্ত্রকারগণ বিধবাদিগের জন্ত সেই আত্মতত্ত্ব লাভের প্রকৃষ্ট পন্থা নিৰ্দ্ধারণ করিয়া দিয়া হিন্দুসমাজের অশেষ মঙ্গল সাধন করিয়াছেন ; বিধবাগণকে সংসারের জালাময় দুঃখ অশান্তি হইতে মুক্ত করিয়া অবিনশ্বর আনন্দ ও নিৰ্ম্মল সুখকর বস্তু করতলগত করিবার উপায় বলিয়া দিয়াছেন। কিন্তু এখন আমাদের এমনই অধঃপতন হইয়াছে,—এমনই অবোধ আমরা যে র্তাহাদিগের সেই মঙ্গল উদ্দেশু না বুঝিয়া, হিন্দু বিধবাগণের প্রতি, শাস্ত্রকারদিগের কঠোর ব্যবস্থা প্রণয়ন হেতু, নিত্য র্তাহাদিগকে অভিসম্পাত করিয়া থাকি। হায়রে ! সংসারের ক্ষণিক সুখের মোহজাল আমাদিগকে মরীচিকার মত ভুলাইতেছে,আপাত মনোরম যে ভোগমুখের আকাঙ্ক্ষা পরিতৃপ্ত হয় না বলিয়া শাস্ত্রীয় ব্যবস্থাকে কঠোরতম মনে করি, পরিণামে সেই মুখ ষে গরলে পরিণত হইয়া বিষের জালায় দগ্ধ করে, তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। আর একাদশীর ব্যবস্থা,-ইহাও হিন্দু বিধবাগণের জন্য বিধিবদ্ধ হইয়াছে। এই একাদশী লইয়া আজকাল হিন্দু সমাজে খুব আন্দোলন আলোচনা হইতেছে। এই নিষ্ঠুর কঠোরতম ব্যবস্থা এখন হিন্দুগণ আর মানিতে চাহেন না। কারণ সমাজে এখন দিন দিন বালবিধবার সংখ্যা বৃদ্ধি হইতেছে। পানভোজনতৃপ্ত পিতামাতার সম্মুখে যে কুসুমকোমলা বালিকাগণ একাদশীপীড়িত স্কুৎপিপাসাকাতরা প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । - নৃশংস কাও ও শোচনীয় দৃশু। কে এই একাদশীর স্বষ্টি করিয়াছে ? ইহা কি শাস্ত্রসঙ্গত ? কেহ যদি একথা জিজ্ঞাসা করেন, উত্তরে ইহাই বলিতে পারি, হিন্দুর রীতি, নীতি, আচার ব্যবহার প্রভৃতি যদি শাস্ত্রসঙ্গত উৎকৃষ্ট নিয়ম বলিয়া আমরা মানিয়া থাকি, তবে এই একাদশীও সেই শাস্ত্রানুমোদিত বলিয়া মনে করা উচিত। কিন্তু বেদান্ত উপনিষদাদি গীত৷ ভাগবত প্রভৃতি হিন্দুর মুখ্য ধৰ্ম্মশাস্ত্রে কোথাও এই একাদশী ব্ৰতাদির উল্লেখ নাই । ইহা পুরাণ সমূহের অন্তর্গত, মহাভারতেও এই একাদশী ব্রতের কথা দেখিতে পাই, কিন্তু তাহা স্ত্রী, পুরুষ, সধবা, বিধবা প্রভৃতি সকলের জন্তই বিহিত । আর বৈষ্ণবদিগের ক্রিয়াযোগসারে হরিবাসর নামক যে ব্রতের উল্লেখ আছে তাহা এই একাদশীরই নামান্তর বলিয়া বোধ হয়। বোধ করি সেই একাদশার ব্ৰতই বিধবাগণের জন্ত অবশ্যকরণীয় একাদশী রূপে নিয়মিত হইয়াছে। কারণ ইন্দ্রিয় ও মনের সংযম অভ্যাস করাই বিধবার কৰ্ত্তব্য, একাদশী—বা পক্ষান্তরে একদিন উপবাস সেই ইন্দ্রিয়সংযমের অনেক সহায়তা করে। উপবাস করা কাহাকে বলে ? শাস্ত্র বলিয়াছেন,– । উপাযুক্তস্ত পাপেভ্যে যন্ত ঘাসোগুণৈঃ সহ । উপবাসঃ স বিজ্ঞেয়: সৰ্ব্বভোগ বিবর্জিডঃ ॥ সমুদয় পাপবৃত্তি হইতে উপরত হইয়া সৰ্ব্বভোগবিবর্জিতরূপে সাত্ত্বিক গুণে অবস্থান করার নাম উপবাস। তদ্ধানং তজপঃ স্নানং তৎকথা শ্রবণাদিকং। উপবাস কুতো হোতে গুণ প্রোক্ত মনীষিভিঃ। যাহার জন্য উপবাস সেই দেবের ধ্যান, সেই দেবতার যশ, দেবকথা শ্রবণাদি উপবাসকৃতের গুণ বলিয়া মনীষিগণ ব্যক্ত করিয়াছেন । অতএব ইহা দ্বারা সিদ্ধ হইতেছে যে একাদশীর ব্রতামুষ্ঠান করিতে হইলে, একাদশ ইন্দ্রিয়, অর্থাৎ পঞ্চ কৰ্ম্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং মন,—এই একাদশ ইন্দ্রিয়কে শাস্ত্রামুসারে সর্বভোগবিবর্জিত ও নিগৃহীত করিলেই প্রকৃত একাদশী ব্ৰত অনুষ্ঠিত হয়। বিধবাগণ উক্ত নিয়মে একাদশী ব্রত পালনপূর্বক ব্ৰতপতি স্বামী দেবতার ধ্যান জপ ও স্মরণ করিবেন। ইহাই শাস্ত্রকারগণের আদেশ। . কিন্তু অসমর্থ পক্ষে একাদশীর 'দিন জলপান করিলে