পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্য। | ] ~ সুনিশ্চিত স্বগোচর, তার আনন্দ তার বেদন যে প্রচণ্ড প্রবল, যবন্তার স্রোতের মত জীবন মৃত্যুকে এক মুহূর্তে লঙ্ঘন করে যায় তা আজ তোমার কথা শুনে মনে মনে অল্প অল্প অনুভব করতে পারচি -তোমার জীবনের এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনকে আজ আঘাত করেছে— তুমি যা পেয়েছ তা আমি কোনো দিন বুঝতে পারব কিনা জানি না—কিন্তু আমি যা পেতে চাই তার আস্বাদ যেন তোমার ভিতর দিয়েই আমি অনুভব করচি।” বলিতে বলিতে গোরা মাদুর ছাড়িয়া উঠিয়া ছাতে বেড়াইতে লাগিল । পুৰ্ব্বদিকের উধার আভাস তাহার কাছে যেন একটা বাক্যের মত বাৰ্ত্তার মত প্রকাশ পাইল, যেন প্রাচীন তপোবনের একটা বেদমন্ত্রের মত উচ্চারিত চষ্টয়া উঠিল, তাহার সমস্ত শরীরে র্কাট দিল-মুহূর্তের জন্য সে স্তস্থিত হইয়া দাড়াইল, এবং ক্ষণকালের জন্ত তাহার মনে হইল তাহার ব্রহ্মরন্ধ, ভেদ করিয়া একটি জ্যোতিলেখা স্বহ্ম মৃণালের দ্যায় উঠিয়া একটি জ্যোতিৰ্ম্ময় শতদলে সমস্ত আকাশে পরিব্যাপ্ত হইয়া বিকশিত হইল--তাহার সমস্ত প্রাণ সমস্ত চেতনা সমস্ত শক্তি যেন ইহাতে একেবারে পরম আনন্দে নিঃশেষিত হইয় গেল। থুেরা যখন আপনাতে আপনি ফিরিয়া আসিল তখন সে হঠাৎ বলিয়া উঠিল—“বিনয়, তোমার এ প্রেমকেও পার হয়ে আসতে হবে--আমি বলচি ওখানে থাম্লে চলবে না। আমাকে যে মহাশক্তি আহবান করচেন, তিনি যে কত বড় সত্য একদিন তোমাকে আমি তা দেখাব ৷ আমার মনের মধ্যে আজ ভারি আনন্দ হচ্চে তোমাকে আজ আমি আর কারে হাতে ছেড়ে দিতে পারব না।” বিনয় মাদুর ছাড়িয়া উঠিয়া গোরার কাছে আসিয়া দাড়াইল। গোরা তাহাকে একটা অপূৰ্ব্ব উৎসাহে দুই হাত দিয়া বুকে চাপিয়া ধরিল-কহিল—“ভাই বিনয়, আমরা মরব, এক মরণে মরব —আমরা দুজনে এক, আমাদের কেউ বিচ্ছিন্ন করবে না কেউ বাধা দিতে পারবে না।” গোরার এই গভীর উৎসাহের বেগ বিনয়েরও হৃদয়ের মধ্যে তরঙ্গিত হইয়া উঠিল ;–সে কোনো কথা না বলিয়া গোরার এই আকর্ষণে আপনাকে ছাড়িয়া দিল । গোরা বিনয় , দুইজনে নীরবে পাশাপাশি বেড়াইতে গোরা । ASAeASASAeeS AA SAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS p' ৫৪৩

  • ه- یعه همه ی هه حامی = 3,۰۰۰_**

লাগিল। পূৰ্ব্বাকাশ রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল। গোরা কহিল— “ভাই, আমার দেবীকে আমি যেখানে দেখতে পাচ্চি সে ত সৌন্দর্য্যের মাঝখানে নয়—সেখানে দুর্ভিক্ষ দারিদ্র্য, সেখানে কষ্ট আর অপমান। সেখানে গান গেয়ে ফুল দিয়ে পুজো নয়, সেখানে প্রাণ দিয়ে রক্ত দিয়ে পুজো কুরতে হবেআমার কাছে সেইটেই সব চেয়ে বড় আনন্দ মনে হচ্চে— সেখানে মুখ দিয়ে ভোলাবার কিছু নেই—সেখানে নিজের জোরে সম্পূর্ণ জাগতে হবে সম্পূর্ণ দিতে হবে— মাধুর্য্য নয়, এ একটা দুৰ্জ্জয় দুঃসহ আবির্ভাব—এ নিষ্ঠুর, এ ভয়ঙ্কর-এর মধ্যে সেই কঠিন ঝঙ্কার আছে যাতে করে সপ্তমুর এক সঙ্গে বেজে উঠে তার ছিড়ে পড়ে যায়। মনে করলে আমার বুকের মধ্যে উল্লাস জেগে উঠে- আমার মনে হয় এই আনন্দই পুরুষের আনন্দ—এই হচ্চে জীবনের তাণ্ডব নৃত্য--পুরাতনের প্ৰলয়যজ্ঞের আগুনের শিখার উপরে নুতনের অপরূপ মুক্তি দেখবার জন্তই পুরুষের সাধনা। রক্তবর্ণ আকাশক্ষেত্রে একট, বন্ধনমুক্ত জ্যোতিৰ্ম্ময় ভবিষ্যৎকে দেতে পাচ্চি—আজকেকার এই আসন্ন প্রভাতের মধ্যেই দেখতে পাচ্চি—দেখ আমার বুকের ভিতরে কে ডমরু বাজাচে।”– বলিয়া বিনয়ের হাত লইয়া গোর নিজের বুকের উপরে চাপিয়া ধরিল। বিনয় কহিল—“ভাই গোরা, আমি তোমার সঙ্গেই যাব। কিন্তু আমি তোমাকে বলচি আমাকে কোনো দিন তুমি দ্বিধা করতে দিয়ে না। একেবারে ভাগ্যের মত নিৰ্দ্দয় হয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যেয়ে । আমাদের দুই জনের এক পথ-–কিন্তু আমাদের শক্তিত সমান নয়।” গোরা কহিল--“আমাদের প্রকৃতির মধ্যে ভেদ আছে, কিন্তু একটা মহৎ আনন্দে আমাদের ভিন্ন প্রকৃতিকে এক করে দেবে—তোমাতে আমাতে যে ভালবাসা আছে তার চেয়ে বড় প্রেমে আমাদের এক করে দেবে। সেই প্রেম যতক্ষণে সত্য না হবে ততক্ষণে আমাদের দুজনের মধ্যে পদে পদে অনেক আঘাত সংঘাত বিরোধ বিচ্ছেদ ঘটতে থাকৃবে— তার পরে একদিন আমরা সমস্ত ভুলে গিয়ে আমাদের পার্থক্যকে, আমাদের বন্ধুত্বকেও ভুলে গিয়ে একটা প্রকাও একটা প্রচণ্ড আত্মপরিহারের মধ্যে অটল বলে মিলে গিয়ে দাড়াতে পারব—সেই কঠিন আনন্দই আমাদের বন্ধুত্বের শেষ পরিণাম হবে।”