পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯ম সংখ্যা । ] বোধ করি কোনও শাস্ত্রে লিখিত নাই। উল্লিখিত একাদশীর বিধান কালমাহাত্মো লোকাচারে পরিণত হইয়া এমন কঠোরতম হইয়া উঠিয়াছে। যখন একাদশীর প্রথা প্রথম প্রবর্তিত হয়, তখন বোধ করি হিন্দুসমাজে বালবিধবার অস্তিত্ব ছিল না। তাছা হইলে করুণমৃদয় শাস্ত্রকারগণ,-— আজীবন তপস্তারত থাকিয় শুধু মানবগণের মঙ্গলের নিমিত্ত র্যাহারা শাস্ত্রবিধি প্রণয়ন করিয়াছেন, সমাজের সর্বশ্রেণীর নরনারীর ইহপরকালের কল্যাণসাধন করাষ্ট র্যাহাদিগের মুখ্য উদ্দেশু, সেই পরম কৃপালু মহাত্মাগণ যদি জানিতেন, র্তাহীদের প্রণীত একাদশী ব্রতের শুভ উদ্দেশু, বুঝিবার ভ্রমে ইদানীং বঙ্গবিধবাগণের পক্ষে ঘোরতর অশুভজনক হইয়া উঠিবে,—কোমলপ্রাণী বালিকাগণের জীবনসংহারক হইবে বলিলেও অত্যুক্তি হয় না, এমন কি, একাদশীর দিন আসন্ন মৃত্যু মুমুমু বিধবার শুষ্ককণ্ঠে জলদান করাও লোকে নিষিদ্ধ পাপ বলিয়া মনে করিবে,—সেই মঙ্গলময় প্রথা বুঝিবার দোষে হিন্দুসমাজে এমন নিষ্ঠুরতা প্রবর্তিত হইবে, তবে বোধ করি তাহারা কখনও এ বিধান বিধিবদ্ধ করিতেন ন। তাহারা যাহা করিয়াছেন, সমস্তই মানবের শুভফলদায়ক, কিন্তু বর্তমান হিন্দুসমাজে যে একাদশীর প্রথা প্রচলিত রহিয়াছে তাহ ঘোর নৃশংসতার কার্য্য। উহা কখনই শাস্ত্রানুমোদিত নহে, একথা নিঃসঙ্কোচে বলা যায়। যে সংযতেন্দ্রিয়া শুদ্ধপ্রাণী বিধবা প্রকৃত ব্ৰহ্মচারিণী রূপে নিঃস্বার্থভাবে, নিষ্কাম কার্য্যে জীবন অতিবাহিত করেন, র্তাহার পক্ষে একাদশী করা না করা সমান, কারণ যে জন্ত একাদশীর নিয়ম, তাহা তাহার পূর্ণ হইয়াছে। আর যে জ্ঞানহীন বালিকা একাদশীর মাহাত্ম্য না বুঝিয়, শুদ্ধ লোকাচারের জন্ত একাদশীর নিয়ম পালন করে, তাহার পক্ষেও একাদশী করা না করা সমান। কারণ একাদশীর ফল না জানায় সে তজ্জনিত কোন উপকার প্রাপ্ত হয় না, পরন্তু উপবাসজনিত শারীরিক ও মানসিক গ্লানি উপস্থিত হইয় তাহাকে অধিকতর পীড়া ও অশাস্তি প্রদান করে। কারণ শাস্ত্রেই মাছে— অশ্রুপ্রপাতে। রোষশ্চ কলহস্ত কৃতিঃ সতি। উপবাসা ব্ৰতাৰাপি সন্তে ভ্রংশয়তি স্ক্রিয়ম্ ॥ কলহ, রোষ, অশ্রত্যাগ প্রভৃতি স্ত্রীলোকদিগের উপবাস বা তোহাগিকে মহাপাতকগ্রস্ত হইতে হইবে, এ বাবা ৫২৯ ব্ৰতকে সন্ত ভ্ৰষ্ট করে। আমার এসকল কথা পাঠক ভগিনীগণের বিরক্তি উৎপাদন করিবে কি নী,জানি না,কিন্তু অনুষ্ঠানের ফলে আমার জ্ঞান ও শিক্ষা যাহা প্রাপ্ত হইয়াছে, আজ আমি অসঙ্কোচে আমার ভগিনীদিগের নিকট তাহ ব্যক্ত করিলাম। বিধবার ব্রহ্মচৰ্যার আর একটা গৌণ কারণ,--শাস্ত্রে উল্লিখিত আছে, বিধবা মৃত পতির স্মরণার্থে দীন হীন ব্রহ্মচারিণীর বেশে কাল হরণ করিবেন। পতিই যে স্ত্রীর প্রত্যক্ষ দেবতা, তাহ হিন্দুরমণী মাত্রেই অবগত আছেন বোধ হয়। পতিব্ৰতা সতী রমণী কিরূপ ভাবে । সংসারযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করিবেন, কিরূপে পতির মনোরঞ্জন করিবেন, প্রভৃতির সদুপায় হিন্দুশাস্ত্রে ভূৱি ভূরি উপদেশ দেওয়া আছে। সতী রমণীর উন্নত আদর্শ, অসামান্ত পতিপ্রেম, সংসারনিৰ্ব্বাহের সুপ্রণালীর জলন্ত উদাহরণ, সমগ্র হিন্দুশাস্ত্রের অক্ষরে অক্ষরে উদ্ভাসিত। শিক্ষিতা ভগিনী মাত্রেই তাহা জানেন, সুতরাং এস্থলে তাহার পুনরুক্তি নিম্প্রয়োজন। পতি রমণীর দেবতা, পতিই রমণীর সমস্ত সুখের কারণ। সুতরাং পতিব্ৰতা পতির মৃত্যুর পর যাবতীয় ভোগ স্থখ পরিত্যাগ করিয়া মৃত পতির চিন্তায় ব্রহ্মচৰ্য্যাবলম্বন করিবেন, ইহাই শাস্ত্রকারগণের আদেশ । বস্তুতঃ ভাবিয়া দেখিলে এমন মধুর এমন পবিত্র নিয়ম আর কোনও ধৰ্ম্মশাস্ত্রে নাই। সংসারে পতিসেবা করিয়া যাহারা রমণীজন্ম সফল করিতেছেন, তাহারা সৌভাগ্যবতী, সন্দেহ নাই। কিন্তু ভাগ্যহীন বিধবা একমাত্র ব্রহ্মচৰ্য্য ও পতিচিস্ত হইতে যে পরম শাস্তি ও অতুলনীয় স্থখলাভের অধিকারিণী হন, তাহ সৌভাগ্যবতীগণেরও অনমুভূত। হিন্দুশাস্ত্রকারগণ সংসারের অনেক উদ্ধে বিধবাদিগকে আসন প্রদান করিয়াছেন, ঠিক শাস্ত্রায়যায়ী কাৰ্য্য যদি বিধবাগণ করিতে পারেন, তবে তাহাদের মুখের তুলনা কোথায় ? সংসারের শত অশ্রদ্ধা অবহেলা আর্থিক মানসিক কোন কষ্টই তাহাদিগকে আর বিচলিত করিতে পারে না । ব্ৰহ্মচৰ্য্য কিরূপে পালন করা যায়, তাহা একরূপ বুঝা গিয়াছে। কিন্তু পতিচিন্তা করিবে কিরূপে ? মৃত পতির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট যে মূৰ্ত্তি, তাহাই কি চিন্তা করিতে হইবে ? কিন্তু তাহাতে সুখের পরিবর্তে মোহ ও শোকের একত্র সম